বৃহস্পতিবার, ০৮ মে ২০২৫ ।। ২৫ বৈশাখ ১৪৩২ ।। ১০ জিলকদ ১৪৪৬

শিরোনাম :
নারী কমিশন বাতিল না করা সরকারের জন্য অমঙ্গলজনক: খেলাফত মজলিস মসজিদ-মাদরাসায় হামলা ভারতের আগ্রাসী মনোভাবের প্রতিফলন: খেলাফত মজলিস ভারতীয় মুসলিম নেতারা হিন্দুত্ববাদী প্রকল্পের আস্থা অর্জন করতে পারবেন কি? ‘আল্লামা সুলতান যওক নদভীর স্মৃতি নতুন প্রজন্মকে আলোকিত করবে’ পাক-ভারত যুদ্ধ : ঈমানের লড়াই না ভূখণ্ডের দ্বন্দ্ব? ‘নারী কমিশন ইস্যুতে বিতর্ক জিইয়ে রাখা সরকারের উচিত হচ্ছে না’ ভারত-পাকিস্তান সংঘাত – শান্তির শেষ সুযোগ কি ইসলামাবাদের হাতে? পাকিস্তানে নয়, মোদি নিজের ওপরই হামলাটা করলেন নতুন আমিরে গতি ফিরেছে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসে! দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শহীদ একজন সিলেটী 

নতুন আমিরে গতি ফিরেছে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসে!

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

বিশেষ প্রতিনিধি

গত শতাব্দীর আশির দশকের গোড়ার দিকে যাত্রা করা বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস নব্বইয়ের দশক পুরোটাজুড়েই ইসলামি অঙ্গনে বেশ দাপটের সঙ্গে এগিয়ে গেছে। এর বড় কারণ হলো, তখন সংগঠনটির নেতৃত্বে ছিলেন শায়খুল হাদিস আল্লামা আজিজুল হক। দেশের অন্যতম শীর্ষ আলেম এবং সর্বমহলে স্বীকৃত হওয়ার কারণে শায়খুল হাদিসের নেতৃত্বাধীন সংগঠনও গুরুত্ব পায়। ইসলামি ঐক্যজোট থেকে শুরু করে চারদলীয় জোট পর্যন্ত সবখানেই সংগঠনটি আলোচিত ও নেতৃত্বে ছিল। নতুন শতাব্দীর শুরুর কয়েকটা বছরও সংগঠনটির কার্যক্রম বেশ গতিশীল ছিল। একটা সময় ইসলামি দলগুলোর মধ্যে জামায়াতে ইসলামীর পর সুশৃঙ্খল ও সম্ভাবনাময় দল হিসেবে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসকে গণ্য করা হতো।

তবে অভ্যন্তরীণ বিরোধের জেরে ২০০৫ সালে মজলিস ভেঙে দুই টুকরো হয়ে যাওয়ার পর সম্ভাবনাময় এই সংগঠনটি হোঁচট খায়। বিভাজিত সংগঠন নিয়ে কাজ করাও ছিল সংশ্লিষ্টদের জন্য বিব্রতকর। তবে এক-এগারোর পর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় সংগঠনটির দুটি ভাগ দুই নামে নিবন্ধন পায়। একটি বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, আরেকটি শুধু খেলাফত মজলিস। দুই নামে দুই মজলিস কাজ করে যায়। তবে দুই মজলিসের মধ্যে সুস্পষ্ট একটা পার্থক্য ছিল। সেটা হলো বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের কার্যক্রমের মূল ফোকাস ছিল মাদরাসাগুলো। এর সঙ্গে আলেম-উলামা ও মাদরাসাপড়ুয়াদের সম্পৃক্ততাই বেশি লক্ষ্য করা যায়। অপর দিকে খেলাফত মজলিসে আলেম-উলামার সংখ্যা কম হলেও সাধারণ শিক্ষিত মানুষের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো।

