শুক্রবার, ১৩ জুন ২০২৫ ।। ২৯ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ ।। ১৭ জিলহজ ১৪৪৬


আমি মাদরাসা খুলেছি, দোকান না!


নিউজ ডেস্ক

নিউজ ডেস্ক
শেয়ার
ফাইল ছবি

|| মুফতি মুহাম্মদ তাকী উসমানী || 

যদি কেউ কোথাও আগে থেকেই কোনো দ্বীনি কাজে নিযুক্ত থাকে, তাহলে আমি তার সাথে প্রতিযোগিতা করে নিজের কাজ জোর করে চালু করবো না। হ্যাঁ, যদি কেউ নিজ থেকে দীনি কাজ শুরু করে— দোকান নয় বরং একটি মাদরাসা স্থাপন করে এবং আল্লাহ তায়ালা তাতে বরকত দেন, তাহলে সেটা ভিন্ন কথা।

এক বছর এমন হয়েছিল যে, আমাদের দাওরায়ে হাদিস ক্লাসে মাত্র বারো বা তেরোজন ছাত্র ছিল। তখন অনেকেই বলছিলেন, ‘হজরত মুফতি মুহাম্মদ শফী রহ. এই মাদরাসা বন্ধ করে দিলেন কেন?’ অথচ তিনি সারাজীবন এই নীতিতে চলেছেন যে, মাদরাসা কোনো ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান নয় বরং আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য কৃত একটি কাজ। যেসব ছাত্র আসে, তাদের দীনি শিক্ষা দেওয়া আমাদের দায়িত্ব, তবে ছাত্র সংখ্যা বাড়ানোই মূল উদ্দেশ্য নয়।

তিনি আমাদের ওসিয়ত করে বলতেন: ‘দেখো ভাই, আমি যখন নানকওয়ারা থেকে এই জায়গায় মাদরাসা স্থানান্তর করেছি, তখন এটা ছিল একেবারে মরুভূমি— চারপাশে না পানি, না রাস্তাঘাট, না ফোন, কিছুই ছিল না। অনেক বছর পর্যন্ত এমনই কষ্টকর অবস্থা ছিল। একবার তো এমনও হয়েছিল যে, আশেপাশে কোনো যানবাহন চলতো না, পানি সংগ্রহ করতে হতো বহু দূরের কূপ থেকে। তবে আমি মাদরাসা চালিয়েছি কেবল এই নীতির ওপর ভিত্তি করে যে, এটি দীনের খেদমতের একটি মাধ্যম— এটা কোনো ‘দোকান’ নয়।’

তিনি আরও বলতেন: ‘আমি মাদরাসা এই নিয়তে খুলি না যে, এটা যেকোনো মূল্যে চালাতেই হবে, চাই তা স্রেফ পাঁচজন ছাত্রের জন্য হোক। আর যদি একদিন এমন হয় যে, পানি পর্যন্ত না থাকে, তাহলে আমি দ্বিধা না করে মাদরাসা বন্ধ করে দেব, কিন্তু কখনোই নীতির সাথে আপস করবো না। কারণ, আমাদের উদ্দেশ্য ছাত্র সংখ্যা বাড়ানো নয়, বরং দীনের খেদমত এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন। যদি সেটা সম্ভব না হয়, তাহলে বন্ধ করে দেব, কিন্তু দীনি মূলনীতিকে জলাঞ্জলি দেব না।’

সেই সময় অনেক বড় বড় ও প্রসিদ্ধ উস্তাদও মাদরাসায় পড়াতেন, কিন্তু এই নতুন জায়গার দুঃখ-কষ্ট দেখে কেউ কেউ আসতে রাজি হননি। তখন কেউ বলেছিল, ‘হুজুর, এটা তো বিপদের সময়, আপনি চিঠি লিখে তাদের ডেকে নিন।’ কিন্তু আমার আব্বা বলেছিলেন, ‘না, আমি এটা করতে পারবো না। যদি এই মাদরাসা চলানোর জন্য আমাকে আমার নীতির সাথে আপস করতে হয়, তাহলে আমি এই মাদরাসা বন্ধ করে দেব, কিন্তু দীনের মূলনীতির সাথে আপস করবো না। এটা কোনো ব্যবসা নয় যে, যেকোনো মূল্যে চালাতে হবে। যদি কেউ চলে যায়, তাহলে চলে যাক, আমি অন্য কিছু করবো, তবে দীনের পথে ভুল পথে পা রাখবো না।’

এই কথাগুলো এত তীব্র এবং কষ্টদায়ক ছিল যে, সাধারণভাবে শুনলে মনে হতো অত্যন্ত কঠিন কথা, কিন্তু যারা নীতিতে অটল থাকতে চান, তাদের জন্য এগুলো ছিল শিক্ষণীয়। যখন মানুষ দীনি প্রতিষ্ঠান চালাতে গিয়ে নীতিহীন সিদ্ধান্ত নেয়, তখন মূল উদ্দেশ্য — আল্লাহর সন্তুষ্টি — হারিয়ে যায়। আর মাদরাসা চালানোর মূল লক্ষ্যই যদি নষ্ট হয়ে যায়, তাহলে স্রেফ বড় মাদরাসা বানানো বা বহু ছাত্র সংগ্রহ করার মধ্যে কোনো কল্যাণ নেই।

তাই আব্বা বলতেন: ‘আমার কাছে একটাই প্রশ্ন হবে কেয়ামতের দিন — তুমি নিজের সাধ্য অনুযায়ী নীতির ওপর অটল ছিলে কি না? মাদরাসা বন্ধ করেছো কি না, সেটাই মুখ্য নয়। মূল বিষয় হলো— তুমি আল্লাহর জন্য কাজ করেছিলে কি না।’

তরজমা: মুফতি মুহাম্মাদ শোয়াইব

এমএম/


সম্পর্কিত খবর

সর্বশেষ সংবাদ