মানুষের জীবনে ভ্রমণ একটি স্বাভাবিক ও প্রয়োজনীয় বিষয়। জীবিকার তাগিদে, চিকিৎসা, শিক্ষালাভ কিংবা আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে সময় কাটাতে আমাদের অনেক সময়ই দূরবর্তী স্থানে যেতে হয়। ইসলামে এ ধরনের ভ্রমণকারীকে বলা হয় "মুসাফির"।
শরিয়তের দৃষ্টিতে নির্দিষ্ট দূরত্বে সফরকারী ব্যক্তি বিশেষ কিছু ছাড় বা ‘রুখসত’ লাভ করেন, যাতে তিনি সহজে ইবাদত আদায় করতে পারেন এবং আল্লাহর উপর নির্ভরতা আরও গভীর হয়। এটি ইসলামের পক্ষ থেকে মুসাফিরদের জন্য এক বিশেষ অনুগ্রহ।
কে মুসাফির হবেন?
ইসলামি শরিয়তের পরিভাষায়, মুসাফির হলেন সেই ব্যক্তি, যিনি নিজ অবস্থানের বাড়ি বা স্থায়ী আবাসস্থান থেকে অন্তত ৪৮ মাইল দূরত্বে সফরের নিয়তে বের হন এবং গন্তব্যস্থলে ১৫ দিনের কম সময় অবস্থান করার নিয়ত করেন।
রাসুলুল্লাহ (সা.) হাদিসে ইরশাদ করেছেন, “যদি কেউ তিন দিনের পথ সফর করে, সে মুসাফির এবং নামাজ কসর করবে।” (সহিহ বুখারি, হাদিস: ১০৯০) সেই সময়ে ৩ দিনে সাধারণত ৪৮ মাইল সফর করা সম্ভব হত।
ইসলাম সফরকারী মুমিনের ইবাদত সহজ করার লক্ষ্যে কিছু বিশেষ সুযোগ দিয়েছে।
নামাজে কসর: মুসাফির ব্যক্তি চার রাকাত বিশিষ্ট ফরজ নামাজ (জোহর, আসর, ইশা) কসর করে দুই রাকাত আদায় করবেন। হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, “আল্লাহ মুসাফিরের জন্য নামাজ অর্ধেক করে দিয়েছেন।” (সুনানে নাসাঈ, হাদিস: ১৪৫৮)
রোজার অবকাশ: সফরে রমজানের রোজা রাখা কষ্ট হলে না রাখার সুযোগ রয়েছে। তবে পরে কাজা করে নিতে হবে। কুরআনে এসেছে “যে অসুস্থ বা সফরে থাকে, সে পরবর্তীতে রোজা পূরণ করুক।” (সুরা বাকারা, আয়াত: ১৮৫)
মুসাফিরের জামাআতে নামায আদায়ের নিয়ম: মুসাফির যদি মুকিম ইমামের পেছনে নামাজ আদায় করেন, তবে পূর্ণ পড়তে হবে; একা পড়লে কসর প্রযোজ্য।
এছাড়া রাসুল সা. সফরের দোয়া শিখিয়েছেন। সফরে বের হওয়ার সময় প্রিয় নবী (সা.) একটি বিশেষ দোয়া পাঠ করতেন, যা আজও মুসাফিরদের জন্য হেফাজত, বরকত ও কল্যাণের কারণ। দোয়া:
اللَّهُمَّ أَنْتَ الصَّاحِبُ فِي السَّفَرِ، وَالْخَلِيفَةُ فِي الأَهْلِ، اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنْ وَعْثَاءِ السَّفَرِ، وَكَآبَةِ الْمَنْظَرِ، وَسُوءِ الْمُنْقَلَبِ فِي الْمَالِ وَالأَهْلِ
অর্থ: “হে আল্লাহ! তুমি সফরে আমার সঙ্গী এবং পরিবারে আমার প্রতিনিধি। হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে আশ্রয় চাই সফরের কষ্ট, দুঃখজনক দৃশ্য এবং সম্পদ ও পরিবারের ক্ষতির কবল থেকে।” (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ১৩৪২)
এমএইচ/