||মুফতী আবদুল কাদের মাহমুদ কাসেমী||
রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম— মানবতার গর্ব, সৃষ্টিজগতের জন্য পরম রহমত, মুমিন হৃদয়ের প্রকৃত ভালোবাসা। তাঁর অনুসরণেই মানুষের মুক্তি; তাঁর ভালোবাসাতেই ঈমানের পরিপূর্ণতা। নিষ্ঠুর পৃথিবীর বুক থেকে তিনি চলে গেলেও তাঁর স্মৃতি, তাঁর স্নেহ, তাঁর অনুপম রূপের আকর্ষণ এখনো প্রতিটি ঈমানদারের হৃদয়ে সজীব ও দীপ্তিমান।
প্রতিটি মু’মিনের আকাঙ্ক্ষা—প্রিয় নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর পবিত্র চেহারার দর্শন লাভ করা, অন্তত স্বপ্নেই তাঁর নূরানী রূপকে দেখতে পাওয়া। এ সৌভাগ্য নিঃসন্দেহে আল্লাহ তাআলার দয়া ও প্রেমে সিক্ত এক অমূল্য নিয়ামত—যাকে ইচ্ছা, যেভাবে ইচ্ছা, তিনি সেই অনুপম অনুগ্রহে ভূষিত করেন।
কুরআন ও সুন্নাহতে এমন বহু নেক আমলের ইঙ্গিত রয়েছে, যা পালন করলে বান্দা আল্লাহর কাছে প্রিয় হয়; আর সেই প্রিয়ত্বের বরকতেই আল্লাহ কখনো স্বপ্নে নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে দর্শন করিয়ে দেন। তবে স্মরণ রাখতে হবে—এ অনুগ্রহ সম্পূর্ণই খোদায়ি নির্বাচন; বান্দার তাওহীদমাখা হৃদয়, নবীপ্রেমে ভরা জীবন ও সুন্নাহনিষ্ঠ আমলই হতে পারে এর প্রকৃত পথপ্রদর্শক।
স্বপ্নযোগে রাসূলসল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে দেখার শরয়ী প্রমাণ
পবিত্র কুরআনের আলোকে
আল্লাহ তায়ালা বলেন-
لَقَدْ جَاءَكُمْ رَسُولٌ مِّنْ اَنْفُسِكُمْ عَزِيْزٌ عَلَيْهِ مَا عَنِتُّمْ حَرِيْصٌ عَلَيْكُمْ بِالْمُؤْمِنِيْنَ رَءُوْفٌ رَّحِيْمٌ
অর্থাৎ “নিশ্চয়ই তোমাদের মধ্য থেকে একজন রাসূল তোমাদের কাছে এসেছেন… তিনি মুমিনদের প্রতি অত্যন্ত দয়ালু ও দয়ার্দ্র।”
(সূরা আত-তাওবা: ১২৮)
এই আয়াত মুমিন হৃদয়ে নবীপ্রেম জাগিয়ে তোলে এবং তাঁর নৈকট্যের দিকে আহ্বান করে।
সহীহ হাদীসের আলোকে
রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন-
مَنْ رَآنِي فِي الْمَنَامِ فَقَدْ رَآنِي، فَإِنَّ الشَّيْطَانَ لَا يَتَخَيَّلُ بِي
অর্থাৎ “যে আমাকে স্বপ্নে দেখেছে, সে আমাকে-ই দেখেছে; কারণ শয়তান আমার রূপ ধারণ করতে পারে না।”
(সহীহ বুখারি, হাদীস: ৬৯৯৪; সহীহ মুসলিম, হাদীস: ২২৬৬)
যেসব নেক আমলে নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর স্বপ্ন দর্শনের আশা করা যায়
১️/ অধিক পরিমাণে দরূদ ও সালাম পাঠ
إِنَّ أَوْلَى النَّاسِ بِي يَوْمَ الْقِيَامَةِ أَكْثَرُهُمْ عَلَيَّ صَلَاةً
