জামীল আহমাদ
শুরু হল নাজাতের দশক। শুরু হল ইতেকাফের মৌসুম। রহমত দিয়ে শুরু হয়ে নাজাত দিয়ে শেষ হতে যাচ্ছে রমজানুল মোবারক।
নবীজি (সা.) এই সময়টাকে আরও বেশি গুরুত্ব দিতেন। আমলের পরিমাণ বাড়িয়ে দিতেন। ইতিকাফ করে লাইলাতুল কদর বা হাজার মাসের চেয়েও শ্রেষ্ঠ ও মূল্যবান রজনী অনুসন্ধান করতেন।
করোনার কারণে এবারের রমজান একটু ব্যতিক্রমভাবে কাটাতে হচ্ছে। তবুও যেই অপূর্ণতা এবং আমলের ঘাটতি এতোদিনে আমাদের হয়ে গেছে, তা এখন পুষিয়ে নেয়া দরকার। গাফিলতি ঝেড়ে ফেলে দিয়ে এখনই আল্লাহমুখি হওয়া খুব জরুরি। রমজানের অবশিষ্ট দিনগুলোতে কয়েকটা আমল আমাদের বিশেষভাবে করতে হবে।
হাদিস শরিফে বলা হয়েছে, আউয়ালুহু রাহমাতুন। প্রথম দশক রহমতের। আওসাতুহু মাগফিরাতুন। মাঝের দশক ক্ষমার। ওয়া আখিরুহু ইতকুম মিনান্নারি। শেষের দশক দোজখের আগুন থেকে মুক্তির।
এ হাদিসের ব্যাখ্যায় শায়খুল হাদিস মাওলানা জাকারিয়া কান্ধলভী (রহ.) বলেন, মানুষ তিন ধরনের হয়। সে জন্য মাহে রমজানকেও তিন ভাগে ভাগ করে পুরস্কারের ব্যবস্থা করেছেন আল্লাহতায়ালা।
এক ধরনের মানুষ হল গুনাহ থেকে মাসুম বা পাপমুক্ত, তারা হলেন নবী-রাসুল আলাইহিস সালাম। গুনাহ থেকে মাহফুজ বা নিরাপদ মানুষ হলেন সিদ্দিক শোহাদা সালেহিন। এদের ওপর রমজানের শুরু থেকেই রহমত বর্ষিত হয়।
আরেক ধরনের মানুষ- যারা আমলে সালেহ করে আবার নফসের তাড়নায় ছোটখাটো গুনাহে জড়িয়ে পড়ে। তারা দশ দিন সিয়াম পালনের পর রমজানের উসিলায় ক্ষমা পেয়ে যায়। তৃতীয় ধরনের মানুষ হল, যারা গোনাহের সাগরে ডুবে আছে। তারা বিশ দিন সিয়াম পালন করে প্রভুর কাছে কান্নাকাটি করার ফলে মাফ পেয়ে যায়।
রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘মান সামা রামাদানা ঈমানান ওয়া ইহতিসাবান গুফেরা লাহু মা তাক্বাদ্দামা মিন জাম্বিহি। যে মানুষ আন্তরিকতার সঙ্গে রমজানের রোজাগুলো যথাযথ নিয়মে আদায় করল, আল্লাহতায়ালা তার অতীতের গোনাহগুলো মাফ করে দেবেন। (বুখারি)
রমজানের শেষ হল নাজাত। এ দশকে রাসুলুল্লাহ (সা.) ইবাদত-বন্দেগিতে আরো বেশি মনোযোগী হতেন। অন্যান্য সময়ে করা আমলগুলো এই সময় আরো বাড়িয়ে দিতেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) এর শেষ দশকের আমলগুলো হল এই-
লাইলাতুল কদর অনুসন্ধান: ইরশাদ হয়েছে, তোমরা রমজানের শেষ ১০ দিনের বিজোড় রাতে শবেকদর তালাশ করো। (সহিহ বুখারি) লাইলাতুল কদর অর্থ সম্মানিত রজনী বা ভাগ্য নির্ধারণের রজনী। এই রাত হাজার মাসের চেয়ে মর্যাদাবান এবং এই রাতে পরবর্তী এক বছরের ভাগ্য নির্ধারিত করা হয় বলে এই রাতকে লাইলাতুল কদর বলা হয়। রাসুল (সা.) এ রাত অনুসন্ধান করতেন এবং উম্মতকেও অনুসন্ধান করতে বলেছেন। কারণ কদরের রজনীর নির্দিষ্ট বর্ণনা কোরআন ও হাদিসে নেই। তবে আবু হানিফার মতে ২৭তম রাত। কিন্তু এ মতের ওপর নির্ভর করে বসে না থাকাই ভালো।
সাদাকাতুল ফিতর: অর্থাৎ দানের মাধ্যমে ভঙ্গ করা। দীর্ঘ এক মাস সিয়াম সাধনার পর শাওয়াল মাসের প্রথম দিন দান ও ঈদ উৎযাপনের মাধ্যমে রোজা ভঙ্গ করা হয়, তাই এই দান সাদাকাতুল ফিতর এবং এই দিনকে ঈদুল ফিতর বলা হয়। ধনী স্বাধীন মুসলমান ব্যক্তির ওপর সাদাকায়ে ফিতর ওয়াজিব। আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, নবীজি (সা.) সাদাকায়ে ফিতর নির্ধারণ করেছেন রোজাকে অনর্থক ও অশালীন বাক্যালাপ থেকে পবিত্র করার জন্য এবং নিঃস্বদের খাদ্য দানের জন্য। (সুনানে আবি দাউদ) রাসুল (সা.) রমজানে অধিক পরিমানে দান করতেন। তিনি রমজান মাসকে শারুল মুয়াসাত তথা সহানুভূতির মাস বলে ঘোষণা দিয়েছেন।
ইতিকাফ করা: আল্লাহর সন্তুষ্টি ও ইবাদতের উদ্দেশ্যে রমজানের শেষ ১০ দিন মসজিদে অবস্থান করাকে ইতিকাফ বলে। ইতিকাফ রমজানের শেষ দশকের বিশেষ আমল। কেবল মনিবের সন্তুষ্টির জন্য একান্তে বসে ইবাদত বন্দেগি করা উচ্চ মানসম্পন্ন মুমিনের পরিচয়। হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, মহানবি (সা.) রমজানের শেষ দশকে ইতিকাফ করতেন। ওফাত পর্যন্ত এমনটা করেছেন। তবে যে বছর তাঁকে তুলে নেওয়া হয়, সে বছর তিনি ২০ দিন ইতিকাফ করেছিলেন।
রাত জেগে ইবাদত: হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, নবীজি (সা.) রমজানের শেষ দশকে ইবাদতের জন্য লুঙ্গি শক্ত করে বেঁধে নিতেন। ইবাদতের জন্য পরিপূর্ণ প্রস্তুতি গ্রহণ করতেন। সারা রাত জেগে ইবাদত করতেন। পরিবারের সবাইকে জাগিয়ে দিতেন। পরিবারের সবাই যেন ইবাদতে রাত কাটায় সে দিকে লক্ষ্য রাখতেন।
লেখক: মুহাদ্দিস ও গবেষক
-এটি
 
                              
                           
                              
                           
                         
                              
                           
                        
                                                 
                      
                                                  
                                               
                                                  
                                               
                                      
                                         
                                      
                                         
                                      
                                        