মঙ্গলবার, ১৫ জুলাই ২০২৫ ।। ৩০ আষাঢ় ১৪৩২ ।। ২০ মহর্‌রম ১৪৪৭

শিরোনাম :
নতুন বাংলাদেশ গঠনে ৭ দফা বাস্তবায়নের আহ্বান জামায়াত নেতা বুলবুলের ‘বিএনপি নেতার ঔদ্ধত্যপূর্ণ বক্তব্য সন্ত্রাস ও চাঁদাবাজকে আরও উস্কে দেবে’  ফিশিং ট্রলারসহ ৩৪ ভারতীয় জেলে আটক ‘জুলাইয়ে উলামায়ে কেরাম বুকের তাজা রক্ত দিয়ে হকের পথে ছিলেন’ রাষ্ট্রের টাকায় পশ্চিমা এজেন্ডা বাস্তবায়নে উপদেষ্টা শারমীন মুরশিদ: হেফাজত ৭ লাখ টাকা নেওয়ার ভিডিও ভাইরাল, যা বললেন এনসিপি নেতা ফেব্রুয়ারিতেই নির্বাচন হতে হবে : মির্জা ফখরুল  গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর ওপর ‘মহা বিপর্যয়’, ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যমের দাবি ইসলামি দলগুলোর ঐক্যচেষ্টায় পিআর কি বাধা হয়ে দাঁড়াবে? রাতে চরমোনাই যাচ্ছে এনসিপির কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দল

আল্লাহর দয়া ও তওবার বার্তা

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

শায়খ ড. বানদার বিন আবদুল আজিজ বালিলাহ

(শুক্রবার, ১৬-০১-১৪৪৭ হিজরি মোতাবেক ১১ জুলাই বাইতুল্লাহ শরীফে প্রদত্ত জুমার খুতবা)

আমি নিজেকে ও আপনাদেরকে আল্লাহর ভয় অবলম্বন করার উপদেশ দিচ্ছি। আল্লাহকে ভয় করুন ও তার  দয়ার আশা রাখুন। কোনো অবস্থায়ই আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হবেন না। কেননা মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
إِنَّ  اللَّهَ  عَزَّ  وَجَلَّ  يَبْسُطُ يَدَهُ  بِاللَّيْلِ  لِيَتُوبَ  مُسِيءُ  النَّهَارِ وَيَبْسُطُ يَدَهُ  بِالنَّهَارِ  لِيَتُوبَ  مُسِيءُ  اللَّيْلِ  حَتَّى  تَطْلُعَ  الشَّمْسُ  مِنْ  مَغْرِبِهَا
অর্থাৎ, 'নিশ্চয়ই আল্লাহ তাআলা রাতের বেলায় তাঁর হাত প্রসারিত করে যেন দিনের পাপী তওবা করে। আর দিনের বেলায় হাত প্রসারিত করে যেন রাতের পাপী তওবা করে। এভাবে চলতে থাকবে যতক্ষণ না সূর্য পশ্চিম দিক থেকে উদিত হয়।' (সহীহ মুসলিম, হাদিস: ৬৮৮২)

আল্লাহ তাআলা কামনা, বাসনা ও ঝোঁক-প্রবণতার স্বভাব-প্রবৃত্তি দিয়ে মানুষকে সৃষ্টি করেছেন— যা দ্বারা তিনি তাদেরকে তাঁর আদেশ-নিষেধ মানার পরীক্ষায় ফেলেছেন। এসবের মাধ্যমে পাপ ও ভুলভ্রান্তি করার সুযোগ রেখেছেন; যেন বোঝা যায় কে গোপনে আল্লাহকে ভয় করে। হযরত আনাস ইবনে মালিক রা. বলেন, আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, كلُّ ابن آدم خطَّاء، وخيرُ الخطَّائين التوَّابون
অর্থাৎ, 'আদম সন্তানের সবাই ভুল করে। তবে ভুলকারীদের মধ্যে উত্তম হলো যারা তাওবা করে।' (মুসনাদ আহমদ)

