মঙ্গলবার, ০১ জুলাই ২০২৫ ।। ১৬ আষাঢ় ১৪৩২ ।। ৬ মহর্‌রম ১৪৪৭


নীতি নির্ধারণী সপ্তাহ: গাজায় যুদ্ধবিরতি নাকি নতুন কোনো ষড়যন্ত্র?

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

ইনজামামুল হক 

গাজার রক্তাক্ত প্রান্তরে আবারও সহিংসতার কুয়াশা ঘনীভূত হচ্ছে। ইসরাইলি বাহিনীর ট্যাংক হামলা ও বিমান থেকে বর্ষিত বোমায় খান ইউনিসসহ গাজার বিভিন্ন এলাকা পরিণত হয়েছে ধ্বংসস্তূপে। অব্যাহত আগ্রাসনের মাঝেই বিশ্ব রাজনীতির মঞ্চে উঠেছে সম্ভাব্য যুদ্ধবিরতির আলোচনা। কিন্তু প্রশ্ন জাগছে, এটি কি সত্যিকারের শান্তির ইঙ্গিত, না কি একটি নতুন কূটকৌশল?

সহিংসতার ছায়ায় বসবাস

গণমাধ্যম বরাতে জানা গেছে, গাজার ওপর ইসরাইলের সামরিক অভিযান শুরুর ১০৪ তম দিনে খান ইউনিস শহরের পূর্বাংশে আবাসিক এলাকাগুলো ব্যাপক ধ্বংসের শিকার হয়েছে। হাসপাতাল সূত্রগুলো জানিয়েছে, গত কয়েক ঘণ্টায় কমপক্ষে ৬০ জন ফিলিস্তিনি শহীদ হয়েছেন। শুধু আল-তুফাহ এলাকায় দু’টি আলাদা হামলায় প্রাণ হারিয়েছেন বিশজন।

একই সঙ্গে ড্রোন হামলায় শিশু ও নারীসহ শরণার্থী শিবিরের নিরীহ মানুষরা প্রাণ হারাচ্ছেন। জাবালিয়ার পূর্বাঞ্চলে দখলদার বাহিনীর ভবন গুঁড়িয়ে দেওয়ার ঘটনায় আবারও প্রমাণ হয়েছে, এই যুদ্ধের প্রধান শিকার হচ্ছে সাধারণ মানুষ।

যুদ্ধবিরতির ইঙ্গিত নাকি সময়ক্ষেপণ?

এমন পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা দিয়েছেন, “খুব শিগগিরই যুদ্ধবিরতির চুক্তি হতে যাচ্ছে।” মার্কিন প্রশাসনের এমন বার্তাকে কেউ কেউ ইতিবাচক হিসেবে দেখলেও, বিশেষজ্ঞ মহলের অনেকে একে দেখছেন একটি কৌশলগত প্রয়াস হিসেবে- যেখানে মানবিকতা নয়, বরং ভূরাজনৈতিক স্বার্থই মুখ্য।

ইসরাইলি সংবাদমাধ্যম 'ইয়েদিয়ুথ আহারনোথ' জানায়, নেতানিয়াহু গোপন নিরাপত্তা সভা শেষে তার মন্ত্রিসভায় সিদ্ধান্ত নেবেন- এখনই যুদ্ধ থামাবেন, নাকি সম্পূর্ণ গাজা দখলের পরিকল্পনায় এগোবেন। এই দোদুল্যমান অবস্থায় ইসরাইলের অভ্যন্তরেও দেখা দিয়েছে মতভেদ।

ভিতরের চাপ, বাইরের চাহিদা

জেরুজালেম ও তেল আবিবে বসতি স্থাপনকারীরা বন্দীমুক্তি ও যুদ্ধ বন্ধের দাবিতে রাস্তায় নেমে এসেছে। ইহুদি জনগণের মধ্যেও যুদ্ধের যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। এমন সময়ে ইসরাইলি নেতৃত্ব যদি যুদ্ধবিরতির পথ বেছে নেয়, সেটা একমাত্র চাপে নয় বরং বিশ্বমঞ্চে তাদের অবস্থান টিকিয়ে রাখার স্বার্থেই।

মানবিকতার পুনর্জাগরণ কি সম্ভব?

গাজার আকাশে ধোঁয়ার চাদর সরিয়ে যদি সত্যিকার অর্থে একটি যুদ্ধবিরতি আসে, তবে তা যেন হয় দীর্ঘমেয়াদী ও ন্যায়ভিত্তিক শান্তির ভিত্তি। কিন্তু যদি এটি হয় কেবল বাহ্যিক চাপ সামলাতে নেওয়া কৌশলগত বিরতি, তবে তা হবে আরও গভীর সহিংসতার সূচনা।

এই সপ্তাহে ইসরাইলের নীতিনির্ধারণী সভাগুলো হবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিশ্ব তাকিয়ে আছে এই সংকটের গন্তব্য কোথায় গিয়ে দাঁড়ায় সেদিকে।

এমএইচ/


সম্পর্কিত খবর

সর্বশেষ সংবাদ