শুক্রবার, ৩১ অক্টোবর ২০২৫ ।। ১৫ কার্তিক ১৪৩২ ।। ৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৭

শিরোনাম :
৪০ সেকেন্ডের ঝটিকা মিছিল শেষে কারাগারে ছাত্রলীগ-যুবলীগের ১২ নেতাকর্মী ‘যথেষ্ট সফলতা আছে, তবে ১৫ বছরের জঞ্জাল ১৫ মাসে পরিষ্কার করা যায় না’ ব্যাংকগুলোতে ক্যাশ নেই, চরম ভোগান্তিতে গাজার মানুষ বাধ্যতামূলক সেনা নিয়োগের বিরুদ্ধে ইসরাইলে ব্যাপক বিক্ষোভ শ্রমিকবান্ধব রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় ইসলামী শক্তিকে ক্ষমতায় আনতে হবে : মাওঃ আব্দুল আউয়াল দেশের সর্ববৃহৎ সিরাত প্রতিযোগিতার গ্র্যান্ড ফিনালে অনুষ্ঠিত ‘যারা ভোটের জন্য বেহেশতের টিকিটের কথা বলে বেড়ায় তাদের থেকে সাবধান’ ঝটিকা মিছিল করতে গিয়ে গ্রেপ্তার আ.লীগের তিন হাজার নেতাকর্মী ভৈরবকে জেলা ঘোষণার দাবিতে মহাসড়কে নামাজ আদায় নভেম্বর থেকে নতুন পোশাক পাচ্ছে মহানগর পুলিশ

AI -এর বিরুদ্ধে সোচ্চার হোন : মাওলানা মুহাম্মাদ হেমায়েত উদ্দীন

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার
লেখক মাওলানা মুহাম্মাদ হেমায়েত উদ্দীন

AI (এ আই) হল Artificial intelligence অর্থাৎ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা। এটি হলো কম্পিউটার বিজ্ঞানের এমন একটি শাখা, যা মানুষের বুদ্ধিমত্তা, সিদ্ধান্ত গ্রহণ, অনুকরণ এবং সমস্যা সমাধানের মতো গুণাবলিকে কম্পিউটার বা মেশিনের মাধ্যমে সম্পন্ন করার চেষ্টা করে। AI দিয়ে নানান রকম হিসাব নিকাশ, আর্ট, ড্রয়িং, অনুবাদ, রিসার্চ-গবেষণা ইত্যাদি করানো যায়। এর দ্বারা বিভিন্ন জ্ঞান-বিজ্ঞানের বিষয় জানা যায়। AI-এর উপকারের অনেক দিক আছে সন্দেহ নেই। এ কারণে AI-এর চাহিদা ও জনপ্রীয়তা এখন তুঙ্গে। বাজার চাহিদা তুঙ্গে দেখে বিশ্বের বড় বড় ধনকুবেররা এর পেছনে বিনিয়োগ বৃদ্ধি করে চলেছেন। কিন্তু এর এমন কিছু ক্ষতিকর দিক রয়েছে যা কোনক্রমেই সমর্থনযোগ্য নয়। সেগুলো মারাত্মক ধ্বংসাত্মক। আমি এখানে সেরকম 3টা বড় ক্ষতির দিক তুলে ধরছি।

(১) সবচেয়ে বড় ক্ষতির দিক হলো AI মেধা ও মননের স্বাভাবিক বিকাশকে ধ্বংস করে দিচ্ছে এবং আরও দিবে। এভাবে চলতে থাকলে মানুষের মেধা অলস ও নিষ্ক্রিয় হয়ে যাবে। কেউ আর মেধা খাটাতে উৎসাহিত হবে না। কারণ সবকিছুর সমাধান তো AI -এর কাছ থেকেই পাওয়া যায়। এভাবে চলতে থাকলে মানুষের লেখাপড়া, জ্ঞানচর্চা, রিসার্চ-গবেষণা, মাথা খাটিয়ে রচনা অনুবাদ, আর্ট ড্রয়িং করা সবকিছু অনুৎসাহিত হয়ে পড়বে। কারণ এতো কষ্ট করে লেখাপড়ার কী দরকার, এতো মাথা খাটিয়ে রিসার্চ-গবেষণা, রচনা অনুবাদ ইত্যাদি কেন করতে হবে, সবকিছুই তো AI -এর কাছে পাওয়া যায়। এই তো কিছুদিন পূর্বে আমাদের 'ইন্টারন্যাশনাল দাওয়াত মিশন'-এর কাজে কিছু ইসলামী বই ইংরেজিতে অনুবাদ করার জন্য লোক আহবান করেছিলাম। অনুবাদ করার জন্য কিছু স্যাম্পল দিয়েছিলাম। দেখা গেল অধিকাংশ অনুবাদকই সম্পূর্ণ AI বা google translate-এর সাহায্য নিয়েই অনুবাদ করে জমা দিয়েছেন। নিজেরা একটুও মাথা খাটাননি। আর AI বা google translate-এর অনুবাদ যে কতো জায়গায় হাস্যকর বা গোজামিলে কিম্বা নাদানসুলভ হয়ে থাকে তা বিজ্ঞজন অবহিত আছেন।

