শনিবার, ১৮ জানুয়ারি ২০২৫ ।। ৪ মাঘ ১৪৩১ ।। ১৮ রজব ১৪৪৬


সিলেটের প্রবীণ শায়খুল হাদিস আল্লামা মুকাদ্দাস আলীর ইন্তেকাল

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

সুদীর্ঘ ৭০ বছর ধরে বুখারী শরীফের দরস দানের বিরল কৃতিত্বের অধিকারী, উপমহাদেশের প্রখ্যাত শায়খুল হাদীস আল্লামা মুকাদ্দাস আলী ইন্তেকাল করেছেন।

ইন্নালিল্লাহি ওয়াইন্না ইলাইহি রাজিউন।

জানা যায়, আজ বুধবার (৮ ডিসেম্বর) সকাল ৮ টার সময় জকিগঞ্জ উপজেলার বারগাত্তা গ্রামের নিজ বাড়িতে তিনি ইন্তেকাল করেন।

তিনি দীর্ঘদিন থেকে বার্ধক্যজনিত বিভিন্ন শারীরিক জটিলতায় ভুগছিলেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল প্রায় ৯২ বছর। আজ বিকাল ৪ টা ৩০ মিনিটের সময় জকিগঞ্জ উপজেলার সোনাসার বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন মাঠে তার নামাজে জানাযা অনুষ্ঠিত হবে।

নিজের এলাকার মানুষের কাছে ‘মাটিয়া ফেরেশতা’ নামে মশহুর ছিলেন শায়খুল হাদীস মুকাদ্দাস আলী। একদিকে যেমন ইলমে হাদিসের ওপর অগাধ পাণ্ডিত্য, অন্যদিকে নিভৃতচারিতা ও বুজুর্গিতে অতুলনীয় ছিলেন সিলেটের জকিগঞ্জ এলাকার ধর্মপ্রাণ জনগোষ্ঠীর কাছে। টানা ৭০ বছর ধরে দেশের সীমান্ত অঞ্চল সিলেটের জকিগঞ্জে নিভৃতে বসে হাদিস শরিফের দরস প্রদান করে গেছেন। বাংলাদেশে একাধারে এত দীর্ঘকাল হাদীসের দরস প্রদানের সৌভাগ্য আর কোনো শায়খুল হাদিসের হয়নি বলে অভিমত বিজ্ঞজনদের। কেউ কেউ বলছেন পুরো উপমহাদেশেও দ্বিতীয় কোনো মনীষী নেই এমন, যিনি এত দীর্ঘকালব্যাপী বুখারির দরস প্রদান করেছেন।

১৩৭৭ হিজরিতে ভারতের দারুল উলুম দেওবন্দে পড়াশোনা শেষ করেন তিনি। পরের বছর ১৩৭৮ হিজরিতে মাওলানা মুকাদ্দাস আলী নিজের এলাকা সিলেটের জকিগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী জামেয়া ফয়েজেআম মুনশীবাজার মাদরাসায় দরসে বুখারির উস্তাদ হিসেবে নিয়োগ পান। তারপর থেকে এখানেই তিনি একাধারে ৭০ বছর যাবত বুখারি শরিফের দরস দিয়ে আসছেন। মাঝখানে একবার দু’বছরের জন্য সিলেটের আঙ্গুরা-মুহাম্মদপুর মাদরাসায় শায়খুল হাদিস হিসেবে ছিলেন, তারপর আবার ফিরে আসেন মুনশিবাজার মাদরাসায়।

সিলেটের জকিগঞ্জ উপজেলার ‘বারগাত্তা’ গ্রামে ১৩৪০ বঙ্গাব্দের ২০ চৈত্র (হিজরি সন আনুমানিক ১৩৫২, ইংরেজি ১৯৩৩) তারিখে তার জন্ম। ছেলেবেলা বাবাকে হারান। মায়ের অন্যত্র বিয়ে হয়ে গেলে প্রথমে ফুফুর কাছে, তারপর নানার কাছে লালিত-পালিত হন। মা-বাবাহীন শৈশব-কৈশোরের নানা প্রতিকূলতা ডিঙিয়ে মাওলানা মুকাদ্দাস আলী জালালাইন পর্যন্ত পড়াশোনা করেন সিলেট অঞ্চলের কয়েকটি মাদরাসায়। সিলেটে তখন শায়খুল ইসলাম হুসাইন আহমদ মাদানি রহ. এর তুমুল জনপ্রিয়তা। মাদানি সাহেবের বেশ কয়েকজন খলিফার সাহচর্য ও শিষ্যত্ব লাভ করার সৌভাগ্যও অর্জন করেছিলেন তিনি জালালাইন পর্যন্ত পড়তে পড়তে।

জালালাইন শেষ করে ১৩৭৪ হিজরিতে পাড়ি জমান ভারতের দারুল উলুম দেওবন্দে। দেওবন্দে তিন বছর ‘ফুনুনাত’ পড়ে ১৩৭৭ হিজরিতে ভর্তি হন দাওরায়ে হাদিসে। বুখারি শরিফের দরস ও সনদ গ্রহণ করেন হজরত ফখরুদ্দিন মুরাদাবাদী রহ.-এর কাছ থেকে। কারী তৈয়্যব (রহ.) তখন মুআত্তান পড়ান। তার কাছ থেকে মুআত্তানের সনদ লাভ করেন।

মাওলানা মুকাদ্দাস আলী যে বছর দাওরা পড়েন, তার মাত্র বছর দুয়েক আগে শাইখুল ইসলাম হুসাইন আহমদ মাদানীর ইন্তেকাল হয়। তাই বুখারি শরিফের দরস মাদানী সাহেবের কাছ থেকে আর নেওয়া হয়নি তার। তবে দেওবন্দে দাওরা পরীক্ষার পর মাজাহেরুল উলুম সাহারানপুর গমন করে কিছুদিন শায়খুল হাদিস জাকারিয়া রহমতুল্লাহ আলাইহির সাহচর্য নেন এবং তার কাছ থেকে বুখারি শরিফের লিখিত ইজাজত লাভ করেন।

কিংবদন্তীতুল্য একজন শায়খুল হাদিস হবার পাশাপাশি মাওলানা মুকাদ্দাস আলী উঁচুমাপের একজন বুজুর্গ ব্যক্তিত্ব ছিলেন। শায়খুল ইসলাম হুসাইন আহমদ মাদানি রহ. এর অন্যতম খলিফা কায়েদে উলামা হজরত আবদুল করীম শায়খে কৌড়িয়া রহমতুল্লাহ আলাইহির অন্যতম খলিফা ছিলেন তিনি। প্রতিবছর রমজানের শেষ দশকে বিভিন্ন অঞ্চল থেকে লোকজন জকিগঞ্জ ছুটে আসতো তার সাহচর্যে থেকে এতেকাফ করার জন্য। আধ্যাত্মিক তরিকায় বেশ কয়েকজন ব্যক্তিত্বকে তিনি খেলাফত দান করেছেন।

কেএল/


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