শুক্রবার, ২৪ অক্টোবর ২০২৫ ।। ৭ কার্তিক ১৪৩২ ।। ২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৭

শিরোনাম :
১৬ মাসে কোরআনের হাফেজ কক্সবাজারের ওবায়দুল করিম আমরা কোরআনকে জাতীয় সংসদে নিয়ে যেতে চাই: অধ্যাপক মুজিবুর রহমান ঢাকাসহ বিভাগীয় শহরে শনিবার বিক্ষোভ করবে জামায়াত  প্রশাসনকে দ্রুততার সাথে বস্তুনিষ্ঠ ব্যবস্থা নিতে হবে: ইসলামী আন্দোলন আন্তর্জাতিক খতমে নবুওয়ত মহাসম্মেলন সফল করার লক্ষ্যে মানিকগঞ্জ জেলায় মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত  যারা আমাকে অপহরণ করেছে তাদের বাংলাদেশি মনে হয়নি জীবন দিলেও যদি চরিত্র না বদলায় তাহলে ভাগ্যও বদলাবে না: শায়খে চরমোনাই শ্রীমঙ্গলে বেওয়ারিশ কুকুরের আতঙ্ক: এক ঘণ্টায় তিন শিশু আহত ‘দুঃখজনক হলো ইসলামি অঙ্গন থেকে শক্তিশালী মিডিয়া গড়ার উদ্যোক্তা আমরা পাইনি’ ২৪ এর লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য এখন পর্যন্ত পূরণ হয়নি: সারজিস

করোনা পরবর্তী দেশের ওয়াজ-মাহফিলের হালচাল

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

মাওলানা যুবায়ের আহমাদ একাধারে লেখক, শিক্ষক, খতিব ও ইসলামী আলোচক। বাংলা ও ইংরেজি ভাষায় লেখেন দেশের শীর্ষ জাতীয় দৈনিকগুলোতে। কওমি মাদ্রসা ও পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডিগ্রি নেয়া এ আলেম যুগোপযোগী ও বিষযভিত্তিক ওয়াজে পারদর্শী তরুণ আলোচকদের অন্যতম। জনপ্রিয় এ ওয়ায়েজের সঙ্গে দেশের প্রচলিত ওয়াজ মাহফিলের নানা প্রতিকূলতা ও সম্ভাবনা নিয়ে কথা বলেছেন আওয়ার ইসলামের বিশেষ প্রতিনিধি মাহমুদুল হাসানের সঙ্গে। বিশেষ সেই সাক্ষাৎকারটি আওয়ার ইসলাম পাঠকের জন্য তুলে ধরা হলো-

করোনার র্দীঘ বিরতির পর দেশব্যাপী ওয়াজ মাহফলিরে চাহিদা কেমন দেখছেন?

আসলে আমাদের দেশের করোনা আতঙ্কের পাশাপাশি ধর্মীয় অঙনে কেমন যেন ভিন্ন এক আতঙ্ক বিরাজ করছিল। করোনার আতঙ্ক কিছুটা কাটিয়ে উঠলেও সে আতঙ্ক এখনও রয়ে গেছে। দেশের সামগ্রিক পরিস্থিতির কারণেই এমনটি হচ্ছে। ওয়াজ মাহফিল কতটা স্বাধীনভাবে হবে তা নিয়ে জনমনে অস্পষ্টতা রয়েছে। ফলে অন্যান্য বছরের চেয়ে এবার ওয়াজ আয়োজকদের তৎপরতা এখন পর্যন্ত কিছুটা কম। তবে এ ‘আতঙ্ক’ দ্রুতই কেটে যাবে বলে আশা করি। কারণ প্রোগ্রামের তারিখ চেয়ে ফোনের সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে।

দেশে আগের মতো ওয়াজ-মাহফিলের অবস্থা স্বাভাবিক করতে প্রশাসনের কোনো করণীয় আছে বলে মনে করেন?

অবশ্যই করণীয় আছে বলে মনে করি। ওয়াজ মাহফিল নাগরিকদের ধর্মীয় অধিকার। তাছাড়া দেশের অন্যায়-অপরাধ নিয়ন্ত্রণেও এর ভূমিকা রয়েছে।

কিছু কিছু ক্ষেত্রে বক্তাদের অপরিকল্পিত ও ইখলাসবিহীন ওয়াজের কারণে এর কিছু নেতিবাচক বিষয় আমাদের সামনে আসলেও ওয়াজ মাহফিল মানুষকে অপরাধমুক্ত জীবনের দিকে আহবান করে। কোনো ওয়াজকারীই মানুষকে মাদকের দিকে আহবান করেন না। বরং বর্তমানে অনেক সচেতন বক্তা রয়েছেন, যারা মাদক, দুর্নীতি, যৌতুক ও অন্যের অধিকার নষ্ট করার মতো বিষয়গুলোর বিরুদ্ধে তথ্যপূর্ণ ওয়াজ করেন। নারী অধিকারের পক্ষে কথা বলেন। সমাজের নানা কুসংস্কার নিয়ে কথা বলেন। ইবাদাত তো আছেই, আখলাকের সৌন্দর্য্য, যেমন মানুষের সঙ্গে সুন্দও আচরণ, প্রতিবেশীর অধিকার ইত্যাদি বিষয়ে গুরুত্বপুর্ণ আলোচনা করেন। ওয়াজ শুনে যৌতুকের টাকা ফেরত দেওয়ার অনেক নজির রয়েছে।