এ দ্বারা উদ্দেশ্য হলো, যেন গোনাহগাররা আল্লাহর দিকে ফিরে আসে, তওবাকারীরা তাঁর দিকে ধাবিত হয় ও অনুতপ্ত বান্দারা তাঁর সামনে নিজেকে সমর্পণ করে। হযরত আবু হুরায়রা রা. বলেন, আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম  বলেছেন,
وَالَّذِي نَفْسِي  بِيَدِهِ  لَوْ  لَمْ  تُذْنِبُوا  لَذَهَبَ  اللَّهُ بِكُمْ وَلَجَاءَ بِقَوْمٍ  يُذْنِبُونَ فَيَسْتَغْفِرُونَ  اللَّهَ فَيَغْفِرُ لَهُمْ
অর্থাৎ, 'সেই সত্তার কসম, যার হাতে আমার প্রাণ! যদি তোমরা কোনো গোনাহ না করতে, তবে আল্লাহ তোমাদেরকে সরিয়ে দিতেন। এরপর  এমন এক জাতিকে আনতেন যারা গোনাহ করত, তারপর আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইত, আর আল্লাহ তাঁদের ক্ষমা করে দিতেন।' (সহীহ মুসলিম, হাদিস: ৬৮৫৮)

আল্লাহর গুণাবলীর মধ্যে অন্যতম শ্রেষ্ঠ গুণ হলো দয়া। আল্লাহ তাআলা বলেন,
 وَرَحۡمَتِیۡ وَسِعَتۡ کُلَّ شَیۡءٍ ؕ  
অর্থাৎ, 'আমার রহমত সবকিছু পরিব্যাপ্ত করেছে।' (সূরা আরাফ, আয়াত: ১৫৬) মহান আল্লাহর সবচেয়ে গৌরবময় নামগুলোর দুটি হলো, রাহমান ও রাহীম— পরম করুণাময় ও অসীম দয়ালু। মহান আল্লাহ বলেন,
وَاِلٰـہُکُمۡ اِلٰہٌ وَّاحِدٌ ۚ  لَاۤ اِلٰہَ اِلَّا ہُوَ الرَّحۡمٰنُ الرَّحِیۡمُ
অর্থাৎ, 'আর তোমাদের ইলাহ এক ইলাহ, তিনি ব্যতীত অন্য কোন ইলাহ নেই। তিনি দয়াময়, পরম দয়ালু।' (সূরা বাকারা, আয়াত ১৬৩) তিনি তাঁর বান্দাদেরকে সৃষ্টি-জগতের প্রতি দয়া প্রদর্শনে উৎসাহ দিয়েছেন। হযরত উসামা ইবনে যায়েদ রা. বলেন, আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
وَإِنَّمَا  يَرْحَمُ  اللَّهُ  مِنْ عِبَادِهِ الرُّحَمَاءَ 
অর্থাৎ, 'আল্লাহ তাঁর সেই বান্দাদের প্রতিই দয়া করেন, যারা নিজেরাও দয়াশীল।' (সহিহ বুখারি, হাদিস: ১২৮৪) হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর রা. বলেন, আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
الراحمون يرحمهم الرحمن؛ ارحموا أهل الأرض يرحمكم أهل السماء
অর্থাৎ, 'দয়াশীলদের প্রতি করুণাময় আল্লাহ দয়া করেন। তোমরা পৃথিবীর লোকদের প্রতি দয়া করো, আকাশের অধিপতি আল্লাহ তোমাদের প্রতি দয়া করবেন।' (মুসনাদ আহমদ)

