শুক্রবার, ২১ নভেম্বর ২০২৫ ।। ৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ ।। ৩০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৭


সকাল ১০:৩৯-এ অনুভূত ভূমিকম্প, বৈজ্ঞানিক ও ইসলামিক দৃষ্টিভঙ্গি

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

 ||তৌফিক সুলতান||

আজ সকাল ১০:৩৯-এ বাংলাদেশের কিছু এলাকায় ভূমিকম্প অনুভূত হওয়া একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূ-ভৌগোলিক ঘটনা হিসেবে বিবেচিত হতে পারে। ভূমিকম্প মূলত পৃথিবীর ভূত্বকের নিচে থাকা টেকটোনিক প্লেটসমূহের নড়াচড়া ও সংঘর্ষের কারণে সৃষ্টি হয়। পৃথিবীর ভূস্তরে নানা জায়গায় ফল্ট লাইন বা দুর্বল স্থান রয়েছে যেখানে চাপ জমে থাকে, এবং যখন এই চাপ নির্দিষ্ট সীমায় পৌঁছে যায় তখন হঠাৎ শক্তি মুক্তির মাধ্যমে কম্পন সৃষ্টি হয়। বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম ভূমিকম্প-ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় অবস্থান করছে, বিশেষ করে সিলেট ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলে “ডাউকি ফল্ট” এবং মিয়ানমার সীমান্তবর্তী “চট্টগ্রাম-আসাম ফল্ট” আমাদের দেশকে ভূমিকম্পের জন্য সংবেদনশীল করে তোলে। তাই ছোট বা মাঝারি মাত্রার ভূমিকম্প প্রায়শই ঘটে, যা বড় কোনো ভূমিকম্পের সম্ভাবনার সতর্ক সংকেতও হতে পারে।

ভূমিকম্পের মাত্রা এবং গভীরতা এর প্রভাব নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। গভীর ভূমিকম্পের কম্পন তুলনামূলক কম অনুভূত হয়, আর অগভীর ভূমিকম্পের আঘাত তীব্র হয়। বাংলাদেশের অনেক স্থাপনা পরিকল্পিত নয়, ভবনের মানও সমান নয়—ফলে সামান্য কম্পনেও দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ভিন্ন ভিন্ন প্রতিক্রিয়া দেখা যায়। এমন সাম্প্রতিক ছোট কম্পনগুলো অনেক সময় বড় ভূমিকম্পের পূর্বাভাস হতে পারে, তাই সচেতনতা ও প্রস্তুতি অত্যন্ত জরুরি। ভূমিকম্প-প্রবণ দেশে স্কুল, কলেজ, অফিস ও পরিবার পর্যায়ে প্রয়োজনীয় মহড়া, নিরাপদ স্থাপত্য এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার প্রশিক্ষণ থাকা অপরিহার্য।

ইসলামিক দৃষ্টিকোণ থেকে ভূমিকম্প শুধুই একটি প্রাকৃতিক ঘটনা নয়; বরং এটি আল্লাহর পক্ষ থেকে মানুষের প্রতি সতর্কবার্তা এবং চিন্তা-ভাবনার আহ্বান হিসেবেও বিবেচিত হয়। কোরআনে “যিলযাল” এবং “দাক্কা” শব্দের মাধ্যমে ভূমিকম্পকে উল্লেখ করা হয়েছে, যা মানুষের নৈতিকতার দিকে পুনঃফেরার ইঙ্গিত বহন করে। সুরা আন‘আমের আয়াতে স্পষ্ট বলা হয়েছে যে আল্লাহ মানুষের ওপর বা পায়ের নিচ থেকে আজাব পাঠাতে সক্ষম—যার ব্যাখ্যায় অনেক আলেম ভূমিধস ও ভূমিকম্পকেই বুঝিয়েছেন। হাদীসে এসেছে যে কিয়ামত ঘনিয়ে আসার আগে ভূমিকম্প বৃদ্ধি পাবে এবং পৃথিবীতে ফিতনা-ফাসাদ, অন্যায়-অবিচার ও পাপাচার বাড়লে আল্লাহ মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে বিভিন্ন নিদর্শন প্রকাশ করবেন; তার মধ্যে ভূমিকম্প অন্যতম।

ইসলাম মতে, ভূমিকম্প মানুষের ঈমানের পরীক্ষা হিসেবেও দেখা হয়। কখনও এটি সতর্কবার্তা, আবার কখনও এটি তাওবা, দোয়া এবং নিজের ভুল থেকে ফিরে আসার এক মহান সময়। দুর্যোগে দান-সদকা করা, অসহায়দের পাশে দাঁড়ানো এবং আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করা মুসলিমদের অন্যতম কর্তব্য। এমন পরিস্থিতিতে ভয় বা বিভ্রান্তির বদলে ধৈর্য, দোয়া এবং সঠিক প্রস্তুতি গ্রহণ করা ঈমানের অংশ। তাই ভূমিকম্প ঘটলে শুধুমাত্র নিরাপত্তা নয়, বরং আত্মশুদ্ধি, নৈতিকতা ও মানবিকতার প্রতিফলন ঘটানো জরুরি।

সবশেষে বলা যায়, আজকের ভূমিকম্প আমাদেরকে দুটি দিকেই শিক্ষা দেয়—বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিতে ভবিষ্যৎ ঝুঁকি মোকাবিলায় প্রস্তুত হওয়া এবং ইসলামিক দৃষ্টিতে আল্লাহর দিকে ফিরে আসা, আত্মসমালোচনা করা এবং মানবিক দায়িত্ব পালন করা। এই দুটি প্রস্তুতিই আমাদের সমাজ, দেশ এবং বিশ্বাসকে আরও সুদৃঢ় করতে সাহায্য করে।

এলএইস/


সম্পর্কিত খবর

সর্বশেষ সংবাদ