ওমর ইবনে আখতার।।
এটা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, ইবাদতের বসন্ত কাল পুরো রমাজনই ছিল আল্লাহর হাবিব সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে অত্যান্ত গুরুত্ববহ।  কিন্তু প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট রমজানের শেষ দশকের গুরুত্ব ছিল অন্য দিনগুলোর তুলনায় অনেক বেশি।
এসময় আল্লাহ হাবিব সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ভালোভাবে ইবাদতে মগ্ন থাকতেন। স্ত্রীদের সঙ্গ ত্যাগ করে মসজিদে ইতিকাফে সার্বক্ষণিক ইবাদতে সময় কাটাতেন। প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জীবনের অন্য সময়গুলোতে এতো বেশি ইবাদতে মশগুল থাকতেন না, যতটা না থাকতেন এই শেষ দশদিনে। 
এসময়ে আল্লাহর হাবিব সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ইবাদতে বর্ণনা দিতে গিয়ে হযরতে আম্মাজান আয়েশা রাযি. বলেন, 'রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) শেষ দশকে ইবাদতের মাত্রা এত বেশি বাড়িয়ে দিতেন—যেমনটি অন্য সময় করতেন না।' (আস সুনানুল কুবরা, হাদিস: ৮৩৫১; মুসলিম, হাদিস : ১১৭৫)
অপর হাদিসে আয়েশা রাযি. থেকে বর্ণিত,‘যখন রমজানের শেষ ১০ রাত আসত, তখন নবী করিম (সা.) কোমরে কাপড় বেঁধে নেমে পড়তেন (বেশি বেশি ইবাদতের প্রস্তুতি নিতেন) এবং রাত জেগে থাকতেন। আর পরিবার-পরিজনকেও তিনি জাগিয়ে দিতেন।’ (বুখারি শরিফ, হাদিস: ১০৫৩)
প্রিয় নবী রমজানের শেষ দশকে কেবল নিজেই ইবাদত করতে রাতে জাগরণ করতেন না। বরং জাগিয়ে দিতেন পরিবারের সকল সদস্যদেরকে। তাহাজ্জুদের জন্য রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পক্ষ হতে অন্য কে জাগানোর ব্যাপারে তেমন গুরুত্ব দেয়া না হলেও রমজানের শেষ দশকে রাত্রি জাগরণের জন্য নিজের প্রিয় কন্যা হযরত ফাতেমা রাযি. দরজায় কড়া নাড়তেন। বুখারি-মুসলিমের এক বর্ণনা মতে, তিনি আলী ও ফাতেমা রাযি. কে ডেকে বলতেন, তোমরা উঠবে না? (নফল) নামাজ পড়বে না?
হজরত আলী ইবনে আবি তালিব রাযি. থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক রাতে তাঁর কন্যা ফাতেমা রাযি. এর নিকট এসে বলেন, ‘তোমরা কি সালাত আদায় করছ না?’ (বুখারি, হাদিস : ১১২৭)
বিশেষকরে নবী কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমজানের শেষ দশদিন ইতিকাফ করেছেন। এর গুরুত্ব অপরিসীম। যার কারণে সকল আম্মাজান ও সাহাবায়ে কেরাম রাযি.ও রমজানের শেষ দশকে ইতিকাফ করেছেন।
হজরত আয়েশা রাযি. বলেন, ‘ইন্তেকাল পর্যন্ত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমজানের শেষ দশকে ইতিকাফ করেছেন, এরপর তাঁর স্ত্রীরাও ইতিকাফ করেছেন।’ (বুখারি, হাদিস : ১৮৬৮; মুসলিম, হাদিস : ২০০৬)
সাহাবায়ে কেরামকে শেষ দশকে ইতিকাফের গুরুত্ব বোঝাতে গিয়ে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘আমি কদরের রাতের সন্ধানে প্রথম ১০ দিন ইতিকাফ করলাম। এরপর ইতিকাফ করলাম মধ্যবর্তী ১০ দিন। অতঃপর ওহি প্রেরণ করে আমাকে জানানো হলো যে তা শেষ ১০ দিনে। সুতরাং তোমাদের যে ইতিকাফ পছন্দ করবে, সে যেন ইতিকাফ করে।’ এরপর মানুষ তাঁর সঙ্গে ইতিকাফে শরিক হয়। (মুসলিম, হাদিস : ১৯৯৪)
আর রমজানের এই শেষ দশদিনেই রয়েছে লাইলাতুল কদর। যা উত্তম হাজার মাস অপেক্ষায়। আর এ রাতেই নাযিল হয়েছে মহা গ্রন্থ আল কুরআন।
মহান আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন, ‘নিশ্চয়ই আমি একে নাজিল করেছি মহিমান্বিত রাতে (লাইলাতুল কদর)। আপনি কি জানেন মহিমান্বিত রাত কী? মহিমান্বিত রাত হাজার মাসের চেয়েও শ্রেষ্ঠ। সেই রাতে প্রতিটি কাজের জন্য ফেরেশতারা এবং রুহ তাদের প্রতিপালকের আদেশক্রমে অবতীর্ণ হয়। সেই রাতে শান্তিই শান্তি, ফজর হওয়া পর্যন্ত।’ (সুরা : কদর, আয়াত : ১-৫)
বিভিন্ন হাদিস দ্বারা বোঝা যায়, উল্লিখিত আয়াতে মহিমান্বিত যে রাতের কথা বলা হয়েছে, তা এই শেষ দশকেই লুকিয়ে আছে। রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, তোমরা শেষ দশকের বিজোড় রাতে লাইলাতুল কদরের অনুসন্ধান করো। (বুখারি, হাদিস : ২০১৭)
এ ছিল প্রিয় নবীর রমজানের শেষ দশকের ইবাদতের নমুনা। (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) মআল্লাহ সুবহানাহু তায়ালা আমাদের সকলকে প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পদাঙ্ক অনুসরণ করে রমজানের শেষ দশকের এই মহান সুযোগকে কাজে লাগানোর তাওফীক দান করুণ, আমিন!
লেখক: শিক্ষার্থী, জামিয়া শারইয়্যাহ মালিবাগ-ঢাকা
-এটি
 
                              
                           
                              
                           
                         
                              
                           
                        
                                                 
                      
                                                  
                                               
                                                  
                                               
                                      
                                         
                                      
                                         
                                      
                                        