সোমবার, ১৭ নভেম্বর ২০২৫ ।। ২ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ ।। ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৭


বিদেশি আলেমদের বাংলাদেশ সফর নিয়ে কিছু কথা

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

||মুফতি এনায়েতুল্লাহ||

প্রতি বছরই নিয়ম মেনে অর্থাৎ ভিসা নিয়ে উড়োজাহাজের টিকিট কেটে ব্যাপক প্রচারণাসহকারে বিভিন্ন দেশের ধর্মীয় বক্তা, ইসলামি সংগঠনের নেতারা বাংলাদেশ সফর করেন। বাংলাদেশে এসে তারা সাধারণত ধর্মীয় আয়োজনের বাইরে কোনো আয়োজনে অংশ নেন না। কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া তো পরের কথা, তারা রাজনৈতিক কোনো মন্তব্যও করেন না।

বিগত বছরে দারুল উলুম দেওবন্দ, সৌদি আরব, ইরাক, লেবানন, মিসর ও ফিলিস্তিনের বেশ কিছু আলেম, ধর্মীয় নেতা ও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব বাংলাদেশে এসেছেন। এর মধ্য সাইয়্যেদে আরশাদ মাদানি, সাইয়্যেদ মাহমুদ মাদানি ও দেওবন্দের মহাপরিচালক মাওলানা আবুল কাসেম নোমানির নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।

২০২৪ সালের ৫ আগস্টের পর গত বছর এবং এ বছর ভারত, সৌদি আরবের সঙ্গে পাকিস্তান ও নেপালের বেশ কয়েকজন ধর্মীয় ব্যক্তিত্ব এই মুহূর্তে বাংলাদেশ সফরে রয়েছেন। তাদের সফর, বাংলাদেশে থাকা অবস্থায় কোথায় এবং কোন প্রোগ্রামে অংশ নেবেন, সেটাও প্রায় সবারই জানা। এর পরও ভারত, পাকিস্তান ও নেপালের বেশ কয়েকজন প্রভাবশালী ধর্মীয় বক্তা এবং বিভিন্ন সংগঠনের শীর্ষ নেতাদের বাংলাদেশ সফর নিয়ে ভিন্ন আলোচনা প্রান্তিকতা বৈ অন্য কিছু নয়, এটা নিতান্তই অজ্ঞতাপূর্ণ আচরণ।

সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশ সফর করছেন জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম পাকিস্তানের সভাপতি ও সংসদ সদস্য মাওলানা ফজলুর রহমান, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম পাকিস্তানের সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা আবদুল গফুর হায়দরি, পাকিস্তানের সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী মাওলানা আসাদ মাহমুদ, পাকিস্তানের বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়ার মহাসচিব মাওলানা হানিফ জালন্দরি, ইউসুফ বিন্নুরি টাউন মাদ্রাসার সহপরিচালক ড. আহমাদ ইউসুফ বিন্নুরি, দারুল উলুম করাচির উপ-উপাচার্য মাওলানা যুবায়ের উসমানি ও পাঞ্জাবের সারগোদার মারকাজ আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের প্রধান মাওলানা ইলিয়াছ গুম্মান প্রমুখ।

অন্যদিকে জমিয়তে উলামায়ে হিন্দ ভারতের সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য মাওলানা সায়্যিদ মাহমুদ মাদানি, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম নেপালের সভাপতি ও সংসদ সদস্য মাওলানা খালেদ সিদ্দিকিও বাংলাদেশ সফর করেছেন।

বাংলাদেশ সফরে আসা ইসলামপন্থী নেতাদের প্রায় সবাই রাজনীতি ও ধর্মীয় অঙ্গনে সুপরিচিত। তাদের আগমনে দেশের ধর্মীয় জনতা খুশি। বিগত দিনগুলোতেও তারা এসেছেন ভবিষ্যতেও আসবেন- ইনশাআল্লাহ। আলেম-উলামাদের এই পারস্পরিক সম্পর্ক রাজনীতির উর্ধ্বে। তাদের সফর ধর্মীয়, রাজনৈতিক নয়।

