বৃহস্পতিবার, ২৩ অক্টোবর ২০২৫ ।। ৬ কার্তিক ১৪৩২ ।। ১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৭

শিরোনাম :
এক লাফে ভরিতে ৮৩৮৬ টাকা কমল স্বর্ণের দাম জুলাই সনদ বাস্তবায়নে নভেম্বরে গণভোট চায় জামায়াতে ইসলামী ১৮তম জাতীয় তাফসিরুল কুরআন মাহফিল ২০ ও ২১ নভেম্বর ইসরায়েলের ওপর নিষেধাজ্ঞা চেয়ে বিশ্বের প্রভাবশালী ইহুদিদের চিঠি  গণভোট নিয়ে বিএনপির বিরুদ্ধে জটিলতা তৈরির অভিযোগ জামায়াতের ‘পাঁচ দফা বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন অব্যাহত থাকবে’ জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নে বিশেষজ্ঞদের সাথে ঐকমত্য কমিশনের সভা শিশু-কিশোরদের সুরক্ষা দিতে ছয় দফা সুপারিশ চিকিৎসকদের  ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত, কারাগারে অভিযুক্ত বুয়েট শিক্ষার্থী  ওআইসি সদস্য দেশগুলোকে একসঙ্গে কাজ করার আহ্বান উপদেষ্টা রিজওয়ানার

ইসরায়েলের ওপর নিষেধাজ্ঞা চেয়ে বিশ্বের প্রভাবশালী ইহুদিদের চিঠি 

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

ফিলিস্তিনের গাজা সিটিতে গণহত্যার মতো কর্মকাণ্ডের জন্য জাতিসংঘ এবং বিশ্বনেতাদের কাছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে থাকা প্রভাবশালী ইহুদি ব্যক্তিবর্গ ইসরায়েলের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের আহ্বান জানিয়েছেন।

গাজা, অধিকৃত পশ্চিম তীর এবং পূর্ব জেরুজালেমে ইসরায়েলের আচরণের জবাবদিহিতার দাবিতে একটি খোলা চিঠিতে সই করেছেন ইসরায়েলের প্রাক্তন কর্মকর্তা, অস্কার বিজয়ী, লেখক এবং বুদ্ধিজীবীসহ ৪৫০ জনেরও বেশি ইহুদি।

মানবাধিকার লঙ্ঘনের পরও ইসরায়েলের ওপর ইইউ'র নিষেধাজ্ঞার প্রস্তাব স্থগিত রাখার পরিকল্পনার খবরের মধ্যে গত বৃহস্পতিবার ইইউ নেতাদের বৈঠকের সময় তাদের চিঠি প্রকাশ করা হয়।

চিঠিতে বলা হয়েছে, 'আমরা ভুলে যাইনি যে, সকল মানবজীবনের সুরক্ষার জন্য প্রতিষ্ঠিত অনেক আইন, সনদ এবং সম্মেলন হলোকস্টের প্রতিক্রিয়ায় তৈরি হয়েছিল। ইসরায়েল এই সুরক্ষাগুলো নিরলসভাবে লঙ্ঘন করেছে।'

চিঠিতে সই করা ব্যক্তিদের মধ্যে রয়েছেন ইসরায়েলি পার্লামেন্টের প্রাক্তন স্পিকার আভ্রাহাম বার্গ, প্রাক্তন ইসরায়েলি শান্তি আলোচক ড্যানিয়েল লেভি, ব্রিটিশ লেখক মাইকেল রোজেন, কানাডিয়ান লেখক নাওমি ক্লেইন, অস্কারজয়ী চলচ্চিত্র নির্মাতা জোনাথন গ্লেজার, মার্কিন অভিনেতা ওয়ালেস শন, এমি বিজয়ী ইলানা গ্লেজার, হান্না আইনবাইন্ডার এবং পুলিৎজার পুরস্কার বিজয়ী বেঞ্জামিন মোজারের মতো লোকেরা।

তারা বিশ্বনেতাদের ইসরায়েলের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক ন্যায়বিচার আদালত (আইসিজে) এবং আন্তর্জাতিক ফৌজদারি আদালতের রায় বহাল রাখার আহ্বান জানিয়েছেন। সেই সঙ্গে তারা ইসরায়েলে অস্ত্র রপ্তানি বন্ধ করা, নিষেধাজ্ঞা আরোপের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘনে জড়িত হওয়া এড়াতে গাজায় পর্যাপ্ত মানবিক সহায়তা নিশ্চিত এবং শান্তি ও ন্যায়বিচারের পক্ষে কথা বলা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে তথাকথিত 'ইহুদি-বিদ্বেষের' মিথ্যা দাবি প্রত্যাখ্যান করার আহ্বান জানিয়েছেন।

চিঠিতে লেখা হয়েছে, 'অপূরণীয় দুঃখে আমরা মাথা নত করছি - কারণ প্রমাণ জমা হচ্ছে যে, ইসরায়েলের কর্মকাণ্ড গণহত্যার আইনি সংজ্ঞা পূরণ করেছে।'

