সোমবার, ০১ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ।। ১৭ ভাদ্র ১৪৩২ ।। ৯ রবিউল আউয়াল ১৪৪৭

শিরোনাম :
নুরের ওপর সেনা-পুলিশ হামলা ন্যাক্কারজনক, নিঃশর্ত দুঃখপ্রকাশ করতে হবে: নাহিদ  পিআর ও জুলাই সনদ নিয়ে বাড়ছে বিরোধ, কোন পথে ইসলামি দলগুলো কাদিয়ানিদের অমুসলিম ঘোষণা ও আন্তর্জাতিক মহাসমাবেশ বাস্তবায়নে পরামর্শ সভা  আফগানিস্তানে ভয়াবহ ভূমিকম্পে প্রাণহানির ঘটনায় খেলাফত মজলিসের শোক আলেমে রাব্বানী ক্বারী তৈয়ব (রহ.)-এর স্মরণে আলোচনা ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত  বিএনপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে মির্জা ফখরুলের হাতে ফুল তুলে দিলেন সারজিস ‘কোরবানির চামড়া লবণজাত করে ক্ষতিগ্রস্ত মাদরাসার পাশে দাঁড়ায়নি সরকার’  আওয়ামী ‘দোসরদের’ রাজনীতি নিষিদ্ধে সর্বদলীয় বৈঠক ডাকসুতে ইসলামী ছাত্র আন্দোলন সমর্থিত প্যানেলের ইশতেহার ঘোষণা মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলায় শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ৩৫ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ

ডাকসুতে ইসলামী ছাত্র আন্দোলন সমর্থিত প্যানেলের ইশতেহার ঘোষণা

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনের ইশতেহার ঘোষণা করেছে ইসলামী ছাত্র আন্দোলন সমর্থিত সচেতন শিক্ষার্থী সংসদ প্যানেল।

সোমবার (১ সেপ্টেম্বর) বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ডাকসু ভবনের নিচে প্যানেলের সহসভাপতি (ভিপি) পদপ্রার্থী ইয়াসিন আরাফত ইশতেহার ঘোষণা করেন।

ঘোষিত ইশতেহারগুলোর মধ্যে প্যানেলের বিভিন্ন পদে দেওয়া ইশতেহারগুলো হলো-

১. মুক্তিযুদ্ধ ও গণতান্ত্রিক আন্দোলন
প্রস্তাবনাটি মূলত ঢাবির মাধ্যমে রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সংস্কারের ওপর জোর দেয়। এর মূল লক্ষ্য হলো ১৯৪৭, ১৯৭১ এবং ২০২৪ সালের জুলাই বিপ্লবের চেতনাকে ধারণ করে লেজুড়বৃত্তি ও ভয়ের রাজনীতি দূর করা এবং একটি গণতান্ত্রিক পরিবেশ তৈরি করা। এই লক্ষ্য অর্জনে প্রস্তাবগুলো সঠিক ইতিহাস চর্চা, আর্কাইভ তৈরি, অ্যালামনাইদের সম্পৃক্ত করা এবং আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটে নতুন ন্যারেটিভ তৈরি করার কথা বলে। সবশেষে এটি সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করার আহ্বান জানায়।

২. বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক
প্রস্তাবনাটি মূলত ঢাবির বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি খাতে আমূল পরিবর্তনের কথা বলে। এর প্রধান লক্ষ্য হলো সুপার কম্পিউটার স্থাপন ও রেজিস্ট্রার ভবনের ডিজিটালাইজেশনের মাধ্যমে শিক্ষা, গবেষণা ও প্রশাসনিক কার্যক্রম আধুনিক করা। একইসাথে, পুরোনো ল্যাবরেটরির যন্ত্রাংশ বদলে নতুন সরঞ্জাম যোগ করার মাধ্যমে গবেষণার সুযোগ বাড়ানো, শিক্ষার্থীদের মধ্যে গবেষণার আগ্রহ তৈরি করতে বিভিন্ন প্রজেক্ট ও প্রতিযোগিতা আয়োজন করা এবং ডিজিটাল নোটিশ ও অনলাইন রিসোর্সের ব্যবহার নিশ্চিত করা। এছাড়া শিক্ষার্থীদের প্রযুক্তিগত সহায়তা দিতে হলভিত্তিক সাইবার ক্যাফে তৈরি, ফ্রিল্যান্সিং কোর্স চালু এবং সাইবার বুলিং প্রতিরোধে ডিজিটাল হেল্পডেস্ক স্থাপনের কথা বলা হয়েছে।

