নাজমুল হাসান।
আল্লাহভীরু মুমিনদের হৃদয়ের প্রিয় এক ইবাদত হলো রাত জেগে মহান আল্লাহর স্মরণে মশগুল থাকা। এটি এমন এক ইবাদত, যার মর্যাদা ও গুরুত্ব পবিত্র কোরআন ও সহিহ হাদিসে বহুবার বর্ণিত হয়েছে। রাতের নিস্তব্ধতা, প্রশান্ত আকাশ আর একাগ্রতার পরিবেশে একজন মুমিন যখন নামাজে দাঁড়িয়ে আল্লাহর সামনে বিনীতভাবে হাত তোলে—তখন সেই দৃশ্য প্রভুর কাছে অতি প্রিয় ও মনোমুগ্ধকর।
কোরআনের বর্ণনায়
আল্লাহ তাআলা বলেন:
"রাতের কিছু অংশ তাহাজ্জুদ কায়েম করো, এটা তোমার জন্য অতিরিক্ত ইবাদত। আশা করা যায়, তোমার প্রতিপালক তোমাকে প্রশংসিত অবস্থানে (মাকামে মাহমুদ) প্রতিষ্ঠিত করবেন।" সুরা বনি ইসরাঈল, আয়াত: ৭৯
তিনি আরও বলেন:
"নিশ্চয়ই ইবাদতের জন্য রাতে উঠা প্রবৃত্তি দমনকারী এবং বাকশক্তি নিয়ন্ত্রণে সহায়ক।" সুরা মুজাম্মিল, আয়াত: ৬
কিন্তু সবার পক্ষে কি রাতভর ইবাদত সম্ভব?
প্রতিদিন রাত জেগে ইবাদত করা সবার জন্য সহজ নয়। কর্মব্যস্ততা, শারীরিক দুর্বলতা ও অন্যান্য সীমাবদ্ধতা অনেক সময় বাধা হয়ে দাঁড়ায়। তবে মহান আল্লাহ তাঁর অসীম করুণায় আমাদের জন্য এমন কিছু সহজ ও কার্যকর আমল বাতলে দিয়েছেন, যেগুলোর মাধ্যমে সারা রাত ইবাদতের সওয়াব পাওয়া সম্ভব।
নিচে হাদিসভিত্তিক এমন কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ আমল তুলে ধরা হলো:
১. এশা ও ফজরের নামাজ জামাতে আদায় করা
উসমান ইবনু আফফান (রা.) বলেন:
"যে ব্যক্তি এশার নামাজ জামাতে আদায় করে, তার জন্য অর্ধরাত ইবাদতের সওয়াব লেখা হয়। আর এশা ও ফজর উভয় নামাজ জামাতে আদায় করলে, তার জন্য পুরো রাত নামাজে কাটানোর সওয়াব লেখা হয়।" তিরমিজি, হাদিস: ২২১
২. সুরা বাকারার শেষ দুই আয়াত তিলাওয়াত করা
আবু মাসউদ (রা.) বলেন:
"সুরা বাকারার শেষ দুই আয়াত যে ব্যক্তি রাতে পাঠ করবে, তা তার জন্য যথেষ্ট হবে।" বুখারি, হাদিস: ৪০০৮
ইমাম নববি (রহ.) বলেন, এটি সারা রাত ইবাদতের সওয়াব পাওয়ার জন্য যথেষ্ট।
৩. রাতে ১০০ আয়াত তিলাওয়াত করা
আবু হুরায়রা (রা.) বলেন:
"যে ব্যক্তি রাতে একশ আয়াত তিলাওয়াত করে, তার আমলনামায় রাতভর ইবাদতের সওয়াব লেখা হয়।" ইবনে খুজাইমাহ, হাদিস: ১১৪২
৪. উত্তম চরিত্র ও শিষ্ট ব্যবহার
রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন:
"একজন মুসলমান যদি শরিয়তের ওপর আমল করে এবং উত্তম চরিত্রের অধিকারী হয়, সে এমন মর্যাদা পায়—যা সেই ব্যক্তির সমান, যে রাতে দীর্ঘ সময় নামাজে থাকে এবং দিনে রোজা রাখে।" মুসনাদে আহমাদ, হাদিস: ৬৬৪৮
আয়েশা (রা.) বলেন:
"মুমিন ব্যক্তি তার উত্তম চরিত্রের মাধ্যমে রোজাদার ও কিয়ামুল লাইলকারীর মর্যাদা অর্জন করে।" আবু দাউদ, হাদিস: ৪৭৯৮
৫. বিধবা ও দরিদ্রদের সাহায্য করা
আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত:
"যে ব্যক্তি বিধবা ও দরিদ্রদের সহায়তায় নিয়োজিত থাকে, সে আল্লাহর পথে মুজাহিদ, অথবা রোজাদার ও কিয়ামুল লাইলকারীর সমান সওয়াব পায়।" বুখারি, হাদিস: ৫৩৫৩
৬. সীমান্ত পাহারা দেওয়া (রিবাত)
সালমান ফারসি (রা.) বলেন:
"আল্লাহর পথে এক রাত সীমানা পাহারা দেওয়া এক মাসের নামাজ ও রোজার চেয়ে উত্তম।" মুসলিম, হাদিস: ১৯১৩
৭. তাহাজ্জুদের নিয়তে ঘুমানো
আবু দারদা (রা.) থেকে বর্ণিত:
"যে ব্যক্তি তাহাজ্জুদের নিয়তে ঘুমাতে যায়, কিন্তু ঘুমের কারণে উঠতে না পারে, তার জন্যও সেই নিয়তের সওয়াব লেখা হয় এবং আল্লাহ তার ঘুমকে সদকারূপে কবুল করেন।" সুনানে নাসায়ি, হাদিস: ১৭৮৭
আল্লাহ তাআলা বান্দার সামর্থ্য অনুযায়ী তাকেই মূল্যায়ন করেন। তিনি চাহিদা নয়, বরং নিয়ত ও আন্তরিকতাকে গুরুত্ব দেন। তাই আমাদের উচিত রাতভর না জাগতে পারলেও এসব সহজ আমল দ্বারা সেই সওয়াব অর্জনের চেষ্টা করা। আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য প্রতিদিন একটু সময় বরাদ্দ রাখাই হবে একজন মুমিনের পরিপূর্ণ জীবনের অংশ।
এনএইচ/