বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের খতিব মুফতি আব্দুল মালেক সাহেব গতকাল জুমার খুৎবা-পূর্ব বয়ানে বলেছেন, ইসলাম ধর্মই একমাত্র সত্য ধর্ম। ইসলাম ছাড়া সকল ধর্মই বাতিল ধর্ম। মূর্তি বানিয়ে যারা পূজা করে এসব শিরককারীদের ঠিকানা হচ্ছে জাহান্নাম। ইসলামে উদারতা আছে। উদারতার নামে শিরককারীদের পূজায় গিয়ে অন্তরের ভালোবাসা দেখালে ঈমান থাকে না। পূজামন্ডপে গিয়ে একত্মতা প্রকাশ করে রাজনৈতিক দলকে প্রতিষ্ঠা করা যায় না। যারা পূজামন্ডপে গিয়ে আল্লাহকে নারাজ করে তাদের ঈমান থাকে না। সকল মুশরিকের কাছ থেকে আলাদা থাকাই ঈমান। সকল মুশরিকদের কাছ থেকে কিয়ামত পর্যন্তই আলাদা থাকতে হবে। খতিব বলেন, আল্লাহর ধর্ম ইসলামকে বাদ দিয়ে মুশরিকরা নিজেদের বানানো ধর্মকে শিরক মনে করে না। কোনো শিরকই ধর্ম হতে পারে না। মুশরিকরা নিজ নিজ ধর্ম পালন করবে এতে বাধা দেয়া যাবে না। সকল ধর্মের লোকেরাই সমানভাবে নাগরিক সুবিধা ভোগ করবে। যারা আল্লাহ ছাড়া শিরক করে আমরা সবাইকে তাওহীদের দাওয়াত দিচ্ছি। যারা শিরক করে তাদের নিরাপত্তা দেয়া ইসলামের বিধান।
সবচেয়ে বড় হচ্ছে শিরক। উদারতার নামে ঈমানকে ঢিলে ডালা করা যাবে না। অনেকে উদারতার নামে মুশরিকদের কাতারে চলে যায়। খবরদার তাওহীদ গ্রহণ করে মুশরিকদের কাছ থেকে দূরে থাকতে হবে। খতিব বলেন, নবী করীম (সা.) আল্লাহর পক্ষ থেকে গোটা বিশ্ববাসীকে তাওহীদের দাওয়াত দিয়ে গেছেন এবং সফলকামও হয়েছেন। তাওহীদের ভিত্তিতেই বন্ধুত্ব করতে হবে। যারা মুশরিক তাদের সাথে মুসলমানদের বন্ধুত্ব হতে পারে না। খতিব বলেন, আমাদের যাবতীয় ভালোবাসা একমাত্র আল্লাহর জন্য। পূজামন্ডপে গিয়ে কোনো মুশরিকের প্রতি ভালোবাসা দেখানো ঈমানহারাদের গর্হিত কাজ। খতিব বলেন, পূজামন্ডপে গিয়ে একাত্মতা ঘোষণা করলে ঈমান থাকে না। তারা (হিন্দু মুশরিক) কি মুসলমানদের ঈদগাহে বা হজে গিয়ে কি একাত্মতা পোষণ করে? তা’হলে তোমরা কেন পূজামন্ডপে যাও ?
মিরপুরের ঐতিহ্যবাহী বাইতুল মামুর জামে মসজিদের খতিব মুফতি আব্দুর রহিম কাসেমী গতকাল জুমার খুৎবা-পূর্ব বয়ানে বলেন, কোরআন অবমাননাকারীর স্থান জাহান্নাম। কোরআন বা ধর্ম অবমাননা করা শাস্তি যোগ্য অপরাধ। এটা যেই হোক না কেন তাকে শুধু গ্রেফতার নয় বরং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। আর যাতে ভবিষ্যতে কোন কুলাঙ্গার এই দুঃসাহস দেখাতে না পারে। কারণ মহাগ্রন্থ কোরআনুল কারীম মুসলমানদের হৃদয়ের স্পন্দন। মুসলিমগণ নিজের জীবনের থেকেও মহাগ্রন্থ কোরআনকে অধিক মহব্বত করে ভালোবাসেন। এটি মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের বাণী। কোরআনের অবমাননার অর্থ আল্লাহকে অবমাননা করা। কোরআন অবমাননাকারীদের জন্য দুনিয়া ও আখিরাতে চরম দুর্ভোগ ও ভয়াবহ শাস্তির ঘোষণা দিয়েছেন স্বয়ং আল্লাহ তায়ালা। আল্লাহ ইরশাদ করেন, দুর্ভোগ প্রত্যেক ঘোর মিথ্যাবাদী মহাপাপীর, যে আল্লাহর আয়াতের আবৃত্তি শোনে অথচ ঔদ্ধত্যের সঙ্গে (নিজ মতবাদের ওপর) অটল থাকে। যেন সে তা শোনেইনি। সুতরাং ওকে মর্মন্তুদ শাস্তির সুসংবাদ দাও। (সূরা জাসিয়া, আয়াত : ৭-৮।)