৩. কমনরুম, পাঠকক্ষ ও ক্যাফেটেরিয়া সম্পাদক
প্রস্তাবনাটি মূলত ঢাবি শিক্ষার্থীদের আবাসন ও শিক্ষা সুবিধার উন্নয়নের ওপর আলোকপাত করে। এতে সকল শিক্ষার্থীর জন্য একক বেড ও উন্নত আবাসন নিশ্চিত করার পাশাপাশি অনাবাসিক শিক্ষার্থীদের জন্য সুবিধাজনক কমনরুম স্থাপনের কথা বলা হয়েছে। এছাড়া সকল একাডেমিক ভবনে মানসম্মত ক্যাফেটেরিয়া তৈরি এবং ক্যান্টিনগুলোর সমন্বিত ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে খাবারের মান বৃদ্ধি ও দাম কমানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। একইসাথে লাইব্রেরি আধুনিকীকরণ ও সম্প্রসারণ করে এটিকে ২৪ ঘণ্টা খোলা রাখার ব্যবস্থা, অনলাইন লাইব্রেরি স্থাপন এবং লাইব্রেরির সংগ্রহ ও আসন সংখ্যা বৃদ্ধি করার কথা বলা হয়েছে।

৪. আন্তর্জাতিক সম্পাদক
প্রস্তাবনাটি ঢাবি শিক্ষার্থীদের জন্য আন্তর্জাতিক মানের শিক্ষা ও কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরির ওপর গুরুত্বারোপ করে। এর মূল লক্ষ্য হলো ইউরোপের ইরাসমাস স্টুডেন্ট মোবিলিটির মতো প্রোগ্রাম চালু করা, যার মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা সহজে বিদেশে ক্রেডিট ট্রান্সফার করতে পারবে। একইসাথে ফুলব্রাইট, কমনওয়েলথ এবং শেবেনিংয়ের মতো বিশ্বমানের স্কলারশিপ পাওয়ার সুযোগ তৈরি এবং বিদেশে সম্মানজনক পার্ট-টাইম কাজের জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষতা প্রদান করার কথা বলা হয়েছে। এছাড়া আন্তর্জাতিক জার্নালে গবেষণা প্রকাশে অনুদান নিশ্চিত করা এবং জাতিসংঘ ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থায় ইন্টার্নশিপের সুযোগ তৈরি করে বিশ্ববিদ্যালয়ের র‍্যাংকিং উন্নত করার প্রস্তাব করা হয়েছে।

৫. সাহিত্য ও সংস্কৃতি সম্পাদক
প্রস্তাবনাটি মূলত বাংলা ভাষায় উচ্চশিক্ষা ও বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চার প্রসারের ওপর জোর দেয়। এর মূল লক্ষ্য হলো সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক কার্যক্রমের মাধ্যমে উচ্চশিক্ষাকে আরও সহজলভ্য করা। এতে বাংলায় একাডেমিক জার্নাল প্রকাশ, সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন এবং বিভিন্ন ক্লাব ও সমিতির কার্যক্রমকে বেগবান করার কথা বলা হয়েছে।

৬. ক্রীড়া সম্পাদক
প্রস্তাবনাটি ঢাবির খেলাধুলা ও ক্রীড়া সংস্কৃতির উন্নয়নের ওপর আলোকপাত করে। এর মূল লক্ষ্য হলো মাঠ ও খেলার সরঞ্জাম আধুনিকীকরণ, দেশীয় খেলাধুলাকে পুনরুজ্জীবিত করা এবং নিয়মিত আন্তঃহল ও আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় টুর্নামেন্ট আয়োজন করা। এছাড়া দক্ষ কোচ ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে খেলোয়াড়দের স্বাস্থ্য ও ফিটনেস নিশ্চিত করা এবং ক্রীড়া বাজেট বৃদ্ধি ও স্পনসরশিপ সংগ্রহের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে।

