সোমবার, ০৬ অক্টোবর ২০২৫ ।। ২০ আশ্বিন ১৪৩২ ।। ১৪ রবিউস সানি ১৪৪৭

শিরোনাম :
বুজুর্গ আলেমের সঙ্গে মুসাফাহার সময় হাতে চুমু খাওয়া প্রসঙ্গে অনেক উপদেষ্টা সেফ এক্সিটের কথা ভাবছেন, তাদের নাম প্রকাশ করা হবে: নাহিদ অতীতে সবাই ফেল, একবার ইসলামকে পরীক্ষা করে দেখুন: শায়খে চরমোনাই সংবিধানের দোহাই দিয়ে সংস্কার ব্যাহত করা যাবে না: গাজী আতাউর রহমান কোনো ধর্মগ্রন্থের অবমাননাই আমরা বরদাশত করব না: ড. আজহারী ফ্লোটিলা থেকে আটক ২৩ মালয়েশিয়ানকে মুক্তি দিয়েছে ইসরায়েল খেলাফত আন্দোলন ও এনসিপির বৈঠক ‘কোরআন অবমাননাকারী ও পেছনের উস্কানিদাতাকে শাস্তির আওতায় আনতে হবে’ কোরআন অবমাননা: সেই অপূর্ব পাল নর্থ-সাউথ থেকে স্থায়ী বহিষ্কার সবুজ স্মৃতিতে হজরত গহরপুরীই গোলাপ-বকুল!

ইসলামি স্বকীয়তা ও সংস্কৃতির বিকৃতি

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

মাওলানা বাহাউদ্দীন যাকারিয়া

বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে ‘ধর্ম যার যার, উৎসব সবার’ স্লোগানের আড়ালে বাঙালি সংস্কৃতির নাম করে হিন্দুয়ানি সংস্কৃতিকে মুসলমানদের জীবনে ঢুকিয়ে দেওয়ার এক গভীর ষড়যন্ত্র চালানো হয়। পূজা-পার্বণ থেকে শুরু করে পহেলা বৈশাখ— সর্বত্র হিন্দু ধর্মীয় রীতিনীতি, প্রতীক, দেব-দেবীর প্রতিমা ও শ্লোককে বাঙালি সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য বলে প্রচার করা হয়। বিশেষত মঙ্গল শোভাযাত্রার মতো প্রকাশ্য হিন্দুয়ানি আচারকে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দিয়ে মুসলমান সমাজের সামনে জাতীয় উৎসব হিসেবে হাজির করা হয়।

বাস্তবতা হলো, হিন্দুয়ানি সংস্কৃতি আর বাঙালি সংস্কৃতি কখনোই এক নয়। হিন্দু ধর্মীয় আচার-আচরণ, তন্ত্র-মন্ত্র, পূজা-পার্বণ, প্রতিমা বিসর্জন, মঙ্গল শোভাযাত্রা, প্রসাদ বিতরণ, আল্পনা আঁকা, পেঁচার প্রতিকৃতি এগুলো নিছক হিন্দু ধর্মীয় উপাদান ও ধর্মীয় কালচার— এগুলোকে ‘বাঙালি সংস্কৃতি’ বলা ইতিহাস ও তত্ত্ব উভয়েরই বিকৃতি।

