রাজধানীর উত্তরার বায়তুন নূর জামে মসজিদের জুমার খুতবায় দলের বিরুদ্ধে বক্তব্য দেওয়া হয়েছে-এমন অভিযোগ এনে সতর্ক করে একটি চিঠি দিয়েছিল জামায়াতে ইসলামী। তবে সেই চিঠি প্রত্যাখ্যান করে মুসল্লিদের সামনে ছিঁড়ে ফেলেন মসজিদটির খতিব এবং জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের কেন্দ্রীয় নেতা মাওলানা নাজমুল হাসান কাসেমী। এই সাহসী ভূমিকার জন্য তিনি উপস্থিত মুসল্লিদের মধ্যে ব্যাপক প্রশংসা কুড়ান। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও তার এই ভূমিকার ভূয়সী প্রশংসা করছেন অনেকেই।
শুক্রবার (১৭ অক্টোবর) জুমার খুতবার আগে মাওলানা নাজমুল হাসান কাসেমী সেই চিঠিটি পড়ে শোনান মুসল্লিদের। তিনি বলেন- ‘রোজা আর পূজা এক নয়। গত শুক্রবারেও বলেছি, আজ আবারো বলছি। আপনারা সংযত ও সংশোধন হোন, তাওবা পড়ুন।’
চিঠিটি তিনি মুসুল্লিদের সামনে উপস্থাপন করলে উপস্থিত মুসল্লি ও মসজিদ কমিটির সদস্যরা তা প্রত্যাখ্যান করেন।
খতিব মাওলানা নাজমুল হাসান কাসেমী তখন সবার সামনে চিঠিটি ছিঁড়ে ফেলেন এবং সেই মুহূর্তে মুসুল্লিরা একসঙ্গে ‘নারায়ে তাকবির—আল্লাহু আকবার’ বলে তাকবির দেন।
এর আগে উত্তরা পশ্চিম থানা বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর দপ্তর সম্পাদক জিএম আসলামের পক্ষ থেকে একটি চিঠি দেওয়া হয় মসজিদের সভাপতি/সেক্রেটারি বরাবর। চিঠিতে লেখা হয়-
মুহতারাম,
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমতুল্লাহ ওয়া বারাকাতুহু। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী এদেশের অন্যতম একটি বৃহত্তর রাজনৈতিক দল। বহু শহীদের রক্তে রঞ্জিত এই আন্দোলনের রয়েছে অনেক গৌরবময় ইতিহাস। দীর্ঘ এ পথ চলায় স্বৈরাচার, ফ্যাসিবাদ বিরোধী তথা জুলাই গণঅভ্যুত্থানে রয়েছে আমাদের ঐতিহাসিক ভূমিকা ।
আপনাদের পরিচালনাধীন ১২নং সেক্টরে অবস্থিত বায়তুন নূর জামে মসজিদ অত্র এলাকার একটি বড় ও গুরুত্বপূর্ণ মসজিদ। এখানে সেক্টরবাসীসহ আশে-পাশের অনেক ধর্মপ্রাণ মানুষ নামাজ পড়েন। আমরা মনে করি মসজিদের খতিব সাহেব মিম্বরের মত নিরপেক্ষ জায়গায় দাঁড়িয়ে সকল মতের পথের মানুষের জন্য হেদায়েতস্বরূপ কুরআন-হাদীসের আলোকে তাঁর নসীহা পেশ করবেন। কিন্তু গত ১০/১০/২০২৫ ইং জুমার খুতবায় বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নাম উল্লেখ করে যে বিভ্রান্তিমূলক ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বক্তব্য দিয়েছেন আমরা তার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। এ বক্তব্য মূলত উনার হীনমন্যতা ও রাজনৈতিক পক্ষপাতমূলক। যার ফলে সামাজিক অনৈক্য, বিভেদ, জনগণের মাঝে ক্ষোভ ও উত্তেজনার সৃষ্টি করছে। অনতিবিলম্বে উনার বক্তব্য প্রত্যাহার করতে হবে এবং ভবিষ্যতে এহেন বক্তব্য দেওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। অন্যথায় উদ্ভূত যেকোনো পরিস্থিতির দায়ভার খতিব এবং মসজিদ কমিটিকে নিতে হবে।
খতিব সাহেব একজন সম্মানিত নাগরিক হিসেবে যে কোন রাজনৈতিক দলের সমর্থন করা দোষনীয় নহে তবে তার বহিঃপ্রকাশ মসজিদের মিম্বরে হতে পারে না। মসজিদে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের মানুষ একত্রে সালাত আদায় করেন। তিনিও চাইলে রাজনীতি করতে পারেন এবং রাজনৈতিক ময়দানে সভা-সমাবেশে তাঁর বক্তব্য দিতে পারেন। জামায়াতে ইসলামীর গঠনমূলক সমালোচনা করুক আমরা স্বাগত জানাবো। কিন্তু মসজিদের মিম্বরে বসে রাজনৈতিক বক্তব্য অথবা কোন দলের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করা যাবে না।
মসজিদ কমিটির প্রতি আহবান, মসজিদে সকল মতের মুসুল্লীগণ যাতে জুম'আ আদায় করতে পারে সে ধরনের পরিবেশ নিশ্চিত করবেন এই প্রত্যাশা করছি। খতিব সাহেবের পক্ষপাতমূলক রাজনৈতিক বক্তব্যের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য উদাত্ত আহ্বান জানাচ্ছি।
এমএম/