সামগ্রিকভাবে আমদের দেশের জন্য ওয়াজ মাহফিলের প্রয়োজন আছে। আমাদের সাবেক ধর্মপ্রতিমন্ত্রীর মতো বর্তমান ধর্মপ্রতিমন্ত্রীও খুবই আন্তরিক। ওয়াজ মাহফিলের প্রয়োজনীয় দিক বিবেচনায় মাননীয় ধর্মপ্রতিমন্ত্রী যদি ওয়াজে কোনো বাধা নেই মর্মে ঘোষণা দিয়ে দেন বা স্বাস্থ্যবিধি মেনে ওয়াজ মাহফিল করা যাবে বলে জানিয়ে দেন, তাহলে জনমনের এ আতঙ্ক থাকবে না। মানুষ সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞ থাকবে।

মানুষের আখলাক গঠনের মাধ্যমে সুন্দর সমাজ গঠনে ওয়াজ মাহফিল আরো বেশি কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারে কীভাবে?

এ ব্যাপারে আমাদের মুরব্বিদের দিকনির্দেশনা প্রয়োজন। ইসলামিক ফাউন্ডেশনও আলেমদের তত্ত্বাবধানে এ বিষয়ে কর্মশালা করতে পারে। মানুষের ধর্মীয় জ্ঞানের চাহিদা পূরণের এ মাধ্যম যেন সুন্দর চরিত্র গঠনে ভূমিকা পালন করতে পারে সেজন্য বিষয়ভিত্তক আলোচনায় পারদর্শী আলোচকদের প্রধান্য দেওয়া যেতে পারে।

সামনে সিরাতের মাস রবিউল আউয়াল আসছে। সিরাতের আলোচনার বিষয় কেমন হতে পারে?

মানবতার নবী হযরত মুহাম্মদ সা.-এর সিরাতই ইসলাম। ওয়াজে যেকোনো বিষয়ে আলোচনা করলে সিরাত তাতে আসারই কথা। তবুও প্রত্যেকটা ওয়াজে অংশ অংশ ভাগ করে বক্তাগণ সিরাত বিষয়ে আলোচনা করলে সমাজ অনেক উপকৃত হবে। বিশেষত যুবসমাজ আজ ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। তাদের রক্ষায় সিরাতবিষয়ক আলোচনায প্রাধান্য দেওয়া উচিত।

রাসুলুল্লাহ সা.কে ভালোবাসার গুরুত্ব, পুরস্কার, কীভাবে ভালোবাসতে হবে এ বিষয়গুলো আলোচনা হতে পারে সিরাত থেকে। ইবাদাতের পাশাপাশি রাসুলুল্লাহ সা.-এর আচরণ, লেনদেন কত সুন্দর ছিল তা তুলে ধরা প্রয়োজন। প্রথম সিরাত অধ্যয়নের গুরুত্ব বোঝাতে হবে। কারণ ওয়াজের এক বা দুই রাতে তো পুরো সিরাত বর্ণনা করা সম্ভব নয়।

বিষয়ভিত্তক কিছু ধারণা দিয়ে সিরাত অধ্যয়নের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে নির্ভরযোগ্য কিছু সিরাতগ্রন্থ পড়ার পরামর্শ দেওয়া যেতে পারে। পাড়ায় মহল্লায় সিরাত প্রতিযোগিতা হতে পারে। প্রত্যেকটা ওয়াজ মাহফিলকেন্দ্রিক সিরাত প্রতিযোগিতা হতে পারে।

একজন ওয়ায়েজ বা বক্তাকে নির্বাচন করার সময় আয়োজকগণ কোন কোন বিষয়ের প্রতি লক্ষ রাখলে সমাজ উপকৃত হবে?

দুঃখজনক হলো, ইউটিউব এখন ‘বড়বক্তা’র মানদণ্ড। ইউটিউবে যে বক্তার আলোচনার ভিউ বেশি, তাকে আজকাল ‘বড়বক্তা’ মনে করা হয়। এ থেকে বেরিয়ে আসতেই হবে। ইলম, আমল, ইখলাস দেখা প্রয়োজন। বিশেষত কেবল কণ্ঠ আর ইউটিউব না দেখে বিষয়ভিত্তিক আলোচনায় পারদর্শী আলোচকদের নির্বাচন করা উচিত। এতে যারা ওয়াজের ময়দানে কাজ করতে চায়, তারাও বিষয়ভিত্তিক আলোচনায় মনোযোগী হবে।

দেশের ওয়াজ মাহফিলের ভবিষ্যত কেমন মনে করেন?

ওয়াজ মাহফিল এদেশের মানুষের হাজার বছরের সংস্কৃতি। গ্রামে গ্রামে পড়ায় পাড়ায় ওয়াজ হয়। দাওয়াতের বড় মাধ্যম ওয়াজ। আয়োজক ও আলোচক সতর্ক হলে ওয়াজের ভবিষ্যত নিশ্চয়ই ভালো। অপ্রয়োজনীয় বিষয় বাদ দিয়ে আত্মশুদ্ধি ও দৈনন্দিন জীবনে প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো তুলে আনলে আরো প্রসারিত হবে এ ক্ষেত্র।

ধন্যবাদ আমাদের সময় দেয়ার জন্য

অনেক অনেক কৃতজ্ঞতা আওয়ার ইসলামের প্রতি। সঠিক সময়ে উপযোগী একটি বিষয় পাঠকদের সামনে তোলে ধরার প্রয়াসের জন্য।

-কেএল


সম্পর্কিত খবর

সর্বশেষ সংবাদ