অর্থাৎ “কিয়ামতের দিন আমার সবচেয়ে নিকটবর্তী হবে সে ব্যক্তি—যে সবচেয়ে বেশি আমার উপর দরূদ পাঠ করেছে।”
(জামে তিরমিযী: ৪৮৪)
প্রিয় নবীর স্মরণ যত অধিক হবে, নৈকট্য লাভের সম্ভবনা তত গভীর হবে—দুনিয়াতেও, আখিরাতেও।
২️/ পূর্ণভাবে সুন্নাহর অনুসরণ
আল্লাহ তায়ালা বলেন—
قُلْ إِنْ كُنْتُمْ تُحِبُّوْنَ اللّٰهَ فَاتَّبِعُوْنِيْ يُحْبِبْكُمُ اللّٰهُ
অর্থাৎ—
“তোমরা যদি আল্লাহকে ভালোবাসো, তবে রাসূলের অনুসরণ করো—আল্লাহও তোমাদের ভালোবাসবেন।”
(সূরা আলে ইমরান: ৩১)
সুন্নাহ মেনে জীবন গড়া মানেই আল্লাহ ও রাসূলের ভালোবাসার আলোয় হৃদয় আলোকিত করা।
৩️/ রাতের তহাজ্জুদ, কান্নাকাটি ও বিশেষ দুআ
وَمِنَ اللَّيْلِ فَتَهَجَّدْ بِهِ نَافِلَةً لَكَ
অর্থাৎ “আর রাতের কিছু সময় তুমি তার সাথে (আল্লাহর উদ্দেশ্যে) তহাজ্জুদ নামাজ পড়; এটি তোমার জন্য অতিরিক্ত নেকী।”
(সূরা বনী ইসরাঈল: ৭৯)
রাতের শেষ তৃতীয়াংশ—
দোয়া কবুলের সুবর্ণ সময়,
রুহানী নূরে হৃদয় স্নান করার মুহূর্ত।
৪️/ তাকওয়া অর্জন ও গুনাহ বর্জন
রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন—
إِذَا أَذْنَبَ الْعَبْدُ نُكِتَ فِي قَلْبِهِ نُكْتَةٌ سَوْدَاء
অর্থাৎ—
“বান্দা যখন গুনাহ করে, তার হৃদয়ে একটি কালো দাগ পড়ে।”
(জামে তিরমিযী-৩৩৩৪)
হৃদয় গুনাহের ঝংকার থেকে যত পবিত্র হবে, প্রিয় নবীর দর্শন লাভ তত সহজ হবে।
৫️/ যিকির, ইস্তিগফার ও সালাতুল-লায়েল
فَاذْكُرُونِي أَذْكُرْكُمْ
অর্থাৎ: “তোমরা আমাকে স্মরণ করো—আমি তোমাদের স্মরণ করব।”
(সূরা আল-বাকারা: ১৫২)
যার হৃদয়ে সর্বক্ষণ আল্লাহর স্মরণ থাকবে,
তার স্বপ্নে আল্লাহর রাসূলের চেহারা উদ্ভাসিত হতে থাকবে।
৬️/ রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর প্রতি বেদনার্ত ভালোবাসা
الْمَرْءُ مَعَ مَنْ أَحَبَّ
অর্থাৎ “মানুষ কিয়ামতের দিন তার সাথেই থাকবে—যাকে সে দুনিয়াতে ভালোবাসত।”
(বুখারি: ৬১৬৮)
দুনিয়ার প্রেম- ভালোবাসা
স্বপ্নে সাক্ষাতের সেতুবন্ধন।
রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে স্বপ্নযোগে দর্শনের বিশেষ প্রয়োজন হলো বেশি বেশি দোয়া করা।
দোয়া:
اللّٰهُمَّ ارْزُقْنِي رُؤْيَةَ نَبِيِّكَ مُحَمَّدٍ ﷺ فِي الْمَنَامِ
“হে আল্লাহ! আমাকে আপনার নবী মুহাম্মদসল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর স্বপ্ন দর্শনের তাওফীক দিন।”
আল্লাহ তায়ালা আমাদের সকলকে তাঁর প্রিয় নবীর সাক্ষাৎ লাভে ধন্য করুন।
লেখক: ফাযেল, দারুল উলুম দেওবন্দ, ইউ.পি., ইন্ডিয়া
এলএইস/