আল্লাহর বান্দাদের প্রতি তাঁর রহমতের নিদর্শন হচ্ছে, তিনি তাদের প্রতি কিতাব নাজিল করেছেন, রাসুল প্রেরণ করেছেন ও পাপের কারণে তাদেরকে তৎক্ষণাৎ শাস্তি দেননি। মহান আল্লাহ বলেন, وَلَوۡ یُؤَاخِذُ اللّٰہُ النَّاسَ بِمَا کَسَبُوۡا مَا تَرَکَ عَلٰی ظَہۡرِہَا مِنۡ دَآبَّۃٍ وَّلٰکِنۡ یُّؤَخِّرُہُمۡ اِلٰۤی اَجَلٍ مُّسَمًّی ۚ  
অর্থাৎ, 'আল্লাহ মানুষকে তাদের কৃতকর্মের জন্যে শাস্তি দিলে ভূপৃষ্ঠে কোন জীব- জন্তুকেই রেহাই দিতেন না, কিন্তু তিনি নির্দিষ্ট কাল পর্যন্ত তাদেরকে অবকাশ দিয়ে থাকেন।' (সূরা ফাতির, আয়াত ৪৫)

আল্লাহ তাঁর বান্দাদেরকে তওবার দিকে আহ্বান করেছেন। তিনি তাদেরকে ক্ষমার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ফিরে আসার আহ্বান জানিয়ে বলেন,
یٰعِبَادِیَ الَّذِیۡنَ اَسۡرَفُوۡا عَلٰۤی اَنۡفُسِہِمۡ لَا تَقۡنَطُوۡا مِنۡ رَّحۡمَۃِ اللّٰہِ ؕ اِنَّ اللّٰہَ یَغۡفِرُ الذُّنُوۡبَ جَمِیۡعًا ؕ اِنَّہٗ ہُوَ الۡغَفُوۡرُ الرَّحِیۡمُ 
অর্থাৎ, ‘হে আমার বান্দাগণ! তোমরা যারা নিজেদের প্রতি অবিচার করেছ-আল্লাহর অনুগ্রহ হতে নিরাশ হয়ো না; আল্লাহ সমুদয় পাপ ক্ষমা করে দেবেন। তিনি তো ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।’ (সূরা যুমার, আয়াত: ৫৩) তিনি প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন যে, যদি কেউ গোনাহ করে, তারপর তা স্মরণ করে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চায়, আর সেই গোনাহ থেকে বিরত থাকে, তাহলে তিনি তাঁর গোনাহ মাফ করে দেবেন, তার পাপরাশি দূর করবেন। আল্লাহ তাআলা বলেন,
وَالَّذِیۡنَ اِذَا فَعَلُوۡا فَاحِشَۃً اَوۡ ظَلَمُوۡۤا اَنۡفُسَہُمۡ ذَکَرُوا اللّٰہَ فَاسۡتَغۡفَرُوۡا لِذُنُوۡبِہِمۡ ۪ وَمَنۡ یَّغۡفِرُ الذُّنُوۡبَ اِلَّا اللّٰہُ ۪۟ وَلَمۡ یُصِرُّوۡا عَلٰی مَا فَعَلُوۡا وَہُمۡ یَعۡلَمُوۡنَ 
অর্থাৎ, 'আর যারা কোন অশ্লীল কাজ করে ফেললে বা নিজেদের প্রতি জুলুম করলে আল্লাহকে স্মরণ করে আর নিজেদের পাপের জন্যে ক্ষমা প্রার্থনা করে। আল্লাহ ব্যতীত কে পাপ ক্ষমা করবে? আর তারা যা করে ফেলে, জেনে-শুনে তার পুনরাবৃত্তি করে না।' (সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ১৩৫)

