||ফিয়াদ নওশাদ ইয়ামিন||
দেশের তরুণরা যখন ভবিষ্যৎ অর্থনীতির দিকনির্দেশ খুঁজছে, তখন ঢাকার বসুন্ধরা আন্তর্জাতিক কনভেনশন সেন্টারের এক সেমিনারে শুরু হলো এক নতুন আলাপ বাংলাদেশের নৌপথ, বন্দর ও সমুদ্র সম্ভাবনা নিয়ে। কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরা সেখানে তুলে ধরেছে ভবিষ্যৎ নৌপরিবহন ব্যবস্থার এমন সব ধারণা, যা হয়তো পাল্টে দিতে পারে সমগ্র বাণিজ্যচিত্র।
আজ বৃহস্পতিবার (৩০ অক্টোবর ২০২৫) ঢাকার আন্তর্জাতিক কনভেনশন সিটি বসুন্ধরায় শুরু হয়েছে ‘অভ্যন্তরীণ নৌপথ ও সমুদ্র বন্দর রপ্তানি সম্ভাবনা বিষয়ক সেমিনার বাংলাদেশ ২০২৫’ উপলক্ষে প্রদর্শনী ও মেলা। সেখানে বিশেষভাবে অংশ নিয়েছে কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের শিপিং অ্যান্ড ম্যারিটাইম সায়েন্স বিভাগ।
মেলায় বিভাগের নিজস্ব স্টলে শিক্ষার্থীরা প্রদর্শন করেছেন সমুদ্র ও বন্দর ব্যবস্থাপনায় ব্যবহৃত নানা যন্ত্রপাতি, নেভিগেশন সরঞ্জাম, জাহাজ পরিচালনা প্রযুক্তি এবং পরিবেশবান্ধব নৌযান সংক্রান্ত উপকরণ। দর্শনার্থীদের কাছে তারা তুলে ধরেছেন কিভাবে এসব প্রযুক্তি ব্যবহার করে আধুনিক সামুদ্রিক ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলা যায় এবং নৌপরিবহনকে আরও নিরাপদ ও টেকসই করা সম্ভব।
বিশ্ব অর্থনীতির প্রাণশক্তি আজ নিঃসন্দেহে সামুদ্রিক শিল্প। এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে খাদ্য, জ্বালানি, চিকিৎসা সামগ্রী কিংবা কাঁচামাল পৌঁছে দেওয়ার নীরব দায়িত্ব বহন করছে সমুদ্রপথ। সেই বাস্তবতাকে সামনে রেখে কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের এই প্রদর্শনী মূলত সাধারণ মানুষের মধ্যে সামুদ্রিক খাতের গুরুত্ব তুলে ধরা এবং নৌনিরাপত্তা ও পরিবেশ রক্ষার বার্তা পৌঁছে দেওয়ার উদ্দেশ্যে আয়োজন করা হয়।
আন্তর্জাতিক মানে পরিচালিত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিপিং অ্যান্ড ম্যারিটাইম সায়েন্স বিভাগে শিক্ষার্থীরা শুধু তাত্ত্বিক জ্ঞান নয়, বরং বাস্তব অভিজ্ঞতার মাধ্যমে দক্ষ হয়ে উঠছে। বিভাগে রয়েছে নটিক্যাল বিজ্ঞান, সামুদ্রিক প্রকৌশল, পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি ও টেকসই নৌপরিবহন বিষয়ে বিশেষায়ন। আধুনিক ল্যাবরেটরি, গবেষণাগার ও মাঠপর্যায়ের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে তারা হয়ে উঠছে দেশের সামুদ্রিক খাতের ভবিষ্যৎ কর্ণধার।
পুরো আয়োজনের নেতৃত্ব দেন বিভাগের প্রধান ক্যাপ্টেন মোহাম্মদ নাসির উদ্দিন। তিনি জানান, মেলায় অংশ নেওয়ার মূল উদ্দেশ্য ছিল তরুণ প্রজন্মকে সামুদ্রিক খাতের প্রতি আগ্রহী করা এবং এই শিল্পের সম্ভাবনা সম্পর্কে জনসচেতনতা তৈরি করা।
বাংলাদেশের বর্তমান অর্থনৈতিক বাস্তবতায় অভ্যন্তরীণ নৌপথের উন্নয়ন ও সমুদ্রবন্দরের আধুনিকায়ন এখন সময়ের দাবি। বন্দরের অভ্যন্তরীণ পণ্য যাতে নদীপথেই সহজে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে পৌঁছানো যায়, সেই লক্ষ্যেই চলছে নানা প্রকল্প ও পরিকল্পনা। এতে যেমন অর্থনৈতিক সাশ্রয় হবে, তেমনি দেশের রপ্তানি কার্যক্রমও আরও গতিশীল হবে।
বসুন্ধরার এই মেলায় যেন স্পষ্ট এক ইঙ্গিত—বাংলাদেশ এখন সমুদ্র ও নদীপথের নবজাগরণে প্রবেশ করছে। তরুণদের আগ্রহ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর গবেষণা আর সরকারের অবকাঠামো উন্নয়ন সব মিলিয়ে প্রশ্ন জাগে, এই নবযাত্রা কি বাংলাদেশের নৌপরিবহনে নতুন অধ্যায়ের সূচনা হতে যাচ্ছে?
শিক্ষার্থী, কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটি অফ বাংলাদেশ।
এলএইস/