বিশ্বের ৪৫০ প্রভাবশালী ইহুদি ব্যক্তিত্ব জাতিসংঘ ও বৈশ্বিক নেতাদের প্রতি গাজায় ‘অমানবিক ও বিবেকবর্জিত’ কর্মকাণ্ডের জন্য ইসরাইলের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে আহ্বান জানিয়েছেন। তাদের দাবি, ইসরাইল সেখানে গণহত্যা চালাচ্ছে।
একটি উন্মুক্ত চিঠিতে তারা আহ্বান জানিয়েছেন গাজা, পশ্চিম তীর ও পূর্ব জেরুজালেমে আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে ইসরাইলকে জবাবদিহির আওতায় আনতে। এই চিঠিতে ৪৫০ জনেরও বেশি বিশিষ্ট ব্যক্তি স্বাক্ষর করেছেন, যাদের মধ্যে রয়েছেন সাবেক ইসরাইলি কর্মকর্তা, বুদ্ধিজীবী, লেখক ও শিল্পীরা। এই উদ্যোগটি এমন সময় এলো, যখন ইউরোপীয় ইউনিয়নের নেতারা বৃহস্পতিবার ব্রাসেলসে অনুষ্ঠিতব্য শীর্ষ সম্মেলনে ইসরাইলের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপের পরিকল্পনা থেকে সরে আসতে পারেন বলে খবর প্রকাশ পেয়েছে।
চিঠিতে বলা হয়েছে, আমরা ভুলে যাইনি যে মানবজীবনের সুরক্ষা ও মর্যাদা রক্ষায় প্রণীত আইন, সনদ ও কনভেনশনগুলোর বেশিরভাগই তৈরি হয়েছিল হলোকাস্টের ভয়াবহতার পরিপ্রেক্ষিতে। কিন্তু সেই সুরক্ষাগুলো ইসরাইল নিরন্তর লঙ্ঘন করে আসছে।
চিঠির স্বাক্ষরকারীদের মধ্যে রয়েছেন—ইসরাইলের সাবেক নেসেট স্পিকার আভরাহাম বার্গ, শান্তি আলোচক ড্যানিয়েল লেভি, লেখক মাইকেল রোজেন ও নাওমি ক্লেইন, অস্কারজয়ী চলচ্চিত্র নির্মাতা জনাথন গ্লেজার, অভিনেতা ওয়ালেস শন ও ইলানা গ্লেজার, এবং দার্শনিক ওমরি বোহেম। তারা বিশ্বনেতাদের আহ্বান জানিয়েছেন, আন্তর্জাতিক বিচার আদালত (আইসিজে) ও আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) রায় বাস্তবায়ন করতে, অস্ত্র বিক্রি বন্ধ করতে এবং যুদ্ধাপরাধে জড়িত ইসরাইলি কর্মকর্তা ও প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর লক্ষ্যভিত্তিক নিষেধাজ্ঞা দিতে।
এই পিটিশনটি এসেছে এমন এক সময়ে, যখন মার্কিন ইহুদিদের মধ্যেও ইসরাইলবিরোধী মনোভাব বেড়েছে। ওয়াশিংটন পোস্ট-এর সাম্প্রতিক এক জরিপে দেখা গেছে, ৬১ শতাংশ মার্কিন ইহুদি মনে করেন ইসরাইল গাজায় যুদ্ধাপরাধ করেছে, আর ৩৯ শতাংশ মনে করেন এটি গণহত্যা চালাচ্ছে। কুইনিপিয়াক ইউনিভার্সিটি-এর আরেক জরিপে বলা হয়েছে, অর্ধেক মার্কিন ভোটারও একই মত পোষণ করেন।
২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে গাজায় ইসরাইলের হামলার ব্যাপকতা বিশ্বজুড়ে তীব্র নিন্দা কুড়িয়েছে এবং ফিলিস্তিনিদের প্রতি সহমর্মিতার ঢেউ সৃষ্টি করেছে।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, গত দুই বছরে সেখানে অন্তত ৬৮ হাজার ফিলিস্তিনি নিহত এবং ১ লাখ ৭০ হাজারের বেশি আহত হয়েছেন। জাতিসংঘ জানিয়েছে, গাজার প্রায় ৯০ শতাংশ বাসিন্দা অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত হয়েছেন।
এলএইস/