৭. ছাত্র পরিবহন সম্পাদক
শিক্ষার্থীদের জন্য বাসের রুট সম্প্রসারণ ও সংখ্যা বৃদ্ধি, রিয়েল-টাইম ট্র্যাকিং অ্যাপ চালু, বাসে ওয়াইফাই সংযোগ স্থাপন এবং মেট্রোরেল ও জাতীয় উৎসবের জন্য হাফ-পাস বা বিশেষ বাস সেবা নিশ্চিত করা।

৮. সমাজসেবা সম্পাদক
অসচ্ছল শিক্ষার্থীদের জন্য বৃত্তি ও স্কলারশিপের ব্যবস্থা করা, বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সমন্বয় করে পার্ট-টাইম চাকরির সুযোগ তৈরি করা এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগে সহায়তা প্রদান করা।

৯. ক্যারিয়ার ও উন্নয়ন সম্পাদক
চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের জন্য উপযুক্ত নেতৃত্ব তৈরি করা, শিক্ষার্থীদের জন্য ক্যারিয়ার গাইডলাইন ও ওয়ার্কশপ আয়োজন করা, অনলাইন প্ল্যাটফর্ম থেকে বিনামূল্যে দক্ষতা বৃদ্ধির কোর্স চালু করা এবং নিয়মিত জব ফেয়ার ও ওয়ান-স্টপ ক্যারিয়ার সলিউশন সেন্টার স্থাপন করা।

১০. স্বাস্থ্য ও পরিবেশ সম্পাদক
একটি পরিচ্ছন্ন ও স্বাস্থ্যকর ক্যাম্পাস নিশ্চিত করা, ২৪/৭ অ্যাম্বুলেন্স সেবা চালু করা, অনলাইন স্বাস্থ্য প্ল্যাটফর্ম ও হলগুলোতে ফার্স্ট এইড বক্স স্থাপন করা এবং স্বাস্থ্য বীমার প্রক্রিয়া সহজ করা।

১১. মানবাধিকার ও আইন সম্পাদক
প্রস্তাবনাটি মূলত ঢাবি শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা ও আইনি অধিকার নিশ্চিত করার ওপর গুরুত্বারোপ করে। এর প্রধান লক্ষ্য হলো ক্যাম্পাসে যানবাহন ও বহিরাগতদের প্রবেশ নিয়ন্ত্রণ করে একটি নিরাপদ পরিবেশ তৈরি করা। একইসাথে শিক্ষার্থীদের মধ্যে আইন সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে বিভিন্ন কর্মশালা আয়োজন, বিনামূল্যে আইনি পরামর্শ ও হেল্পলাইন সেবা চালু করা এবং গেস্টরুম ও র‍্যাগিংয়ের মতো সব ধরনের শিক্ষার্থী নির্যাতন রোধ করার কথা বলা হয়েছে। এছাড়া দ্রুত আইনি অভিযোগ নিষ্পত্তি ও জরুরি সহায়তার জন্য একটি ডু হেল্প ডেস্ক স্থাপনের প্রস্তাব করা হয়েছে।

এছাড়া কিছু মৌলিক অঙ্গীকারও উপস্থাপন করা হয়েছে, যেখানে ঢাবির সার্বিক উন্নয়নের একটি চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। এতে প্রশাসনিক স্বচ্ছতা, ডিজিটাল কার্যক্রম ও দুর্নীতি দমন মাধ্যমে প্রাতিষ্ঠানিক দক্ষতা বৃদ্ধি, শিক্ষার্থীদের আবাসন ও পরিবহন ব্যবস্থার উন্নতি, উন্নত স্বাস্থ্যসেবা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, এবং লাইব্রেরি ও গবেষণার সুযোগ বৃদ্ধি করার ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। এছাড়া এটি একটি মুক্ত ও সহনশীল শিক্ষাঙ্গন গড়ে তোলার পাশাপাশি চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের জন্য উপযুক্ত নেতৃত্ব তৈরিতে ক্যারিয়ার উন্নয়ন ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতার ওপর গুরুত্বারোপ করে।

এমএইচ/


সম্পর্কিত খবর

সর্বশেষ সংবাদ