(২) AI-এর আর একটি বড় ক্ষতির দিক হলো অনুকরণ। যেমন মানুষের কন্ঠ ও অঙ্গভঙ্গি অনুকরণ করে হুবহু তার মতো কথা বলছে। কথার সঙ্গে মুখভঙ্গি ও অঙ্গভঙ্গিরও মিল থাকছে। যেমন ইদানিং সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প, ড. ইউনূস ও শেখ হাসিনার কিছু ভিডিও ছাড়া হয়েছে, যেগুলোর পুরোটাই AI-এর কারিশমা। এভাবে চলতে থাকলে কতো মানুষকে যে কতোভাবে ফাঁসানো হতে পারে বা লাঞ্ছিত করা হতে পারে তা ভেবে দেখার রয়েছে বৈকি! এই প্রক্রিয়া যে শুধু হাসি তামাশার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে, ব্লাকমেইল, তথ্যবিকৃতি ইত্যাদিতে ব্যবহৃত হবে না তার গ্যারান্টি কে দিবে? অনেক মানুষ তো এগুলোকে বাস্তব মনে করে অন্তত প্রথম পর্যায়ে প্রতারিত হবেই। আবার অনেকে অনেক বাস্তবকেও অস্বীকার করবে এই বলে যে, এটা AI-এর কারসাজি। কী সব হ-য-ব-র-ল অবস্থাই না হবে।

(৩) AI-এর আর একটি বড় ক্ষতির দিক হলো কল্পনাকে বাস্তবের মতো চিত্রায়িত করা। এভাবে আজকাল অনেকে নানান অদ্ভুত ধরনের জীবজন্তুর চিত্র বা ভিডিও বানিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় ছাড়ছে আর আমাজন অমুক তমুক জঙ্গলে এসব প্রাণী থাকার কথা বলছে। ভিন গ্রহের বিভিন্ন ভিডিও বানিয়েও ছাড়া হচ্ছে এবং নাসার আবিষ্কার বা বিজ্ঞানের আবিষ্কার ইত্যাদি দাবিও করা হচ্ছে। এগুলো যে AI দিয়ে বানানো তা অনেকে বুঝতেও পারছে না। ফলে ভুয়া ধ্যান-ধারণা তাদের মাথায় বাসা বাঁধছে। এর বিপরীত অনেকে প্রাণীজগতসহ বিজ্ঞানের অনেক অনুসন্ধানী বাস্তব চিত্র ভিডিও নিয়েও সন্দেহে পড়ে যাচ্ছে এই ভেবে যে, এগুলো আবার AI-এর বানানো কৃত্রিম নয়তো। একটু অসাধারণ সব ধরনের চিত্র ভিডিও নিয়েই এখন এরকম সন্দেহ দেখা দিচ্ছে। কোনটা আসল কোনটা নকল আমরা সাধারণ মানুষরা পার্থক্য করতে পারছি না। এভাবে চলতে থাকলে জ্ঞানজগত যে হ-য-ব-র-ল হয়ে যাবে তা নিয়ে কি ভাবনার সময় আসেনি।

আবারও বলছি AI-এর উপকারের অনেক দিক রয়েছে সন্দেহ নেই। কিন্তু এসব মারাত্মক ক্ষতিকর দিকগুলো বিবেচনা করে AIকে সমূলেই নিষিদ্ধ করে দেওয়া উচিত কিম্বা অন্তত এই ক্ষতিকর দিকগুলো AI-এর প্রোগ্রাম থেকে অতি অবশ্যই বাদ দেওয়া উচিত। AI -এর বিরুদ্ধে সোচ্চার হোন। শুধু AI নয় আরও যেসব সফটওয়্যার বা কম্পিউটার প্রোগ্রামের মাধ্যমে এগুলো হচ্ছে সবগুলোর বিরুদ্ধেই সোচ্চার হোন। এগুলোর পেছনে যাদের ব্যবসা রয়েছে তারা নিবৃত্ত না হলে স্থানীয়ভাবে এগুলোকে বন্ধ করার ব্যবস্থা নেওয়া হোক। আমরা বিজ্ঞানের উন্নতি চাই। কিন্তু বিজ্ঞানের উন্নতির নামে আমাদের ক্ষতিসাধন করে কেউ ব্যবসা করে যাক আমরা আদৌ তা মেনে নিতে পারি না।

হাআমা/


সম্পর্কিত খবর

সর্বশেষ সংবাদ