ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ও ঢাকা-৮ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী শরিফ ওসমান হাদিকে হত্যাচেষ্টায় ছয়দফা দাবিতে ঐক্যবদ্ধ বিবৃতি দিয়েছে ছাত্রশিবিরসহ ১৮টি ছাত্রসংগঠন। আজ বুধবার (১৭ ডিসেম্বর) শিবিরের কেন্দ্রীয় সেক্রেটারি জেনারেল নুরুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক বিবৃতি দেওয়া হয়।
বিবৃতিতে বলা হয়, বাংলাদেশকে নিয়ে আজ বহুমুখী ষড়যন্ত্র ও স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ববিরোধী অপতৎপরতা চলছে। ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান বিন হাদি হলেন এসবের বিরুদ্ধে সোচ্চার ও বলিষ্ঠ কণ্ঠস্বর। পতিত ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ ও তাদের দোসররা দেশের রাজনীতিতে বিভাজন ও নিজেদের পুনর্বাসনের নীলনকশা বাস্তবায়নের অংশ হিসেবেই জুলাই যোদ্ধা ও ভারতীয় আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে আপোষহীন কণ্ঠস্বর শরিফ ওসমান বিন হাদিকে হত্যার জঘন্য অপচেষ্টা করে। রাজধানীতে প্রকাশ্য দিবালোকে সংঘটিত এই সশস্ত্র হামলা স্পষ্টভাবে প্রমাণ করে যে, গণহত্যাকারী পতিত ফ্যাসিস্ট শক্তি পরিকল্পিতভাবে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের নেতৃত্বকে টার্গেট কিলিং মিশনে নেমেছে।
৬ দফা দাবি হলো-
শরিফ ওসমান বিন হাদির ওপর হামলায় জড়িত সকল সন্ত্রাসীকে অবিলম্বে গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। জুলাই গণঅভ্যুত্থানের নেতৃবৃন্দকে সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা প্রদান করতে হবে। ভারতীয় প্রক্সি ফ্যাসিস্ট শক্তির মূল হোতা খুনি শেখ হাসিনাসহ সকল অপরাধীকে অবিলম্বে দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের মুখোমুখি করতে হবে। ফ্যাসিস্ট শক্তির আর্থিক উৎসের সঙ্গে যুক্ত সকল ব্যবসায়ীর সম্পদ বাজেয়াপ্ত করতে হবে। প্রশাসন, রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা সংস্থা ও গণমাধ্যমে লুকিয়ে থাকা ফ্যাসিস্ট এজেন্ডা বাস্তবায়নকারীদের দ্রুত আইনের আওতায় আনতে হবে। সাঁড়াশি অভিযান পরিচালনা করে সকল অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার ও জনজীবনের পূর্ণ নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, জুলাই যোদ্ধা ওসমান বিন হাদিকে পরিকল্পিত হত্যাচেষ্টা প্রমাণ করে, পতিত ফ্যাসিস্ট সন্ত্রাসী কার্যক্রম এখনো সক্রিয় রয়েছে এবং গণহত্যাকারী আধিপত্যবাদী শক্তি ভারতের প্রত্যক্ষ পৃষ্ঠপোষকতায় সংগঠিত হচ্ছে। ভারতে অবস্থানরত পতিত ফ্যাসিস্ট গণহত্যাকারী শেখ হাসিনা ও তার দোসররা এখন জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সম্মুখসারির যোদ্ধাদের টার্গেট বানিয়েছে। মুজিববাদ, ফ্যাসিবাদ, আধিপত্যবাদ ও অপসংস্কৃতির বিরুদ্ধে যারা দৃপ্ত কণ্ঠে কথা বলছে-তাদের কণ্ঠ স্তব্ধ করাই এই ষড়যন্ত্রের মূল উদ্দেশ্য।
বিবৃতে নেতারা বলেন, ‘আমরা দ্ব্যর্থহীনভাবে ঘোষণা করছি-এই হামলা কোনো বিচ্ছিন্ন সন্ত্রাসী ঘটনা নয়; বরং এটি জুলাই গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা ও নেতৃত্ব ধ্বংস করে পতিত ফ্যাসিস্ট শক্তির রাজনৈতিক পুনর্বাসনের সুসংগঠিত অপারেশন। এই বর্বর হামলা প্রমাণ করে, গণহত্যাকারী ফ্যাসিবাদী শক্তি এখনো সক্রিয় রয়েছে এবং ভারতীয় আধিপত্যবাদের প্রত্যক্ষ পৃষ্ঠপোষকতায় তারা পুনরায় সংগঠিত হচ্ছে। ভারতে অবস্থানরত গণহত্যাকারী শেখ হাসিনা এখন পরিকল্পিতভাবে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সম্মুখসারির যোদ্ধাদের টার্গেট করছে।
একজন বিপ্লবী যোদ্ধা ও সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী হিসেবে শরিফ ওসমান বিন হাদির ওপর এই হামলা রাষ্ট্রের নিরাপত্তাহীনতা এবং ভঙ্গুর আইন-শৃঙ্খলা ব্যবস্থার নগ্ন বহিঃপ্রকাশ। আরও উদ্বেগজনক বিষয় হলো- হত্যাচেষ্টার ৫ দিন অতিক্রান্ত হলেও হামলার সঙ্গে জড়িত সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তারে সরকারের পক্ষ থেকে কোনো দৃশ্যমান ও কার্যকর অগ্রগতি লক্ষ্য করা যায়নি। অপরদিকে, জুলাই গণঅভ্যুত্থানে সরাসরি গণহত্যায় জড়িত থাকার সুস্পষ্ট অভিযোগ ও প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও সন্ত্রাসী আওয়ামী লীগের অসংখ্য খুনি ও দুষ্কৃতকারী ধারাবাহিকভাবে জামিনে মুক্ত হয়ে সারাদেশে হত্যা, অগ্নিসংযোগ ও গোপন হামলার মাধ্যমে জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি করছে।’