কেউ কুরআনের প্রতি প্রচ- বিদ্বেষ নিয়ে বা অন্য যে কোনোভাবে কোরআন অবমাননা কিংবা তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করলে সে ইসলামের গ-ি থেকে বেরিয়ে যায়। ইসলামী শরিয়তের ভাষায় তাকে মুরতাদ বলা হবে। এজন্য কারো কোরআন অবমাননার মতো জঘন্য অপরাধের কোনো সুযোগ নেই। আল্লাহ তায়ালা আরোও ঘোষণা করেন, যারা আল্লাহ ও তার রাসূলের বিরুদ্ধে দুশমনিতে লিপ্ত হয় এবং পৃথিবীতে অশান্তি ও বিপর্যয় সৃষ্টির পাঁয়তারা করে, তাদের শাস্তি শুধু মৃত্যুদ-, শূলবিদ্ধ করে হত্যা কিংবা হাত পা বিপরীত দিক থেকে কেটে ফেলা অথবা নির্বাসিত করা (কারাগারে নিক্ষেপ করা)। এ তো হলো তাদের পার্থিব অপমান। আর পরকালেও তাদের জন্য অপেক্ষা করছে মর্মন্তুদ শাস্তি। (সূরা মায়েদা ৩৩)। সম্প্রীতি নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় অপূর্ব রায় নামক যে কুলাঙ্গার কোরআন অবমাননা করেছে তা ইচ্ছাকৃতভাবে। এটা জঘন্য অপরাধ। এমন জঘন্য অপরাধের যদি সঙ্গতি থাকা অবস্থায় কোন মুসলিম শাসক এর বিচার না করে তাহলে তারা মহান রাব্বি কারীমের কাছে জিজ্ঞাসিত হবে। আল্লাহ আমাদের সবাইকে হেফাজত করুন, আমিন।
ঢাকা দক্ষিণ মুগদা ব্যাংক কলোনি রাসুলবাগ জামে মসজিদের খতিব মুফতি আব্দুল্লাহ আল মাসউদ সাহেব গতকাল জুমা খুৎবা-পূর্ব বয়ানে বলেন, মানব সৃষ্টির প্রথম ও প্রধান উদ্দেশ্য হচ্ছে আল্লাহ তাআলার ইবাদত করা। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, আর আমি জ্বিন ও ইনসানকে শুধু আমার ইবাদত করার জন্য সৃষ্টি করেছি। (সূরা যারিয়াত ৫১: ৫৬)। খতিব বলেন, ইবাদত বলা হয়, এমন কতিপয় আমল- যার মাধ্যমে বান্দা আল্লাহ তালার বড়ত্ব স্বীকার করে, নিজের অক্ষমতা প্রকাশ করে, তাঁর অনুগ্রহের শুকরিয়া আদায় করে। সর্বোপরি আল্লাহর প্রতি তার মুহাব্বত ও ভালোবাসা প্রকাশ করে। তো বান্দা জীবনের সকল ক্ষেত্রে, হোক তা চিন্তা চেতনাগত বিষয় কিংবা ব্যক্তিগত পারিবারিক সামাজিক বা রাষ্ট্রীয় বিষয়, এক কথায় জীবনে সে যাই করে, তা যদি আল্লাহর সন্তষ্টির জন্য তাঁর বাতলানো নিয়মানুযায়ী, তাঁর প্রেরিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের তরিকা অনুযায়ী করে, তাহলে সবই ইবাদত রূপে গণ্য হবে। আর এটাই আল্লাহ তাআলার সৃষ্টির উদ্দেশ্য আর একমাত্র এটার মাধ্যমেই বান্দা দুনিয়া ও আখেরাতে সফলকাম হতে পারে, এর বিকল্প নেই। কারণটা একটু আমাদের গভীরভাবে বুঝতে হবে।
আল্লাহ তাআলা মানুষকে মাটি দ্বারা সৃষ্টি করেন এবং তিনি তাতে রূহ ফুঁকলেন। ফলে দেহ ও আত্মা মিলেই পূর্ণ মানব সত্তা অস্তিত্ব লাভ করে। তাই মাটির তৈরি দেহের সম্পর্ক এ জগতের সাথে আর আত্মার সম্পর্ক ঊর্ধ্বজগত অর্থাৎ স্বয়ং আল্লাহ তায়ালার সাথে। সুবহানাল্লাহ, আল্লাহ তাআলাই একমাত্র রব। দেখুন, তিনি মাটির তৈরি দেহের জন্য প্রয়োজনীয় খাদ্যের ব্যবস্থা করেছেন এই মাটি থেকে, আর মানব-আত্মার প্রয়োজনীয় খাদ্যের জন্য তিনিই ইবাদতের ব্যবস্থা করেছেন। দেহ যেমন খাদ্য ছাড়া পুষ্টি ও বৃদ্ধি লাভ করে না, তেমনি আত্মাও ইবাদতের রূহানি খাদ্য ছাড়া সজীবতা ও প্রশান্তি লাভ করে না। আধুনিক মনোবিজ্ঞানীরাও বলেন, অর্থাৎ ইবাদত ছাড়া মানবমন উদ্বেগ ও শূন্যতায় পতিত হয়। খতিব বলেন, ইবাদত থেকে যে উপকার লাভ হয় তা বান্দার নিজের। আল্লাহ তাআলার কোন স্বার্থ নেই এখানে। তিনি সবকিছু থেকে নির্মুখাপেক্ষী। ইবাদতের মাধ্যমে বান্দা আল্লাহ তাআলার প্রিয়ভাজন হতে থাকে। এই জমিনে আল্লাহর খলিফা হওয়ার যোগ্যতা অর্জন করতে পারে। আখিরাতের অনন্ত জীবনে জান্নাতের অধিকারী হতে পারে। আমাদের সফলতার জন্য তিনি নির্দেশ দিয়েছেন একমাত্র তাঁর ইবাদত করার। আল্লাহ তাআলা আমাদের যথানিয়মে ইবাদত পালনের তাওফিক দান করুন। আমিন
এলএইস/