শায়খুল হাদিস পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের নেতৃত্ব দিয়েছেন সিলেটের প্রিন্সিপাল মাওলানা হাবীবুর রহমান। তিনি বেশ আলোচিত ইসলামি নেতা হওয়ায় সংগঠনটি নানা সময় আলোচনায় এসছে। তবে তিনি সিলেটে অবস্থানের কারণে পুরো সময় সংগঠনে দিতে পারেননি। ২০১৮ সালে তিনি ইন্তেকাল করলে সংগঠনের আমির হন মাওলানা ইসমাঈল নূরপুরী। তবে এতটা পরিচিত মুখ না হওয়ায় আলোচিত সংগঠনটি অনেকটা আড়ালেই থেকে যাচ্ছিল। তাছাড়া তিনি বয়োবৃদ্ধ এবং নরসিংদীতে অবস্থানের কারণে সংগঠনের কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছিল। যদিও তার মেয়াদের শেষ দিকে মহাসচিব হিসেবে দায়িত্ব নেন মাওলানা মামুনুল হক। এতে মহাসচিবের নামে সংগঠন নানাভাবে আলোচিত হতে থাকে। এক পর্যায়ে মাওলানা মামুনুল হক কারাগারে থাকায় সংগঠনেও কিছুটা স্থবিরতা চলে আসে।

প্রায় তিন বছর কারাভোগ শেষে ২০২৪ সালের মে মাসে মাওলানা মামুনুল হক কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়ার পর দেশজুড়ে তাঁর ব্যাপক গ্রহণযোগ্যতা জনপ্রিয়তা ও চাহিদার সৃষ্টি হয়। মহাসচিবের এই খ্যাতির সুবিধাটি পুরোই ভোগ করে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস। তবে সংগঠনটি নতুন গতি পায় গত জানুয়ারিতে যখন মাওলানা মামুনুল হক দলটির আমির হন। সংগঠনের চেয়ে ব্যক্তি মাওলানা মামুনুল হকের পরিচিতি ও জনপ্রিয়তা ব্যাপক হওয়ায় এর পুরো সুবিধা ভোগ করে সংগঠন।

মাওলানা মামুনুল হক আমির হওয়ার পর থেকে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসে একটা চাঙা ভাব লক্ষ্য করা যাচ্ছে। গত প্রায় চার মাসে তিনি দেশের বিভিন্ন স্থানে গিয়েছেন ব্যক্তিগত কিংবা সাংগঠনিক কাজে। সবখানেই ব্যাপক জনসমাগত হচ্ছে। সম্প্রতি উত্তরবঙ্গে সিরাজগঞ্জ, রংপুরসহ কয়েকটি জেলায় মাওলানা মামুনুল হকের উপস্থিতিতে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের সমাবেশ হয়েছে। সেখানে জনগণের স্বতস্ফূর্ত উপস্থিতি দেখে সহজেই অনুমান করা গেছে, ব্যক্তি মামুনুল হকের কারণে জনপ্রিয়তা বেড়েছে তাঁর সংগঠনেরও। সংগঠনের ব্যানারে আয়োজিত সমাবেশেও লাখো মানুষের উপস্থিতি চোখে পড়েছে। সবাই সংগঠন না করুক কিংবা মাওলানা মামুনুল হককে একনজর দেখতে আসুক, সর্বক্ষেত্রেই সংগঠন এর দ্বারা উপকৃত হচ্ছে। এভাবে ব্যক্তির জনপ্রিয়তা দ্বারা তৃণমূল পর্যায়ে সংগঠনকে পরিচিত করাতে পারলে সুফল আসবে বলেই মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের নেতাকর্মীরা বলছেন, তারা যোগ্য আমির পেয়েছেন। এই আমিরের নেতৃত্বে তাদের দল যেকোনো সময়ের তুলনায় বেশি গতিশীল হচ্ছে। এই গতিশীলতা ধরে রাখতে পারলে আগামী দিনে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস একটি ভালো অবস্থানে পৌঁছতে পারবে বলে মনে করছেন তারা।