আল্লাহ তাআলা প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন— যারা গোনাহ থেকে ফিরে আসে, ঈমান আনে ও সৎকর্ম করে, তাঁদের গোনাহসমূহ তিনি নেকিতে রূপান্তর করবেন। মহান আল্লাহ বলেন,
اِلَّا مَنۡ تَابَ وَاٰمَنَ وَعَمِلَ عَمَلًا صَالِحًا فَاُولٰٓئِکَ یُبَدِّلُ اللّٰہُ سَیِّاٰتِہِمۡ حَسَنٰتٍ ؕ وَکَانَ اللّٰہُ غَفُوۡرًا رَّحِیۡمًا 
অর্থাৎ, 'তারা নয়, যারা তওবা করে, ঈমান আনে ও সৎকর্ম করে। আল্লাহ এদের পাপ পরিবর্তন করে দেবেন পুণ্য দিয়ে। আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।' (সূরা ফুরকান, আয়াত: ৭০)

আল্লাহ তাআলা তাঁর নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে নির্দেশ দিয়েছেন, 'মানুষের প্রতি কোমল হও, দয়া করো, তাদেরকে ক্ষমা করো ও হৃষ্টচিত্তে গ্রহণ করো। আল্লাহ তাআলা বলেন,
فَبِمَا رَحۡمَۃٍ مِّنَ اللّٰہِ لِنۡتَ لَہُمۡ ۚ وَلَوۡ کُنۡتَ فَظًّا غَلِیۡظَ الۡقَلۡبِ لَانۡفَضُّوۡا مِنۡ حَوۡلِکَ ۪ فَاعۡفُ عَنۡہُمۡ وَاسۡتَغۡفِرۡ لَہُمۡ وَشَاوِرۡہُمۡ فِی الۡاَمۡرِ ۚ فَاِذَا عَزَمۡتَ فَتَوَکَّلۡ عَلَی اللّٰہِ ؕ اِنَّ اللّٰہَ یُحِبُّ الۡمُتَوَکِّلِیۡنَ 
অর্থাৎ, 'আল্লাহর দয়ায় তুমি তাদের প্রতি কোমল-হৃদয় হয়েছিলে; যদি তুমি রূঢ় ও কঠোরচিত্ত হতে তবে তারা তোমার আশপাশ হতে সরে পড়ত। সুতরাং তুমি তাদের ক্ষমা কর ও তাদের জন্যে ক্ষমা প্রার্থনা কর। আর কাজেকর্মে তাদের সঙ্গে পরামর্শ কর, এরপর তুমি কোন সংকল্প করলে আল্লাহর ওপর নির্ভর করবে, যারা নির্ভর করে আল্লাহ তাদের ভালবাসেন।' (সূরা আলে ইমরান, আয়াত ১৫৯) 

বিশ্বনবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মমতা ও দরদ শুধু মুসলমানদের জন্য সীমাবদ্ধ ছিল না, বরং তিনি এমন মুশরিক শত্রুদের জন্যও চিন্তিত ছিলেন, যারা তাঁর দুশমন। কারণ তিনি জানতেন, তারা যদি ঈমান না আনে ও শিরকসহ মারা যায়, তাহলে তাদের জন্য ভয়াবহ আখিরাত অপেক্ষা করছে। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ বলেন,
فَلَعَلَّکَ بَاخِعٌ نَّفۡسَکَ عَلٰۤی اٰثَارِہِمۡ اِنۡ لَّمۡ یُؤۡمِنُوۡا بِہٰذَا الۡحَدِیۡثِ اَسَفًا 
অর্থাৎ, 'এরা এই বাণী বিশ্বাস না করলে সম্ভবত এদের পিছনে ঘুরে তুমি দুঃখে আত্মবিনাশী হয়ে পড়বে।' (সূরা কাহফ, আয়াত: ০৬) অন্যত্র আল্লাহ বলেন, لَعَلَّکَ بَاخِعٌ نَّفۡسَکَ اَلَّا یَکُوۡنُوۡا مُؤۡمِنِیۡنَ 
অর্থাৎ, 'এরা মুমিন হচ্ছে না বলে তুমি হয়ত মনোকষ্টে আত্মবিনাশী হয়ে পড়বে।' (সূরা শুআরা, আয়াত: ০৩) 

