মুফতী রফিকুল ইসলাম আল-মাদানী
ঈদ ও জুম'আ একই দিনে একত্রিত হলে ঈদ আর জুম'আ দুটিই আদায় করতে হবে।
ঈদের নামাজ এবং জুম'আর নামাজ দুটি স্বতন্ত্র ইবাদত। ঈদের নামাজ আদায় করার ফলে জুমার নামাজ আদায় করার দায়িত্ব পালন হবে না।
একই দিনে ঈদের নামাজ এবং জুম'আর নামাজ একত্রিত হলে হানাফি মাযহাব, শাফেয়ী মাযহাব, মালিকি মাযহাব, ইমাম ইবনুল মুনযির, ইমাম ইবনে আবদিল বার, ইমাম ইবনে হাযম জাহেরী এবং জমহুর ওলামায়ে কেরামের মতানুসারে ঈদের নামাজ এবং জুম'আর নামাজ দুটিই স্ব স্ব সময়ে আদায় করতে হবে।
এ বিষয়ে ইমাম আহমদ এবং ইমাম ইবনে তাইমিয়া রহ.ব্যতীত উল্লেখযোগ্য কোনো ইমামের মতভেদ নেই।
জমহুর ওলামায়ে কেরামের উল্লেখযোগ্য বিশেষ কয়েকটি দলিল নিম্নরূপ:
১. মহান প্রভু পবিত্র কুরআনে কারীমে ঘোষণা করেন, يا ايها الذين امنوا اذا نودي للصلاه من يوم الجمعة فاسعوا الى ذكر الله
হে মুমিনগণ জুম'আর দিন নামাজের জন্য যখন আহ্বান করা হয় তখন আল্লাহর স্মরন পানে তাড়াতাড়ি করো। (সূরা জুম'আ - ৯)
এই আয়াতের আলোকে জুম'আর নামাজ আদায় করা ফরজ। ঈদের নামাজ অথবা অন্য কোনো কারণে জুম'আর নামাজ পালন করতে হবে না এমন কোনো ইঙ্গিত এই আয়াতে নেই।
এছাড়া কোরআনে কারিমের আয়াত  দ্বারা ফরজ হওয়া জিনিস রহিত করা এধরনের উপযুক্ত দলীল ব্যতীত গ্রহণযোগ্য নয়।
২. সাহাবী আবু উবাইদা রা. থেকে বর্ণিত তিনি বলেন আমি ওসমান রা. এর সাথে সাক্ষাৎ করি, সেদিন ঈদের দিন ছিল। ঈদের নামাজ  তিনি খুতবা দেওয়ার আগেই আদায় করেন । অতঃপর খুতবা দেন। এতে তিনি বলেন, আজ জুম'আ ও ঈদ একত্র হয়েছে। দূরবর্তী আওয়ালী বা গ্রামবাসীদেরা আগ্রহ করলে জুম'আর অপেক্ষা করতে পারে। আর যার ইচ্ছা তাদের আবাসস্থলে ফিরে যেতে পারে।
উল্লেখ্য যে তিনি এ বর্ণনায় দূরবর্তী আওয়ালী বা গ্রামবাসীদের কে চিহ্নিত করে কথা বলেছেন। আর গ্রামবাসী বলতে হাদিসের পরিভাষায় এমন এক জাতিকে বোঝানো হয় যাদের উপরে জুম'আর নামাজ ফরজ নয়। 
এতে বুঝা যায় যাদের উপরে জুমার নামাজ ফরজ নয় তারাই শুধু জুম'আ না পড়ে পার পাবে। অন্যদেরকে অবশ্যই জুম'আর নামাজ আদায় করতে হবে । অতএব তাদেরকে জুম'আ না পড়ে চলে যেতে পারবে এমন অনুমতি তিনি দেননি।
উল্লেখ্য যে, যেসব বর্ণনা মতে জুম'আ আদায় না করে চলে যাওয়ার অনুমতি প্রদান করা হয়েছে সেখানেও আওয়ালী বা দূরবর্তী গ্রামবাসীদেরকেই বুঝানো হয়েছে যাদের উপরে জুমার নামাজ ফরজ নয়। আর যাদের উপর জুম'আ আদায় করা ফরয তাদের ক্ষেত্রে জুম'আ না পড়ার অনুমতি কোন বর্ণনাতেই সুস্পষ্টভাবে দেওয়া হয়নি।
৩. জুম'আর নামাজ আদায় করা ফরজ। আর ঈদের নামাজ আদায় করা ওয়াজিব। অতএব ওয়াজিব নামাজ আদায় করার মাধ্যমে ফরজ নামাজ আদায় হওয়ার বিধান ইসলামী শরীয়তে নেই।
৪. জুমার নামাজ এবং ঈদের নামাজ দুটি ভিন্ন ভিন্ন আবশ্যকীয় বিধান। অতএব একটি পালন করার মাধ্যমে অপরটি আদায় হবে না। যেমন ঈদের নামাজ আদায় করার মাধ্যমে কারো মতেই জোহর নামাজ আদায় করার দায়িত্ব পালন হয় না। এভাবেই ঈদের নামাজ আদায় করার মাধ্যমে জুমার নামাজ আদায় করার দায়িত্বও পালন হবে না। আল বাহরুর রায়েক: ২/৭০
৫. যারা ঈদের নামাজ আদায় করার মাধ্যমে জুমার নামাজের দায়িত্ব আদায় হয়ে যাবে বলে মনে করেন তাদেরকে আমি বলব, অন্তত সতর্কতার জন্য আপনারা জুমার নামাজ আদায় করেন । শরীয়তের বিভিন্ন মাসয়ালার আলোকে এই সর্তকতা অবলম্বন করাই সুস্পষ্টভাবে বুঝা যায়।
লেখক: গবেষক, কলামিস্ট ও মুহাদ্দিস ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার বাংলাদেশ, বসুন্ধরা, ঢাকা।
-এটি
 
                              
                           
                              
                           
                         
                              
                           
                        
                                                 
                      
                                                  
                                               
                                                  
                                               
                                      
                                         
                                      
                                         
                                      
                                        