ইসলামের তৃতীয় শতাব্দীতে হাদীসের অসংখ্য গ্রন্থ রচিত হয়। এসব গ্রন্থের মধ্য থেকে ছয়টি গ্রন্থ বিশুদ্ধতার মানদণ্ডে বিশেষভাবে স্বীকৃতি পায়। এই ছয়টি গ্রন্থকে “কুতুবে সিত্তাহ” বলা হয়। এর মধ্যে সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিম সম্পূর্ণভাবে সহীহ হিসেবে গণ্য হয়। তবে সুনানে তিরমিযী, সুনানে ইবনে মাজাহ, সুনানে আবূ দাঊদ এবং সুনানে নাসাঈ বিশুদ্ধতার দিক থেকে মূল্যায়িত হলেও, বুখারী ও মুসলিমের তুলনায় কিছুটা নিম্নস্তরে বিবেচিত হয়।
সুনানে নাসাঈ কুতুবে সিত্তার অন্তর্ভুক্ত একটি গুরুত্বপূর্ণ হাদীস গ্রন্থ। ইমাম নাসাঈ হাদীস নির্বাচন ও বর্ণনার ক্ষেত্রে অত্যন্ত যত্নবান ছিলেন। অনেক ইমামের মতে, সুনানে নাসাঈ সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিমের পরের অবস্থানে রয়েছে।
এ বিষয়ে আবু যাহু বলেছেন, ودرجته في الحديث بعد الصحيحين فهو مقدم على سنن أبي داود وسنن الترمذي
অর্থাৎ, হাদীসশাস্ত্রে সুনানে নাসাঈর অবস্থান সহীহ বুখারী ও মুসলিমের পর এবং এটি সুনানে আবু দাঊদ ও সুনানে তিরমিযীর থেকে অগ্রগণ্য।
ড. তাকীউদ্দীন নাদভী বলেন, إن سنن النسائي ثالث الستة عند العلامة الكشميري
অর্থাৎ, আল্লামা আনোয়ার শাহ কাশ্মীরী ও হাযেমীর মতে, কুতুবে সিত্তাহর মধ্যে সুনানে নাসাঈ-এর স্থান তৃতীয়।
সুনানে নাসাঈর গুরুত্ব
সুনানে নাসাঈ যুগ যুগ ধরে ওলামায়ে কেরাম ও ত্বলাবার জন্য উপকারী ভূমিকা পালন করে আসছে। পূর্ববর্তী আলেমগণ এর উপর বিস্তারিত ব্যাখ্যাগ্রন্থ রচনা করেছেন। তবে বাংলা ভাষায় সুনানে নাসাঈর গ্রহণযোগ্য ব্যাখ্যাগ্রন্থ এতদিন ছিল না।
এই অভাব পূরণে শাইখুল হাদিস মুফতি আল আমিন নূরী বাংলা ভাষায় “আল ফয়জুস সামাঈ: শারহু সুনানিন নাসাঈ”-নামে একটি অনবদ্য ব্যাখ্যাগ্রন্থ রচনা করেছেন। এ গ্রন্থটি খ্যাতিমান হাদীস বিশারদ আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী রহ.-এর তত্ত্বাবধানে রচিত হয়েছে এবং এটি পাঁচ খণ্ডে প্রকাশিত হয়েছে।
ব্যাখ্যাকার মুফতি আল আমিন নূরী বলেন, গ্রন্থটিতে সকল স্তরের শিক্ষার্থীদের জন্য হরকতসহ হাদীস, তার অনুবাদ ও ব্যাখ্যা অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এতে ফিকহি ইখতিলাফসমূহ আলাদাভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। পাশাপাশি তাকমিল (দাওরায়ে হাদীস) জামাতের বোর্ড পরীক্ষার প্রশ্নোত্তর সন্নিবেশিত হয়েছে, যাতে জাতীয় পরীক্ষায় ভালো ফলাফল অর্জন করা সম্ভব হয়। এছাড়া হাদীসের তাখরিজ ও মান নির্ণয় করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, আল ফয়জুস সামাঈ-তে হাদীসের তাখরিজ, মান নির্ণয়, শব্দার্থ, তাহকিক ও শব্দগত পার্থক্য স্পষ্টভাবে তুলে ধরা হয়েছে। কুরআন ও হাদীসের বিষয়বস্তু আধুনিক বিজ্ঞানের আলোকে ব্যাখ্যা করা হয়েছে এবং হাদীস বর্ণনাকারীদের সংক্ষিপ্ত জীবনীও যুক্ত করা হয়েছে। এছাড়াও শরঈ ওজনের আধুনিক পরিমাণ সুন্দরভাবে বর্ণনা করা হয়েছে।
শেষে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন, এই গ্রন্থটি সুনানে নাসাঈ-এর বিশুদ্ধ ব্যাখ্যা হিসেবে বাংলা ভাষাভাষী মুসলমানদের জন্য অত্যন্ত উপকারী ভূমিকা পালন করবে।
এমএইচ/