বুধবার, ২৫ জুন ২০২৫ ।। ১১ আষাঢ় ১৪৩২ ।। ২৯ জিলহজ ১৪৪৬


২৮ জুন শক্তির জানান দিতে চায় ইসলামী আন্দোলন

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

|| বিশেষ প্রতিনিধি ||

ইসলামি দলগুলোর মধ্যে জামায়াতে ইসলামীর পরে দেশজুড়ে সাংগঠনিক কার্যক্রমে এগিয়ে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। দেশের সিংহভাগ এলাকায় সংগঠনটির কার্যক্রম বিস্তৃত। গত এক দেড় দশকে দলটি নিরবচ্ছিন্ন কাজের মাধ্যমে তৃণমূল পর্যন্ত পৌঁছে গেছে। 

আওয়ামী লীগ টানা ১৫ বছর ক্ষমতায় থাকাকালে জাতীয় নির্বাচনে তেমন সুবিধা করতে না পারলেও বেশ কিছু স্থানীয় সরকার নির্বাচনে ‘চমক’ দেখিয়েছে ইসলামী আন্দোলন। এবার ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চমক দেখাতে চায় দলটি। এজন দেশব্যাপী জোরেশোরে চলছে দলটির কার্যক্রম। 

এর অংশ হিসেবে আগামী ২৮ জুন তিন দফা দাবিতে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মহাসমাবেশ ডেকেছে ইসলামী আন্দোলন। 

তাদের তিন দফার মধ্যে রয়েছে রাষ্ট্রের মৌলিক ও প্রয়োজনীয় সংস্কার, পতিত ফ্যাসিবাদের বিচার এবং পিআর পদ্ধতিতে সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন। দাবি তিনটি সর্বস্তরে পৌঁছে দিতে এবং জোরালো করতে দিন-রাত কাজ করছেন ইসলামী আন্দোলনের নেতারা। 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নির্বাচনকে সামনে রেখে মূলত ইসলামী আন্দোলন এই মহাসমাবেশের মাধ্যমে নিজেদের শক্তির জানান দিতে চায়। দলটি এর আগেও বিভিন্ন সময় রাজধানীতে বিশাল মহাসমাবেশ করেছে। সেখানে সারা দেশ থেকে আগত বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী দৃষ্টিও কেড়েছে। তবে এবার নির্বাচনী আবহের মধ্যে নিজের পুরো শক্তির জানান দেওয়াই দলটির প্রধান উদ্দেশ্য। 

ইসলামি দলগুলোর বৃহৎ ঐক্য প্রতিষ্ঠার একটি আলোচনা অনেক দিন ধরেই চলছে। ইসলামী আন্দোলন এই ঐক্য প্রচেষ্টায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। দলটি চাচ্ছে, যেকোনো মূল্যে ইসলামি দলগুলোর ভোট যেন একবাক্সে পড়ে। জামায়াতে ইসলামীসহ অন্য দলের সঙ্গে ইসলামী দলের আলোচনা অব্যাহত আছে। ২৮ জুনের মহাসমাবেশ থেকে নির্বাচনী সমঝোতার ব্যাপারে বড় ঘোষণা আসতে পারে বলে আভাস পাওয়া যাচ্ছে।  

এদিকে শেষ পর্যন্ত ইসলামি দলগুলোর নির্বাচনী সমঝোতা শেষ পর্যন্ত নাও হতে পারে-এমন একটা আশঙ্কাও কাজ করছে। ফলে ইসলামী আন্দোলন এককভাবে নির্বাচনের প্রস্তুতিও নিচ্ছে। ইতোমধ্যে দেশের বিভিন্ন এলাকায় নিজেদের প্রার্থী ঘোষণা করেছে দলটি। ২৮ জুনের মহাসমাবেশে আগামী নির্বাচনকেন্দ্রিক নেতাকর্মীদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা থাকবে বলে জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় নেতারা। 

তিন দফা দাবিতে মহাসমাবেশ ডাকা হলেও ইসলামী আন্দোলন বেশি জোর দিচ্ছে পিআর বা আনুপাতিক হারে নির্বাচনের ওপর। দলটি শুরু থেকেই এই ইস্যুটি গুরুত্ব দিচ্ছে। জামায়াতে ইসলামীসহ আরও কিছু দলও পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচনের পক্ষে। তবে মাঠে সক্রিয় সবচেয়ে বড় দল বিএনপি এই পদ্ধতির ঘোর বিরোধী। দলটি মনে করে, এই পদ্ধতির নির্বাচন হলে তাদের আসন সংখ্যা কমে যাবে। যদিও রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, এই পদ্ধতির নির্বাচন হলে জনগণের প্রকৃত প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত হয় এবং সংসদে ছোট দলগুলোর প্রতিনিধিত্বও নিশ্চিত হয়। 

