শুক্রবার, ২৪ অক্টোবর ২০২৫ ।। ৭ কার্তিক ১৪৩২ ।। ২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৭

শিরোনাম :
১৬ মাসে কোরআনের হাফেজ কক্সবাজারের ওবায়দুল করিম আমরা কোরআনকে জাতীয় সংসদে নিয়ে যেতে চাই: অধ্যাপক মুজিবুর রহমান ঢাকাসহ বিভাগীয় শহরে শনিবার বিক্ষোভ করবে জামায়াত  প্রশাসনকে দ্রুততার সাথে বস্তুনিষ্ঠ ব্যবস্থা নিতে হবে: ইসলামী আন্দোলন আন্তর্জাতিক খতমে নবুওয়ত মহাসম্মেলন সফল করার লক্ষ্যে মানিকগঞ্জ জেলায় মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত  যারা আমাকে অপহরণ করেছে তাদের বাংলাদেশি মনে হয়নি জীবন দিলেও যদি চরিত্র না বদলায় তাহলে ভাগ্যও বদলাবে না: শায়খে চরমোনাই শ্রীমঙ্গলে বেওয়ারিশ কুকুরের আতঙ্ক: এক ঘণ্টায় তিন শিশু আহত ‘দুঃখজনক হলো ইসলামি অঙ্গন থেকে শক্তিশালী মিডিয়া গড়ার উদ্যোক্তা আমরা পাইনি’ ২৪ এর লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য এখন পর্যন্ত পূরণ হয়নি: সারজিস

‘দুঃখজনক হলো ইসলামি অঙ্গন থেকে শক্তিশালী মিডিয়া গড়ার উদ্যোক্তা আমরা পাইনি’

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

দেশের শীর্ষ আলেম রাজনীতিবিদদের অন্যতম মাওলানা মামুনুল হক। এই সময়ে জাতীয় রাজনীতিতেও তিনি বেশ আলোচিত। বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির। হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব। শাইখুল হাদিস, সংগঠক, বক্তা, লেখক, সম্পাদক, গবেষকসহ আরও নানা পরিচয়ে তিনি পরিচিত। তাঁর কর্মের ময়দানও অনেক বিস্তৃত। সম্প্রতি তিনি আওয়ার ইসলামের মুখোমুখি হয়েছেন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন পোর্টালটির সম্পাদক: হুমায়ুন আইয়ুব। অনুলিখন করেছেন: লাজ্জাস আল-হাবীব। দুই পর্বের সাক্ষাৎকারের আজ শেষ পর্ব।  

আওয়ার ইসলাম: আপনি বাংলাদেশ ইসলামি লেখক ফোরামের প্রোগ্রামে বলেছিলেন, আপনি কারাগারে বেশ দীর্ঘ দিনলিপি লিখেছেন। সেটা কবে নাগাদ প্রকাশিত হতে পারে?

মাওলানা মামুনুল হক: সেটা আসলে অনেক বড় পাণ্ডুলিপি, সেখানে যেহেতু আমার প্রায় ১১০০ প্লাস দিন থাকা হয়েছে। তিন বছরের বেশি সময় এবং এর প্রতিটি দিনই আমি ডায়েরি রেখেছি। প্রতিদিন যদি এক পৃষ্ঠা করেও দেখা হয়, তাহলেও সেটা ১১০০ পৃষ্ঠার বেশি লেখা হয়েছে। এছাড়াও কোনো কোনো দিন অনেক লম্বা কথা লেখা হয়েছে, অনেক লম্বা গল্প মনে হয়েছে। কাজেই সেটা যদি সুন্দর করে লিপিবদ্ধরূপে পুস্তক আকারে আসে, আমার ধারণা সেটা ২০০০/২৫০০ পৃষ্ঠার একটা কাজ হবে। সেটার কিছু প্রাথমিক কাজ, কয়েক মাসের লেখা আমি অনুলিখন করেছি ইতোমধ্যে। তবে সেটার জন্য ধারাবাহিক প্রতিদিনের যে কাজটা, সেটা এখনো শুরু করতে পারিনি। কিন্তু ওটার কাজ যদি আমি ধারাবাহিকভাবে ভালো করতে পারি তাও কমপক্ষে ছয় মাস লাগবে কাজটা শেষ করতে। দোয়া চাই যাতে আগামী রমজানের আগেই গড়ে-মিলে যদি এই কাজটা সম্পন্ন করা যায়।