এর পরও বিদেশি আলেমদের বাংলাদেশ সফর নিয়ে কিছু অজ্ঞ মানুষ বিরুপ মন্তব্য করে থাকেন। এসব মন্তব্য এতটাই ছেলেমানুষিতে পূর্ণ যে, তা নিয়ে কথা বলতেও ইচ্ছা হয় না। আরেক শ্রেণির মানুষ তাদের নিয়ে রীতিমতো মিথ্যাচার করেন, যা কোনোভাবেই কাম্য নয়। যদিও তারা জানেন, বাংলাদেশ সফরে থাকা কোনো আলেম চলমান দোদুল্যমান রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে আসেননি। তারা এসেছেন অরাজনৈতিক সফরে, ওয়াজ মাহফিল কিংবা ধর্মীয় সেমিনারে অংশ নিতে। আর এটা দুই দেশের আলেমদের সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্কের কারণেই সম্ভব হয়েছে। সুতরাং আগ বাড়িয়ে, না জেনে শুধু শুধু বিদেশি আলেমদের সফরকে ভিন্নখাতে প্রবাহের সুযোগ নেই। আর এটা নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ারও কিছু নেই। তাদের সফর বিস্ময়কর কিংবা রহস্যজনকও নয়।

দুই.

বাংলাদেশে বিদেশি আলেমদের সফর নিয়ে একটি চক্র অতীতে নানা প্যানিক ছড়িয়েছে এবারও চেষ্টা করছে। ভবিষ্যতে এটা চেষ্টা আরও জোরদার হবে, তা অনেকটাই নিশ্চিত। এমতাবস্থায় আয়োজকদের কাছে আমার অনুরোধ থাকবে, বিশেশি হাই-প্রোফাইল আলেমদের বাংলাদেশ সফরে আসার সময় অবশ্য অবশ্যই সরকার প্রধান কিংবা সরকারে প্রতিনিধির সঙ্গে একটা সৌজন্য সাক্ষাতের ব্যবস্থা করা। এটা কূটনৈতিক রীতি মেনেই হবে- এমন সাক্ষাতের রীতি আছে, এটা নতুন কিছু নয়।

উদাহরণ হিসেবে বলি, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম পাকিস্তানের সভাপতি ও সংসদ সদস্য মাওলানা ফজলুর রহমান একজন প্রজ্ঞা রাজনীতিবিদ। বর্তমান সরকার প্রধানের সঙ্গে তার একটা সৌজন্য সাক্ষাতের ব্যবস্থা হলে, সর্বমহলে একটা ভালো ম্যাসেজ যেতো, আলেমদের রাজনীতি এবং পারস্পরিক সম্পর্কের গভীরতা বিষয়ে তাদের ধারণা উন্নত হতো। স্বাধীনতার সময় মাওলানা ফজলুর রহমানের বাবা মুফতি মাহমুদের অবদান নিয়ে নতুন প্রজন্ম কিছু পড়াশোনা ও জ্ঞানার্জনের সুযোগ পেতো।

এভাবে মাওলানা মাহমুদ মাদানি ও নেপালের সংসদ সদস্য মাওলানা খালেদ সিদ্দিকি। তারাও নিজ নিজ দেশে বেশ প্রভাবশালী। তাদেরও সৌজন্য সাক্ষাতের ব্যবস্থা হলে মন্দ হতো না। সাম্প্রতিক সময়ে আমরা দেখেছি, বাংলাদেশের কয়েকজন আলেম আফগানিস্তান সফর করেছেন। সফরকালে তারা দেশটির বিভিন্ন মন্ত্রীদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন।

তিন.

বিদেশি আলেমদের বাংলাদেশ সফরে আসার আগে আয়োজকদের এ বিষয়ে প্রেস ব্রিফিংয়ের ব্যবস্থা করা। অতীতে দেখা গেছে, এটা নিয়ে এক ধরনের লুকোচুরি হয়, চলে নানা ক্রেডিটবাজি। এগুলো ঠিক না। কে কে আসছেন, কোনো প্রোগ্রামে অংশ নিতে এসেছেন, কত দিন থাকবেন- এটা জানিয়ে দেওয়া। তাহলে আর তাদের সফর নিয়ে কুচক্রীমহল প্রোপাগাণ্ডার সুযোগ পাবে না।

বিদেশি মেহমান নিয়ে অতি লুকোচুরি, অতি স্বার্থসিদ্ধি ও ক্রেডিট বাজির কারণে অনেকেই আশংকা করা শুরু করছেন, পরে না আবার তাদের আসার পথ রুদ্ধ হয়ে যায়!

লেখক: আলেম, সিনিয়র সাংবাদিক ও বিশ্লেষক

এলএইস/


সম্পর্কিত খবর

সর্বশেষ সংবাদ