বৃহস্পতিবার, ২৩ অক্টোবর ২০২৫ ।। ৭ কার্তিক ১৪৩২ ।। ১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৭

শিরোনাম :
এক লাফে ভরিতে ৮৩৮৬ টাকা কমল স্বর্ণের দাম জুলাই সনদ বাস্তবায়নে নভেম্বরে গণভোট চায় জামায়াতে ইসলামী ১৮তম জাতীয় তাফসিরুল কুরআন মাহফিল ২০ ও ২১ নভেম্বর ইসরায়েলের ওপর নিষেধাজ্ঞা চেয়ে বিশ্বের প্রভাবশালী ইহুদিদের চিঠি  গণভোট নিয়ে বিএনপির বিরুদ্ধে জটিলতা তৈরির অভিযোগ জামায়াতের ‘পাঁচ দফা বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন অব্যাহত থাকবে’ জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নে বিশেষজ্ঞদের সাথে ঐকমত্য কমিশনের সভা শিশু-কিশোরদের সুরক্ষা দিতে ছয় দফা সুপারিশ চিকিৎসকদের  ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত, কারাগারে অভিযুক্ত বুয়েট শিক্ষার্থী  ওআইসি সদস্য দেশগুলোকে একসঙ্গে কাজ করার আহ্বান উপদেষ্টা রিজওয়ানার

কুরবানির আসরে হারজিত কোথায়?

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

মুহাম্মদ মিজানুর রহমান

‘ভাই, দাম কত?’ কুরবানির সময়ে রাস্তা-ঘাটে, পাড়া মহল্লায় এই প্রশ্নটা প্রায়শই ঘুরপাক খায়! ক্রেতা পশুর দাম বললে শুরু হয় আজিব এক গবেষণা--এই দাম দিয়ে পশুটা কিনে সে ঠকেছে নাকি জিতেছে! কেউ দাম জিজ্ঞেস করে ‘জিতেছেন’ বললে ক্রেতার মুখটা আনন্দে উদ্ভাসিত হয়ে ওঠে। যদি বলে, ‘না, ভাই, ঠকেছেন’, তখন মুখটা আক্ষরিক অর্থেই চুপসে যায়! খারাপ হয় মনও। আসলে আজ দাম এবং পশুর মধ্যেই আমরা নির্ধারণ করে ফেলেছি কুরবানির হারজিতের মানদন্ড! 

তাই কুরবানির মৌসুম এলেই আমাদের আলোচনা ঘোরে দাম, ওজন আর বাহারি গরু নিয়ে। কে কত টাকায় গরু কিনেছে, কে কেমন জাতের গরু আনলো—এসব হিসাব যেন কুরবানির মূল উদ্দেশ্যকে পেছনে ঠেলে দেয়। কখনো দেখা যায়, কেউ কম দামে বড়সড় গরু কিনে জয়ী, আর কেউ বেশি দামে ছোট গরু কিনে উপহাসের পাত্র! কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে—আল্লাহর কাছে আসল ‘হারজিত’ কোথায়? কুরবানির মাহাত্মতো কম দাম-বেশি দামে কেনার মধ্যে নয়! সেই ব্যাপারটা যেন আমরা ভুলেই যাচ্ছি!

ইসলামের দৃষ্টিতে কুরবানি কী?

আল্লাহ তায়ালা বলেন—  "তাদের মাংস ও রক্ত আল্লাহর কাছে পৌঁছে না, বরং পৌঁছে তোমাদের তাকওয়া।" (সূরা হজ: ৩৭)

এই আয়াত থেকেই পরিষ্কার বুঝা যায়, আল্লাহর দরবারে কুরবানির দামে নয়, ওজনে নয়, বাহারেও নয়—মূল বিচার হয় নিয়তের। কে কতটা ইখলাসের সঙ্গে, আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য কুরবানি দিল, সেটাই সবচেয়ে বড় বিষয়।

সমাজে প্রচলিত ‘দাম বনাম মান’ ধারণা

আমাদের সমাজে কুরবানি যেন এক ধরনের প্রতিযোগিতায় পরিণত হয়েছে। কে বেশি বড় গরু আনবে, কে কত টাকা খরচ করবে, সেটাই মুখ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। অনেকে দাম দিয়ে সবচে বাহারি গরুটি এনে প্রদর্শনীও শুরু করে দেয়। তখন গর্বে তার মাটিতেও পা পড়ে না! অথচ রাসুল (সা.) বলতেন,  "আদম সন্তানের জন্য কুরবানির দিন যে আমলটি আল্লাহর কাছে সবচেয়ে প্রিয়, তা হলো কুরবানি।" (তিরমিযি)

হারজিতের প্রকৃত মানদণ্ড

যে ব্যক্তি সীমিত সাধ্যের মধ্যে অল্প টাকায় গরু কিনে কুরবানি করলো, কিন্তু করলো খাঁটি নিয়তে—সে সফল। আর কেউ যদি লাখ টাকার গরু নিয়েও লোক দেখানোর উদ্দেশ্যে কুরবানি করে, তবে তা আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য নয়। এখানেই আসল হারজিতের ফয়সালা।

কুরবানি আল্লাহর নির্দেশ পালন, আত্মত্যাগের প্রতীক এবং তাকওয়ার প্রমাণ। গরুর দাম বা বাহারি রঙ নয়, বরং অন্তরের ইখলাস ও শরিয়ত অনুযায়ী আমলই এখানে মুখ্য। আসুন, কুরবানির মূল দর্শনে ফিরে যাই, এবং হারজিতের মানদণ্ড ঠিক করি আল্লাহর সন্তুষ্টির ভিত্তিতে।

এমএইচ/


সম্পর্কিত খবর

সর্বশেষ সংবাদ