আওয়ার ইসলাম: লেখক মাওলানা মামুনুল হকের কাছে পাঠকের অনেক প্রত্যাশা, সেই প্রত্যাশা কতটা পূরণ হচ্ছে বা হবে?

মাওলানা মামুনুল হক: আমি নিজেকে লেখালেখির যতটুকু সম্পৃক্ততা আমার আছে, এই জায়গা থেকে আমার কাজের ওপর আমি মোটেই তৃপ্ত তো নই, সন্তুষ্টও নই। এ ব্যাপারে যথেষ্ট আগ্রহ ছিল। কিন্তু আসলে অন্যান্য ব্যস্ততার কারণে এই কাজটা হয়ে ওঠেনি। এই কাজে যেহেতু নিজেরই অতৃপ্ততা আছে, ভবিষ্যতে যদি আল্লাহ পাক সুযোগ দেন তাহলে কাজ করব ইনশাআল্লাহ।

আওয়ার ইসলাম: ওয়াজের মঞ্চ এবং রাজনৈতিক মঞ্চকে এক করে ফেলা, এটাকে আপনি কীভাবে দেখেন। এ ব্যাপারে আপনার নজরিয়া বা দৃষ্টিভঙ্গি কী?

মাওলানা মামুনুল হক: ওয়াজ এবং রাজনৈতিক মঞ্চের ব্যাপারে আমার স্পষ্ট বক্তব্য হলো, কোনোভাবেই রাজনৈতিক মঞ্চ এবং ওয়াজের মঞ্চকে একাকার করা উচিত নয়। অনেকেই আমার বক্তব্যের দ্বারা সঠিক নির্দেশনাটা নিতে পারে না, বিভ্রান্ত হয়। আসলে বাংলাদেশের মাহফিল যেগুলো হয় দুই ধরনের, কিছু আছে ওয়াজ মাহফিল শিরোনামে হয়, ওয়াজ মাহফিল ধরনের। আবার কিছু আছে যেগুলো ইসলামি সম্মেলনের আঙ্গিকে হয়। তো যেগুলো সম্মেলন প্রতিনিধিত্বশীল উলামাদের জায়গা, একটা কেন্দ্রীয় পর্যায়ের প্রোগ্রাম, সেই প্রোগ্রামগুলোতে মানুষ ওয়াজের থেকেও জাতীয় বিষয়ে কিছু কথা শোনার চাহিদা বা প্রয়োজনবোধ থাকে। তো সেই জায়গাগুলোতে আমরা যখন বক্তব্য রাখি, সাধারণত এই ধরনের মঞ্চে রাজনৈতিক যে বক্তব্যগুলো, আমাদের আলেম-উলামাদের প্রতিনিধির বক্তব্যগুলো যাদের সামনে যাওয়া উচিত, সেই বক্তব্যগুলো রাখার মতো মানুষ খুব বেশি না, হাতেগোনা কয়েকজন। তার মধ্যে আমি একটা বিশেষ ভূমিকা এখানে পালনের চেষ্টা করি। কাজেই সেই জায়গা থেকে আমাদেরকে কিছু রাজনৈতিক কথা বলতে হয়। কিন্তু সেই বলাতেও আমরা রাজনৈতিক মঞ্চ এবং ওয়াজের মঞ্চ একটা সুস্পষ্ট পার্থক্য বজায় রাখার চেষ্টা করি। ওয়াজে মঞ্চগুলোকে ঢালাওভাবে রাজনৈতিক মঞ্চে পরিণত করা আমি কোনোভাবেই উচিত মনে করি না।

আওয়ার ইসলাম: বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের অধীনে উলামাদের একটি উইং খোলার প্রক্রিয়া চলমান। হঠাৎ করে এটার প্রয়োজনীয়তা কেন অনুভব করলেন?