তবে দলের কারও কারও বক্তব্য হলো, এভাবে এক নেতানির্ভর হয়ে পড়া দলের ভবিষ্যতের জন্য ভালো নয়। কোনো কারণে সেই নেতা না থাকলে দলকে হোঁচট খেতে হয়। এজন্য সবসময় নেতৃত্বে ভারসাম্য আনা এবং বিকল্প নেতৃত্ব গড়ে তোলা জরুরি।

দলের আরেকটি দুর্বলতার কথাও কেউ কেউ তুলেছেন। সেটা হলো, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের প্রচার বিভাগ দুর্বল। এই সংগঠনের কার্যক্রম সম্পর্কে জনসাধারণকে জানানোর পর্যাপ্ত ব্যবস্থাপনা নেই। আমির মাওলানা মামুনুল হক ব্যক্তিগতভাবে জনপ্রিয় হওয়ায় এবং তাঁর ভালো কাটতি থাকায় মিডিয়া নিজ গরজে কাভারেজ দেয়। সেখানে দলের চেয়ে ব্যক্তি বেশি কাভারেজ পান। দলকেও মিডিয়া কাভারেজে আনতে পারলে দল উপকৃত হবে এবং সংগঠনের সঙ্গে তৃণমূলের সম্পকৃত্ততা আরও বাড়ছে।

মাওলানা মামুনুল হক আমির হওয়ার পর দলে গতি এসেছে বলে মনে করেন সংগঠনের মহাসচিব মাওলানা জালালুদ্দীনও। তিনি আওয়ার ইসলামকে বলেন, মাওলানা মামুনুল হক ইসলাম ও দেশের জন্য যে কুরবানি দিয়েছেন, তার জন্য আল্লাহ তায়ালা তাঁর গ্রহণযোগ্যতাকে সারাদেশে অতীতের যেকোনো সময়ের তুলনায়, যেকোনো ব্যক্তির চেয়ে অনেক বেশি বাড়িয়ে দিয়েছেন। আমরা মনে করি, তাঁর এই গ্রহণযোগ্যতাকে আমরা ইতিবাচকভাবে দলের কাজে লাগাতে পারছি এবং আগামীতেও তা করতে সক্ষম হব ইনশাআল্লাহ।

দলের প্রচার সেলের দুর্বলতার কথা মহাসচিবও স্বীকার করেন। মাওলানা জালালুদ্দীন বলেন, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মিডিয়া সেল যতটা শক্তিশালী হওয়া প্রয়োজন ছিল, ততটা এখনও নয়। আমি ইতোমধ্যে দলের প্রচার বিভাগের দায়িত্বশীলদের সঙ্গে আলোচনা করেছি। কীভাবে মিডিয়া সেলকে আরও কার্যকর ও শক্তিশালী করা যায়, সেই সঙ্গে সাংবাদিকদের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে আমরা শিগগিরই উদ্যোগ গ্রহণ করব ইনশাআল্লাহ।

আমিরে মজলিসের সঙ্গে তৃণমূলের নেতাকর্মীদের যোগসূত্রতা আরও বাড়ানো প্রসঙ্গে মাওলানা জালালুদ্দীন আওয়ার ইসলামকে বলেন, আমাদের আমিরে মজলিস মাওলানা মামুনুল হক অত্যন্ত ব্যস্ত একজন মানুষ। তিনি জামিয়া রাহমানিয়ায় ক্লাস শেষ করে প্রতিদিন সেখানে সময় দেন। পাশাপাশি দলের অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়মিত কথা বলেন, প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেন। এত ব্যস্ততার মাঝেও তিনি নিয়মিতভাবে দলের অফিসে আসেন এবং সময় দেন। আমরা মনে করি, যদি তিনি আরও কিছুটা সময় নেতাকর্মীদের মাঝে দিতে পারেন, তাহলে দল আরও চাঙা ও গতিশীল হয়ে উঠবে।

এনএইচ/


সম্পর্কিত খবর

সর্বশেষ সংবাদ