বৃহস্পতিবার, ১২ জুন ২০২৫ ।। ২৯ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ ।। ১৬ জিলহজ ১৪৪৬


কীর্তিমান আলেমদের নিয়ে ব্যাপক কাজ হওয়া দরকার


নিউজ ডেস্ক

নিউজ ডেস্ক
শেয়ার
ফাইল ছবি

|| মুফতি এনায়েতুল্লাহ ||

আলেমরা আমাদের শ্রদ্ধার মিনার। বিশেষ করে মাদরাসা-মসজিদ প্রতিষ্ঠা, গ্রন্থ রচনা, লেখালেখি, দীনি নানা কাজের সূচনা, ইসলামি রাজনীতি ও সমাজসেবাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে যাদের অবদান স্বর্ণের মতো জ্বলজ্বল করছে, তারা আমাদের আদর্শ। তাদের স্মরণ, তাদের জীবন থেকে শিক্ষা, তাদের জীবনাদর্শ পরবর্তী প্রজন্মের কাছে পৌঁছে দেওয়া আমাদের নৈতিক দায়িত্ব।

আমাদের পূর্ববর্তীরা এ দায়িত্ব পালন করেছিলেন বিধায় বিগত সময়ের কীর্তিমানদের কথা আমরা জানতে পেরেছি। দীন প্রতিষ্ঠা ও প্রচার-প্রসারে তাদের অসামান্য অবদান, ত্যাগ আমাদের আজও আন্দোলিত করে।

দুই. স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশে আলেম-উলামাদের পথচলা কখনো একেবারে নিষ্কণ্টক ছিল না। নানা প্রতিকূলতা ছাপিয়েই তাদের পথ চলতে হয়েছে। সেটা মাদরাসা প্রতিষ্ঠা হোক কিংবা রাজনীতির ময়দান, সমাজসেবার জন্য সেবা সংস্থা প্রতিষ্ঠা হোক কিংবা লেখালেখি। তারপরও বহু কর্মবীর আলেম বিগত ৫৪ বছরে বাংলাদেশে আলো ছড়িয়েছেন, সমাজে ব্যাপক অবদান রেখেছেন। 

তিন. রাজধানী ঢাকাসহ চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ, খুলনা, যশোর ও রাজশাহীসহ গোটা বাংলাদেশে ছড়িয়ে আছে তাদের কাজের নমুনা। দুনিয়ার নিয়মে তারা ইন্তেকাল করেছেন, তবে তাদের রেখে যাওয়া কাজগুলো চলছে। শুধু তারা নেই আমাদের স্মরণে। পরবর্তী প্রজন্মের কাছে তাদের কথা, জীবন-সংগ্রামের কথা তুলে ধরতে কোনো উদ্যাগ নেই। এটা ভীষণ আফসোসের কথা। 

চার. ধরুন, আমাদের বরেণ্যদের কেউ একটা মাদরাসা প্রতিষ্ঠা করেছেন, তার মৃত্যর পর তার সন্তান বা শাগরেদদের কেউ সেটা পরিচালনা করছেন, ওই প্রতিষ্ঠান হয়তো আগের চেয়ে আরও ভালোভাবে চলছে, প্রতিষ্ঠানের সুনাম-সুখ্যাতি আরও বেড়েছে, শুধু হারিয়ে গেছেন তিনি, যার হাত ধরে এর সূচনা। হয়তো তাকে নিয়ে টুকটাক আলোচনা হয়, বক্তব্যের সময় তার প্রসঙ্গ ওঠে আসে, কিন্তু তাকে আর বিশদভাবে জানার সুযোগ হয়ে ওঠে না। কারণ, তাকে নিয়ে কোনো রচনা নেই, নেই জীবনীগ্রন্থ বা স্মারক। যেখান থেকে আগ্রহীরা তার সম্পর্কে জানার সুযোগ পাবেন।

পাঁচ. হ্যাঁ, কোনো কোনো আকাবিরকে নিয়ে কাজ হয়েছে। তাদের জীবনী সংকলন করার পাশাপাশি তাদের নিয়ে সমৃদ্ধ স্মারক হয়েছে, তবে সংখ্যাটা খুব বেশি নয়। এটা আরও ব্যাপক হওয়া দরকার। যিনি একটা কাজের সূচনা করলেন, একটা মাদরাসা প্রতিষ্ঠা করলেন, পরবর্তীতে সেটার পরিচালনার দায়িত্বে সন্তান কিংবা শাগরেদ হিসেবে আপনি এলেন, আর তাকেই স্মরণ করতে ইতস্ততবোধ করলেন, অথবা কাজটির গুরুত্ব আপনি অনুধাবন করলেন না, তাহলে পরবর্তী প্রজন্ম তাকে চিনবে কী করে? তাকে স্মরণে রাখা যদি আপনার কাজ না হয়, এটাকে দায়িত্ব মনে না করেন- তাহলে আপনি তার যোগ্য উত্তরাধিকার নন। তার প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বে থাকা আপনাকে মানায় না। কথাটা শক্ত হয়ে গেলেও, এটা বলা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই। 

ছয়. আপনার বাবা কীর্তিমানদের কেউ কেউ। তাকে শুধু নিজেদের সম্পদ মনে করে কুক্ষিগত করে রাখবেন, আবার তার নাম নিয়ে কর্মক্ষেত্রে নানাবিধ সুবিধা নেবেন, কিন্তু তাকে পরবর্তী প্রজন্মের কাছে তুলে ধরবেন না, এটা দ্বিচারিতা। এটা এক ধরনের হীনম্মন্যতা। নিজের কোনো আত্মবিশ্বাসের ঘাটতি থেকে আপনি চান না, তার ইতিহাস সংরক্ষণ করা হোক।

সাত. আমার আবেদন থাকবে, ব্যাপকভাবে কীর্তিমান আলেমদের নিয়ে কাজ করা হোক। তাদের জীবনী গ্রন্থ ও স্মারক রচিত হোক। যোগ্য সন্তান ও শাগরেদরা এ কাজে মনোনিবেশ করুক। এখনই ইতিহাস লিপিবদ্ধ না করলে, তা হারিয়ে যাবে। এখন সিদ্ধান্ত নিন, আপনি কোন পথে হাঁটবেন। নিজের পরিচয়কে কোনভাবে দেবেন?

লেখক: জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক ও বিশ্লেষক

এমএম/


সম্পর্কিত খবর

সর্বশেষ সংবাদ