দুঃখজনকভাবে আজকাল কিছু ইসলামি পরিচয়ের রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দকেও দেখা যাচ্ছে সেই পুরনো ধোঁকার ফাঁদে পা দিতে। তারা অতি উৎসাহ নিয়ে মন্দির পরিদর্শনে যাচ্ছে, পূজা উপলক্ষ্যে শুভেচ্ছা জানাচ্ছে, শ্লোক আবৃত্তি করছে। ফ্যাসিস্ট সরকার একভাবে হিন্দুয়ানি সংস্কৃতিকে বাঙালি সংস্কৃতি হিসেবে নরমালাইজ করতে চেয়েছে, এখন এই অতি উৎসাহী কথিত ইসলামী নামধারী নেতৃবৃন্দরাও ভিন্নভাবে সেই কাজ করছে। কাউকে মন্দিরে গিয়ে নজরুলগীতি আবৃত্তি করতে শোনা যাচ্ছে: মোরা এক বৃন্তে দুটি কুসুম, হিন্দু মোসলমান; মুসলিম তার নয়নমণি, হিন্দু তাঁহার প্রাণ। আবার বলতে শোনা যাচ্ছে, একদিকে রোজা আরেকদিকে পূজা; রোজা-পূজার বাংলাদেশ। আবার কোথাও মুহাম্মাদ, ঈসা, মুসা, বিষ্ণু কৃষ্ণকে এক কাতারে নামিয়ে আনা হচ্ছে। বলছে “এই বিষ্ণু, কৃষ্ণ, মুহাম্মদ, মুসা, ঈসা আমাদের সামনে ন্যায় ও সত্য প্রতিষ্ঠার প্রতীক (নাউজুবিল্লাহ)”। হক ও বাতিলকে সমমানের উপস্থাপনের দ্বারা বাতিলকে হক এবং হককে বাতিল সাব্যস্ত করা হয়। এরূপ করার ফলে ঈমান হয়ে যায় ভঙ্গুর।

অথচ এই পূজা তো আবহমানকাল ধরে চলে আসছে। ফ্যাসিবাদের আমলেও এত উৎসাহ নিয়ে মন্দিরে গিয়ে এসব করতে কখনো কাউকে দেখা যায়নি। নিছক রাজনৈতিক সুবিধা ও স্বার্থ লাভের আশায় ইসলামি চরিত্র বিসর্জন দেওয়ার এই প্রবণতা ইসলামী রাজনীতির জন্য আত্মঘাতী। ঈমানী ভিতকেও নড়বড়ে করে দেয়।

ইসলামি রাজনীতি মানে আল্লাহর বিধানকে সর্বক্ষেত্রে মান্য করা অর্থাৎ ব্যক্তি, সমাজ ও রাষ্ট্র ইসলামী শরিয়া মোতাবেক পরিচালনার অব্যাহত সংগ্রাম। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও সাহাবায়ে কেরাম যে আদর্শ রেখে গিয়েছেন, তাই হবে আমাদের অলঙ্ঘনীয় বিধান। আমাদের সবকিছুই সেভাবে ইসলামী সীমারেখার ভেতরেই হতে হবে। ক্ষমতার জন্য বা সস্তা জনপ্রিয়তার আশায় যদি কেউ সেই সীমা অতিক্রম করে, তবে তার আহ্বান আর ইসলামি থাকে না, বরং তা হয়ে ওঠে এক প্রকার ধর্মনিরপেক্ষ ভণ্ডামি। ইসলামী স্বকীয়তা ও স্বাতন্ত্র্য হারালে ইসলামি রাজনীতি কেবল নামসর্বস্ব রয়ে যায়।

এদের অপরিনামদর্শী তৎপরতা দেখে মনে হয় তারা পশ্চিমা তাগুতি সাম্রাজ্যের “কৃপাধন্য হওয়ার জন্য মরিয়া হইয়া উঠে পরে লেগেছে।” ইসলামি চরিত্র জলাঞ্জলী দিয়ে ক্ষমতার ‘সোনার মূর্তি’ লাভই যেন মুখ্য উদ্দেশ্য।

ইসলামি রাজনীতিতে শিরকি উৎসবের সঙ্গে আপসের সুযোগ নেই, তাওহিদ ও শরিয়তের সঙ্গে সাংঘর্ষিক কোনো কিছুর অনুমোদন নেই। যারা ক্ষমতার ‘রঙিন খোয়াবে’ ঈমানের মূল ভিত্তিকে জলাঞ্জলি দেয়, ইসলামের স্বকীয়তা ভুলে যায়, তাদের হাতে ইসলাম নিরাপদ নয়।

লেখক: সহসভাপতি, বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশ; মুহতামিম, জামিয়া ইসলামিয়া হোসাইনিয়া আরজাবাদ

আরএইচ/


সম্পর্কিত খবর

সর্বশেষ সংবাদ