মাওলানা মামুনুল হক: এটা ঠিক বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের উইং না। বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস এবং শায়খুল হাদিসকেন্দ্রিক যারা কাজ করেছেন, রাজনৈতিক অরাজনৈতিক বিভিন্নভাবে, তাদের একটা সম্মিলিত ফোরাম বা সংগঠন হিসেবে একটা কাজ সামনে আসার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করা হয়েছে। অনেকে আছে তারা সরাসরি রাজনৈতিক দলে অন্তর্ভুক্ত হয়ে কাজ করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন না। তারাও জাতীয় কোনো ইস্যু নিয়ে বিভিন্নভাবে আলেম-উলামাদের সাথে কাজ করতে চান। সেই লোকদের একটা সুন্দর প্লাটফর্ম তৈরির জন্য জাতীয় উলামা কাউন্সিল গঠনের প্রক্রিয়া চলছে। সেটার প্রস্তুতি সম্পন্ন হওয়ার পথে।

আওয়ার ইসলাম: এর সাথে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের গঠনতান্ত্রিক সংশ্লিষ্টতা আছে কি?

মাওলানা মামুনুল হক: বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের সাথে এর গঠনতান্ত্রিক কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। এটি সংগঠনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কিছু না।

আওয়ার ইসলাম: আপনার পরিচালিত জামিয়াতে সাংবাদিকতার একটি বিভাগ এবং নিজস্ব মিডিয়া গড়ে তোলার আলাপ অনেক আগ থেকেই শুনছিলাম। এই নিয়ে একটু আলাপ শুনতে চাই।

মাওলানা মামুনুল হক: জামিয়াতুত তারবিয়াহ আল ইসলামিয়ার অধীনে বা এর একটা শাখা হিসেবে সাংবাদিকতা সাহিত্য এ জাতীয় বিষয়গুলোকে আমরা খুব জরুরি মনে করেছিলাম। ২০২১ সালে আমরা এই বিভাগটা খোলার প্রায় আয়োজন সম্পন্ন করেও ফেলেছিলাম। আল্লাহ পাক রাব্বুল আলামিন যদি তকদিরে এবং মাঝখানে যে ঝড় তুফান আমাদের ওপর দিয়ে বেয়ে গেল, এগুলো যদি না রাখত হয়তো বিভাগটি ২০২১ সাল থেকে পরিচালিত হতো। যাই হোক, এখনো আমাদের সেই স্বপ্ন আছে। হয়তো আমরা খুব দ্রুতই এ ব্যাপারে কার্যকর উদ্যোগ নেব। আমাদের তরুণ প্রজন্ম আলেমদের মধ্য থেকে, বিশেষ করে সাহিত্য সাংবাদিকতা এবং লেখালেখির মধ্যে আমাদের বিপুল পরিমাণ লেখক আলেম তৈরি হওয়া উচিত। সেই জায়গা থেকে করণীয় যেটা, মিডিয়ার ক্ষেত্রেও আমাদের যথেষ্ট লোকবল তৈরি হওয়ার প্রয়োজন। ইসলামি ঘরানার এমনকি জেনারেল মিডিয়াতেও যেন তারা কাজ করতে পারে, এ ধরনের দক্ষ মিডিয়াকর্মী সৃষ্টির লক্ষ্য নিয়ে ইনশাআল্লাহ আমরা অনতিবিলম্বে যত দ্রুত সম্ভব সে ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করব।

আওয়ার ইসলাম: ইসলামি ভাবধারার মিডিয়া গড়ার প্রয়োজনীয়তা কতটুকু অনুভব করেন। এক্ষেত্রে ৫ আগস্ট পরবর্তী সুযোগকে কতটুকু কাজে লাগাতে পেরেছেন?