গত কয়েক বছর ধরে মার্কিন ইহুদি ও ভোটারদের মধ্যে জনমতের তীব্র পরিবর্তনের পর এই চিঠিত এলো।

ওয়াশিংটন পোস্টের একটি জরিপে দেখা গেছে, ৬১% মার্কিন ইহুদি বিশ্বাস করেন, ইসরায়েল গাজায় যুদ্ধাপরাধ করেছে। ৩৯% বলেছেন, ইসরায়েল গণহত্যা করছে।

বৃহত্তর আমেরিকান জনসাধারণের মধ্যে ৪৫% বলেছেন, তারা বিশ্বাস করেন ইসরায়েল গণহত্যা করছে। অন্যদিকে গত আগস্টে করা একটি কুইনিপিয়াক জরিপে দেখা গেছে, মার্কিন ভোটারদের অর্ধেকই এই মতামত পোষণ করেন, যার মধ্যে ৭৭% ডেমোক্র্যাট।

চিঠিতে সই করা প্রভাবশালী ইহুদিদের মধ্যে আরও রয়েছেন ইসরায়েলি কন্ডাক্টর ইলান ভলকভ, নাট্যকার ভি, আমেরিকান কৌতুকাভিনেতা এরিক আন্দ্রে, দক্ষিণ আফ্রিকার ঔপন্যাসিক ড্যামন গালগুট, অস্কারজয়ী সাংবাদিক ও তথ্যচিত্রকার যুবাল আব্রাহাম, টনি পুরস্কার বিজয়ী টবি মার্লো এবং ইসরায়েলি দার্শনিক ওমরি বোহম।

তারা চিঠিতে আরও বলেছেন, 'ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে আমাদের সংহতি ইহুদি ধর্মের প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা নয়, বরং এর পরিপূর্ণতা। যখন আমাদের ধর্মীয় নেতারা শিখিয়েছিলেন যে, একটি জীবন ধ্বংস করা মানে সমগ্র বিশ্বকে ধ্বংস করা, তখন তারা ফিলিস্তিনিদের জন্য ব্যতিক্রম করেননি। এই দখলদারিত্ব এবং বর্ণবাদের অবসান না হওয়া পর্যন্ত আমরা বিশ্রাম নেব না।'

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে ৬৭ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত এবং ১ লাখ ৭০ হাজারের বেশি আহত হয়েছে। জাতিসংঘের অনুমান, জনসংখ্যার প্রায় ৯০% অভ্যন্তরীণভাবে কয়েকবার করে বাস্তুচ্যুত হয়েছে।

দুই মার্কিন ডেমোক্র্যাটিক সিনেটর ক্রিস ভ্যান হোলেন এবং জেফ মার্কলে গত মাসে এই অঞ্চলে একটি তথ্য-অনুসন্ধান মিশনের পর এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন, ইসরায়েল গাজা থেকে ফিলিস্তিনিদের ধ্বংস এবং জাতিগতভাবে নির্মূল করার একটি পদ্ধতিগত পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করছে। সিনেটরদের মতে, এই কর্মকাণ্ডে যুক্তরাষ্ট্রও জড়িত।

তাদের প্রতিবেদনে বেসামরিক অবকাঠামোর প্রায় সম্পূর্ণ ধ্বংস, খাদ্যের অস্ত্রায়ন এবং মানবিক সাহায্য সরবরাহে পদ্ধতিগত বাধার বিস্তারিত বর্ণনা করা হয়েছে।

গত ১০ অক্টোবর হওয়া যুদ্ধবিরতি বারবার লঙ্ঘনের কারণে অনেকটা ভেঙে পড়েছে। ফিলিস্তিনি সংবাদ সংস্থা জানিয়েছে, ইসরায়েল গত ১১ দিনে ৮০ বার যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করেছে এবং কমপক্ষে ৮০ জন ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে।

ইসরায়েলি বাহিনীও হামাসকে চুক্তি লঙ্ঘনের জন্য অভিযুক্ত করেছে। রাফায় দুই ইসরায়েলি সেনাকে হত্যার দাবি করেছে এবং বন্দিদের মৃতদেহ ফেরত দিতে বিলম্ব করেছে।

চিঠিতে বলা হয়েছে, যুদ্ধবিরতিতে পশ্চিম তীরের কোনো উল্লেখ নেই। সেখানে বসতি স্থাপনকারীদের সহিংসতা অব্যাহত রয়েছে। দখলদারিত্বের অন্তর্নিহিত শর্তগুলো এখনো সমাধান করা হয়নি।

জাতিসংঘের মানবিক কার্যালয়ের সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুসারে, এই বছর পশ্চিম তীরে হামলায় ৩ হাজার ২০০ জনেরও বেশি ফিলিস্তিনি আহত হয়েছেন। জাতিসংঘ অক্টোবরের এক সপ্তাহে বসতি স্থাপনকারীদের ৭১টি হামলা নথিভুক্ত করেছে।

সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান

এলএইস/


সম্পর্কিত খবর

সর্বশেষ সংবাদ