মহান আল্লাহ আরো বলেন, فَلَا تَذۡہَبۡ نَفۡسُکَ عَلَیۡہِمۡ حَسَرٰتٍ ؕ اِنَّ اللّٰہَ عَلِیۡمٌۢ بِمَا یَصۡنَعُوۡنَ 
অর্থাৎ, 'অতএব এদের জন্যে আক্ষেপ করে তোমার প্রাণ যেন ধ্বংস না হয়। এরা যা করে নিশ্চয়ই আল্লাহ তা জানেন।' (সূরা ফাতির, আয়াত: ০৮) মুফাসসিরগণ বলেন, 'এখানে বোঝানো হয়েছে, 'আপনি এত বেশি কষ্ট পাচ্ছেন যে, মনে হচ্ছে দুঃখে নিজেকে ধ্বংস করে ফেলবেন।'

হে আল্লাহর বান্দারা! আল্লাহর কসম করে বলছি— মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মতো আপনারাও আল্লাহর বান্দাদের প্রতি কোমলতা, ভালবাসা, সহানুভূতি ও দয়া প্রদর্শন করুন। হযরত আবু হুরায়রা রা. বলেন, একদা জনৈক বেদুঈন দাঁড়িয়ে মসজিদে পেশাব করল। তখন লোকেরা তাকে বাধা দিতে গেলে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের বললেন, 
دَعُوهُ  وَهَرِيقُوا  عَلَى  بَوْلِهِ  سَجْلاً   مِنْ   مَاءٍ،  أَوْ  ذَنُوبًا  مِنْ   مَاءٍ،  فَإِنَّمَا  بُعِثْتُمْ  مُيَسِّرِينَ،  وَلَمْ  تُبْعَثُوا  مُعَسِّرِينَ
অর্থাৎ, 'তোমরা তাকে ছেড়ে দাও এবং ওর পেশাবের উপর এক বালতি পানি ঢেলে দাও। কারণ তোমাদেরকে কোমল ও সুন্দর আচরণ করার জন্য পাঠানো হয়েছে, রূঢ় আচরণ করার জন্য পাঠানো হয়নি।' (সহিহ বুখারী, হাদিস: ২২০) হযরত আবু মুসা রা. যখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর কোনো সাহাবিকে কোনো দাওয়াতি বা প্রশাসনিক কাজে পাঠাতেন তখন বলতেন,
بَشِّرُوا وَلاَ  تُنَفِّرُوا وَيَسِّرُوا وَلاَ تُعَسِّرُوا 
অর্থাৎ, 'তোমরা সুসংবাদ দাও, ভয় দেখিও না। সহজ করে দাও, কঠিন করো না।' (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ৪৪১৭)

একজন মুমিন যেন কখনও আল্লাহর পথের বাঁধা হয়ে না দাঁড়ায়। সে যেন এমন কিছু না করে বা না বলে, যা মানুষকে আল্লাহর দ্বীন থেকে বিমুখ করে। সে যেন আল্লাহর পথে ফিরে আসার রাস্তায় বাধা না হয়ে দাঁড়ায় — এমনকি সে নিজেও বুঝতে না পারে যে, সে কী করছে। কারণ, মানুষের হৃদয় আল্লাহর হাতে, তিনিই জানেন, কার অন্তরে কতটুকু ঈমান, কতটুকু বিশ্বাস, কতটুকু সত্যতা ও আল্লাহর প্রতি ভালোবাসা আছে— যদিও সে পাপ করেছে কিংবা গোনাহে লিপ্ত আছে। কখনও কখনও দ্বীনের প্রতি প্রবল আগ্রহ ও হালাল-হারামের ব্যাপারে ঈমানদারদের উগ্র প্রতিক্রিয়া দেখা যায়। যদি তারা কোনো অন্যায় বা গোনাহ দেখে তখন সীমা অতিক্রম করে ফেলে। সাধারণভাবে অন্যায়ের প্রতিবাদ না করে, বরং বর্ণনা, ভাষা বা আচরণে এমন মাত্রায় চলে যায় যা আল্লাহর একমাত্র অধিকার— যা কেবল তাঁরই জন্য সংরক্ষিত, অন্য কারো জন্য নয়।