মাওলানা মামুনুল হক: মিডিয়া গড়ার ক্ষেত্রে তো এটা অবশ্যই জরুরত এবং প্রয়োজনীয়তা তীব্রভাবে অনুভব করি। তবে দুঃখজনক বিষয় হলো, এখনো পর্যন্ত ইসলামি অঙ্গন থেকে শক্তিশালী মিডিয়া গড়ার উদ্যোক্তা আমরা পাইনি। এটা আমাদের জন্য খুবই দুঃখজনক একটি বিষয়। দক্ষ এবং প্রফেশনাল মিডিয়া পরিচালনার মতো যাদের ব্যাকগ্রাউন্ড আছে , তাদের হাতে মিডিয়ার অনুমোদন এবং টিভি চ্যানেল যেটাই বলেন, তাদের কাছেই এটা দেওয়া উচিত।

আওয়ার ইসলাম: শিক্ষক, লেখক, সম্পাদক এবং সংগঠন- কোন পরিচয়ে বেশি স্বাচ্ছন্দবোধ করেন?

মাওলানা মামুনুল হক: পরিচয় আসলে আমার একটাই। সেটা হলো যোগ্য লোক তৈরি করা। আমি যখন শিক্ষক, আমার ছাত্রদের মধ্যে একটা চেতনা তৈরির লক্ষ্য নিয়েই শিক্ষকতা করি। আমি আবার যখন লেখালেখি করি, এর মধ্যেও সেই বিষয়টাই প্রাধান্য পায়। যখন আমি সংগঠন করি, আমি একেবারেই গতানুগতিক রাজনীতি করি না বরং রাজনীতির চেয়েও বেশি সংগঠন করি। সংগঠন করার সময় আমার প্রধান লক্ষ্য এটাই থাকে যে, আমরা যেন দক্ষ জনবল, রাজনৈতিক কর্মী, রাজনৈতিক নেতৃত্ব সৃষ্টি করতে পারি। কাজেই আমার সবগুলো দায়িত্ব বা কাজ একটার সাথে আরেকটা খুব অন্তরঙ্গভাবে জড়িত। এবং তার মৌলিক কাজটি হলো আমি জনবল তৈরির কাজটাই প্রাধান্য দিই।

আওয়ার ইসলাম: সর্বশেষ প্রশ্ন। শাইখুল হাদিস আল্লামা আজিজুল হক রহ.-এর সন্তান তার চিন্তা, দর্শন এবং তার সংগঠন, মাদরাসা সবকিছুই করে যাচ্ছেন। হজরতের ওপর একটা স্মারকগ্রন্থের প্রত্যাশা মানুষের আছে। কবে নাগাদ প্রকাশিত হতে পারে এটি?

মাওলানা মামুনুল হক: এটা আমাদের অনেক বড় একটা দায়িত্ব। মধ্যখানে অনেক উত্থাল-পাতাল অথবা অনেক উত্থান-পতনে বিষয়টা বিলম্বিত হয়েছে। ইতিমধ্যে আমরা সেগুলোর কার্যকর উদ্যোগ নিয়েছি। সেই স্মারকগ্রন্থের অনেক কাজই বিক্ষিপ্তভাবে হয়ে আছে। সেগুলোকে গুছিয়ে সমৃদ্ধ আকারে বছরখানেকের মধ্যে আমরা আশা করি করতে পারবো এবং শায়খুল হাদিস রহ.-এর ওপর একটা সমৃদ্ধ স্মারক উপহার দিতে পারবো।

আওয়ার ইসলাম: অনেক অনেক ধন্যবাদ আপনার গুরুত্বপূর্ণ সময় আমাদেরকে দেওয়ার জন্য। আওয়ার ইসলাম পরিবারের পক্ষ থেকে আপনাকে আন্তরিক মোবারকবাদ এবং শুভেচ্ছা জানাচ্ছি।

মাওলানা মামুনুল হক: সম্পাদকসহ আওয়ার ইসলাম পরিবারের সবার জন্যও শুভেচ্ছা এবং শুভকামনা থাকল।

এলএইস/


সম্পর্কিত খবর

সর্বশেষ সংবাদ