তারা বলেন, ‘আমরা মনে করি, মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণে এই ব্যর্থতা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের গুরুতর দুর্বলতার প্রতিফলন। এই ব্যর্থতার দায় আইন ও স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা কোনোভাবেই এড়াতে পারেন না। জনগণের জানমাল রক্ষা, অপরাধ দমন এবং রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে তাদের ভূমিকা চরমভাবে প্রশ্নবিদ্ধ।’
তারা আরও বলেন, ‘আমরা গভীর উদ্বেগের সঙ্গে আরও লক্ষ্য করছি যে, কিছু ব্যক্তি ও গোষ্ঠী এখনো টকশো, কলাম ও বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে গণহত্যাকারী আওয়ামী লীগের পক্ষে সহানুভূতি উৎপাদনের অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এটি জুলাই গণঅভ্যুত্থানের চেতনার বিরুদ্ধে সরাসরি অবস্থান এবং শহীদদের রক্তের সঙ্গে নির্মম বিশ্বাসঘাতকতা। গণমাধ্যমে লুকিয়ে থাকা ফ্যাসিস্ট এজেন্ডার বাহক সাংবাদিক নামধারীদের চিহ্নিত করে অবিলম্বে আইনের আওতায় আনতে হবে। একই সঙ্গে যারা পতিত ফ্যাসিবাদের সাংস্কৃতিক কাঠামো, বয়ান ও আধিপত্যবাদী চিন্তাকে পুনরুজ্জীবিত করতে তৎপর, তাদের বিরুদ্ধেও সুস্পষ্ট ও কার্যকর রাষ্ট্রীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি-নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণ, ন্যায়বিচার ও ইনসাফ প্রতিষ্ঠার স্বার্থে ফ্যাসিবাদী শক্তি ও তাদের রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক এবং বুদ্ধিবৃত্তিক এস্টাবলিশমেন্টকে মূল থেকে উৎখাত করার কোনো বিকল্প নেই। এ প্রশ্নে কোনো আপস, দ্বিধা বা শৈথিল্য জাতির ভবিষ্যৎকে ভয়াবহ ঝুঁকির মুখে ঠেলে দেবে।
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের ভিত্তিতে ন্যায়ভিত্তিক সমৃদ্ধ রাষ্ট্র বিনির্মাণের অবিনাশী গণ-আকাঙ্ক্ষা অবশ্যই বাস্তবায়ন করতে হবে। অগণিত শহীদ গাজীদের রক্তের ওপর অর্জিত জুলাই গণঅভ্যুত্থানকে তার কাঙ্ক্ষিত মঞ্জিলে পৌঁছানো না পর্যন্ত আমরা জুলাই প্রজন্ম থামব না। আমরা মনে করি, কাঙ্ক্ষিত বাংলাদেশ বিনির্মাণে ফ্যাসিবাদ ও আধিপত্যবাদবিরোধী সকল শক্তির ঐক্যবদ্ধ প্রয়াস সময়ের দাবি।’
বিবৃতি প্রদানকারী বিভিন্ন সংগঠনের নেতারা হলেন-
জাহিদুল ইসলাম, সভাপতি, বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির; মুনতাছির আহমেদ, সভাপতি, ইসলামী ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশ; আব্দুর রহমান ফারুকী, সভাপতি, জাগপা ছাত্রলীগ; মুহাম্মদ রায়হান আলী, সভাপতি, বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্র মজলিস; কাজী ফয়েজ আহমেদ, সভাপতি, জাতীয় ছাত্র সমাজ (কাজী জাফর); মুহাম্মাদ আব্দুল আজীজ, সভাপতি, বাংলাদেশ খেলাফত ছাত্র মজলিস; বি এম আমির জিহাদি, সভাপতি, বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রসমাজ; সৈয়দ মোঃ মিলন, সভাপতি, বাংলাদেশ ছাত্র মিশন; খালেদ মাহমুদ, কেন্দ্রীয় সভাপতি, ছাত্র জমিয়ত বাংলাদেশ; মেহেদি হাসান মাহবুব, সভাপতি, গণতান্ত্রিক ছাত্রদল (এলডিপি); আবু দারদা, সভাপতি, বাংলাদেশ খেলাফত ছাত্র আন্দোলন; মোশাররফ হোসেন, সভাপতি, ভাষানী ছাত্র পরিষদ; মোহাম্মদ ফজলে রাব্বি, আহবায়ক, নাগরিক ছাত্র ঐক্য; মোহাম্মদ প্রিন্স আল আমিন, সভাপতি, বাংলাদেশ ছাত্রপক্ষ; মোহাম্মদ নুর আলম, সভাপতি, বাংলাদেশ মুসলিম ছাত্র ফেডারশেন ; শেখ সাব্বির আহমদ, কেন্দ্রীয় আহবায়ক প্যানেল সদস্য, ইসলামী ছাত্র ফোরাম বাংলাদেশ; লামিয়া ইসলাম, সভাপতি, রাষ্ট্র সংস্কার ছাত্র আন্দোলন; মোঃ রেজাউল ইসলাম, সভাপতি, ন্যাশনাল ছাত্র মিশন।
আরএইচ/