আল্লাহর কসম করে বলছি! এটা বড় ভুল, খুবই ভয়ংকর পথচ্যুতি। যামযাম ইবনে জাওস রহ. বলেন, হযরত আবু হুরায়রা রা. আমাকে বললেন, 'হে ইয়ামামি ভাই, তুমি কখনো কোনো মানুষকে এ কথা বলো না, ‘আল্লাহ তোমাকে ক্ষমা করবেন না’ অথবা ‘আল্লাহ তোমাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন না।’ আমি বললাম, 'হে আবু হুরায়রা! আমরা তো রাগের মাথায় বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে রাগ করে এমন কথা বলে ফেলি।' আবু হুরায়রা বললেন, 'তোমরা এটা বলো না। কারণ আমি নিজ কানে নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, 'বনি ইসরাইলের দুইজন লোক ছিল। একজন ছিল খুব ইবাদতগুজার, আর অন্যজন ছিল বড় গোনাহগার। তারা একে অপরের বন্ধু ছিল। ইবাদতগোজার ব্যক্তি সবসময় গোনাহগারকে উপদেশ দিয়ে বলত, ‘হে ভাই, এসব গোনাহ ছেড়ে দাও!’ গোনাহগার বলত, ‘আল্লাহর কসম! আমাকে আমার মতো থাকতে দাও, তুমি কি আমার ওপর প্রহরী হয়ে এসেছো?’ একদিন সেই ইবাদতগোজার ব্যক্তি তাকে এক পাপ করতে দেখে খুব বিরক্ত হয়ে বলল, ‘আহা! থেমে যাও! এসব ছেড়ে দাও।’ সে আবারো বলল, ‘রবের কসম! আমাকে আমার মতো থাকতে দাও। তুমি কি আমার ওপর নিয়োজিত হয়েছো?’ তখন ইবাদতগোজার বলেই ফেলল, ‘আল্লাহর কসম! আল্লাহ তোমাকে কখনোই ক্ষমা করবেন না, বা তোমাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন না।’ আল্লাহ তখন দুজনের জন্য একজন ফেরেশতা পাঠালেন।ফেরেশতা তাদের উভয়ের জান কবজ করলেন। তারপর উভয়কে আল্লাহর দরবারে একত্র করা হলো। আল্লাহ গোনাহগারকে বললেন, ‘তুমি আমার রহমতে জান্নাতে চলে যাও।’ আর সেই ইবাদতগোজারকে বললেন, ‘তুমি কি জানো আমি কী করবো? তুমি কি আমার হাতে যা আছে তা নিয়ন্ত্রণ করো? তুমি কি আমার ওপর ক্ষমতাবান ছিলে?’ তারপর আল্লাহ বললেন, ‘তাকে নিয়ে যাও, জাহান্নামে নিক্ষেপ করো।’ আবু হুরায়রা বলেন, 'সেই ব্যক্তি একটা মাত্র কথা বলেছিল, যে কথাটি তার দুনিয়া ও আখিরাতও বরবাদ করে দিল।'  (মুসনাদে আহমদ) 

তাই হে আল্লাহর বান্দারা! মনে রেখো! পাপকে ঘৃণা করা ও অন্যায়কে প্রতিহত করার সঙ্গে পাপীর প্রতি দয়া ও সহানুভূতি রাখায় কোনো বিরোধ নেই। বরং এ দুটি একসাথে থাকা ঈমানে পূর্ণতার প্রমাণ।

অনুবাদ: আবদুল কাইয়ুম শেখ 
মুহাদ্দিস, জামিয়া ইসলামিয়া ইসলামবাগ, পোস্তা, চকবাজার, ঢাকা-১২১১

এমএইচ/


সম্পর্কিত খবর

সর্বশেষ সংবাদ