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ২৮ জুনের মহাসমাবেশে ব্যাপক জনসমাগম ঘটাতে চায় রাজধানীতে। এজন্য দলটির পুরো জনশক্তি সারাদেশে কাজ করছে। দেশের বিভিন্ন এলাকায় জনসাধারণকে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে এই মহাসমাবেশে যোগ দিতে। অনেকেই আগামী শনিবার রাজধানীতে আসার ব্যাপারে নিজেদের প্রস্তুতিও সেরেছেন। দলীয় এবং ব্যক্তিগত উদ্যোগে সেদিন লাখো মানুষের ঢল নাম সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে। 

২৮ জুন রাজধানীতে গণজোয়ারের আশা করছেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মহাসচিব  অধ্যক্ষ হাফেজ মাওলানা ইউনুস আহমদ। তিনি মঙ্গলবার (২৪ জুন) দলীয় একটি অনুষ্ঠানে বলেন, ন্যায়ভিত্তিক রাজনীতি ও পিআর (প্রোপোরশনাল রিপ্রেজেন্টেশন) পদ্ধতির পক্ষে দেশের জনগণের ব্যাপক গণজোয়ার সৃষ্টি হবে। 

ইসলামী আন্দোলনের মহাসচিব বলেন, ২৪ সালের জুলাই অভ্যুত্থানের মূল আকাঙ্ক্ষাই ছিল দেশকে স্বৈরতন্ত্রের কবল থেকে রক্ষা করা। কিন্তু দুঃখজনকভাবে এখনো এমন কোনো আইনি ও রাজনৈতিক কাঠামো গড়ে তোলা যায়নি, যা স্বৈরতন্ত্রকে প্রতিরোধ করতে পারে। দেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য, স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় যে ভিত্তি প্রয়োজন ছিল, তা এখনও প্রতিষ্ঠিত হয়নি। এসব বাস্তবতার পরিপ্রেক্ষিতে আগামী ২৮ জুন ঢাকায় লাখো মানুষের উপস্থিতি হবে সংস্কারের দাবিতে আরেকটি গণজোয়ারের প্রতিফলন। তিনি আশা প্রকাশ করেন, পিআর পদ্ধতির পক্ষে দেশের রাজনৈতিক দলসমূহ ও জনগণের ঐক্য সেদিন সুস্পষ্টভাবে দৃশ্যমান হবে।

বর্তমান নির্বাচনব্যবস্থা নিয়ে সমালোচনা করে তিনি বলেন, বর্তমান ব্যবস্থায় সংখ্যালঘুরা সংখ্যাগুরুদের ওপর শাসনের সুযোগ পায়। মাত্র ৪০ শতাংশ ভোট পেয়েই কেউ শতভাগ ক্ষমতা ভোগ করে— যা গণতন্ত্র ও নৈতিকতার পরিপন্থী। এই অসঙ্গতি থেকে মুক্তির একমাত্র পথ হচ্ছে পিআর পদ্ধতি, যা মানুষ এখন বুঝতে পেরেছে। ২৮ জুন তারই বড় উদাহরণ হবে ইনশাআল্লাহ।

মহাসমাবেশের প্রস্তুতি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, মাঠ প্রস্তুতির কাজ ইতোমধ্যেই শুরু হয়েছে। ইউনিয়ন পর্যায় থেকে দলীয় নেতাকর্মীরা ঢাকায় আসার জন্য যানবাহনের ব্যবস্থা সম্পন্ন করেছেন। দেশের অন্যান্য ইসলামি দল ও পিআর পদ্ধতির সমর্থক রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দকেও আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। জামায়াতে ইসলামীসহ বেশির ভাগ দলের নেতারা ইতোমধ্যে সম্মতি জানিয়েছেন।

মিডিয়ার প্রতি সহযোগিতার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, সংবাদমাধ্যম রাষ্ট্রের অন্যতম স্তম্ভ। ২৮ জুনের মহাসমাবেশের বার্তা দেশব্যাপী পৌঁছে দিতে গণমাধ্যমের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

এমএইচ/


সম্পর্কিত খবর

সর্বশেষ সংবাদ