ইনজামামুল হক
মাওলানা ইলিয়াস হুসাইন—একজন প্রতিভাবান ও মেধাবী তালিবে ইলম। ২০১৭ সালে হাইআতুল উলয়ার প্রথম কেন্দ্রীয় পরীক্ষায় সারা দেশের হাজারো মেধাবী শিক্ষার্থীর মধ্যে শীর্ষস্থান অর্জন করে আলোচনায় আসেন তিনি। সে সময় রাজধানীর আফতাবনগরে অবস্থিত আল জামিআতুল ইসলামিয়া ইদারাতুল উলুম মাদরাসার শিক্ষার্থী ছিলেন তিনি।
তাঁর এই ঐতিহাসিক সাফল্যে বেফাকুল মাদারিসিদ দ্বীনিয়া বাংলাদেশের পক্ষ থেকে তাঁকে বিশেষ সম্মাননা হিসেবে হজ্ব করানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তবে ইলমে দীনের উচ্চতর জ্ঞান অর্জনের লক্ষ্যে তিনি তখন ভারতের ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান দারুল উলূম দেওবন্দে গমন করেন। পরে দেশে ফিরে তিনি জামিয়া শারইয়্যাহ মালিবাগ মাদরাসায় ইসলামি আইন বিভাগ (ইফতা) বিভাগে ভর্তি হন। ঠিক তখনই বিশ্বব্যাপী করোনা মহামারি শুরু হওয়ায় তাঁর হজ্বযাত্রা পিছিয়ে যায়।
দীর্ঘ আট বছর পর, ২০২৫ সালে সেই প্রতীক্ষিত হজ্ব পালনের সৌভাগ্য অর্জন করেন মাওলানা ইলিয়াস হুসাইন। পবিত্র হজ্ব সম্পন্ন করে সম্প্রতি তিনি দেশে ফিরেছেন। আওয়ার ইসলামের সঙ্গে অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে মাওলানা ইলিয়াস বলেন, “যেদিন আমাদের উস্তাদগণ জানালেন যে হাইআতুল উলয়ার পরীক্ষা হবে এবং আমরাই প্রথম পরীক্ষার্থী, তখন কিছুটা চিন্তিত হয়ে পড়েছিলাম। কারণ এই পরীক্ষায় সারা বাংলাদেশের সকল বোর্ডের শিক্ষার্থীরা অংশ নেবে। আলহামদুলিল্লাহ, পরবর্তীতে আমি প্রথম স্থান অর্জন করি।”
তিনি আরও বলেন, “ফলাফল প্রকাশের সময় আমি তখন দারুল উলূম দেওবন্দে অধ্যয়নরত। কুরবানির সময় আমাদের মুহতামিম মুফতি মুহাম্মদ আলী সাহেব ফোন করে আমাকে জানান যে, আমি প্রথম স্থান অধিকার করেছি এবং আমাকে হজ করানো হবে। মুহূর্তটি ছিল খুবই আবেগময়। আমি সর্বপ্রথম আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করি এবং বোর্ডের চেয়ারম্যান, মহাসচিব ও দায়িত্বশীলগণ- যাদের সহযোগিতায় হজ্ব করার সৌভাগ্য হয়েছে আমার- তাদের সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।
এই বিষয়ে আওয়ার ইসলাম কথা বলেছে বেফাকুল মাদারিসিদ দ্বীনিয়া বাংলাদেশের মহাসচিব মুফতি মুহাম্মদ আলীর সঙ্গে। তিনি বলেন, “২০১৬ সালে হাইআতুল উলয়া গঠনের পর ২০১৭ সালে প্রথম কেন্দ্রীয় পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। সে সময় বোর্ড চেয়ারম্যান ঘোষণা দেন— যদি এই পরীক্ষায় আমাদের বোর্ডের কোনো ছাত্র প্রথম হয়, তাহলে তাকে হজ্ব করানো হবে।”
তিনি আরও বলেন, “যেদিন ফলাফল প্রকাশ করা হয়, সেদিন মাওলানা ইলিয়াস হুসাইন প্রথম স্থান অধিকার করে। এটি ছিল আমার জীবনের অত্যন্ত আনন্দের মুহূর্ত। এরপর তিনি দীর্ঘ সময় ব্যস্ত ছিলেন উচ্চশিক্ষা ও অধ্যাপনায়। আলহামদুলিল্লাহ, এ বছর আমরা তাকে হজে প্রেরণ করে আমাদের দায়িত্ব পালন করেছি।”
মাওলানা ইলিয়াস হুসাইনের এই অর্জন মাদরাসা শিক্ষার মর্যাদা বৃদ্ধি করবে। তাঁর সাফল্যে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের তালিবে ইলমদের জন্য অনুপ্রেরণার নতুন দ্বার উন্মোচিত হলো।