তারেক সাঈদ ♦
হজ ইসলামের পাঁচ রুকনের অন্যতম একটি। যারা আর্থিক ও শারীরিক দিক থেকে সামর্থ্যবান তাদের ওপর সারা জীবনে একবার হজ করা ফরজ। আল্লাহ তায়ালাকে সন্তুষ্ট করার উদ্দেশ্যে শরিয়তের নিয়ম মেনে নির্দিষ্ট সময়ে নির্দিষ্ট স্থান তথা বায়তুল্লাহ এবং সংশ্লিষ্ট স্থানসমূহ নির্ধারিত কাজের মাধ্যমে সম্পন্ন করাই ইসলামের পরিভাষায় হজ। আজ বিশ্বের প্রতিটি কোণ থেকে আল্লাহর ভালোবাসা পেতেই হাজিরা ছুটে যান মক্কা মদিনায়।
আল্লাহ তায়ালা কুরআন মাজিদে পরিষ্কার ভাষায় সামর্থবান মুসলিম নর-নারীর উপরে জীবনে একবার এ মহান ইবাদতটি ফরজ করে দিয়েছেন। তিনি বলেন- মানুষের মধ্যে যে ব্যক্তি কাবাঘর পৌঁছতে সক্ষম হয় তার উপর আল্লাহর প্রাপ্য হচ্ছে সে যেন হজ করে। (আল-ইমরান-৯৬)
হাদিসে আছে, আবু হুরায়রা রা. বর্ণনা করেন, একদা রাসূল সা. আমাদের উদ্দেশ্যে ভাষণ দিলেন। তিনি বললেন-
হে মানবসকল! আল্লাহ তায়ালা তোমাদের উপর হজ ফরজ করেছেন। সুতরাং তোমরা হজ করো।
এক ব্যক্তি বলল, ইয়া রাসূলাল্লাহ! প্রতি বছর কি হজ করতে হবে? তিনি চুপ রইলেন এবং লোকটি এভাবে তিনবার জিজ্ঞেস
করল। অতপর রাসূল সা. বললেন, আমি যদি হ্যাঁ বলতাম, তাহলে তা (প্রতি বছর হজ করা) ফরজ হয়ে যেতো! কিন্তু তোমাদের পক্ষে তা করা সম্ভব হতো না।-সহিহ মুসলিম-১৩৩৭ (৪১২)।
অন্য এক হাদিসে আছে, হযরত ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত রাসূল সা. ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি হজ করার ইচ্ছে করে, সে যেন তাড়াতাড়ি তা আদায় করে নেয়। কারণ যে কোনো সময় সে অসুস্থ হয়ে যেতে পারে বা বাহনের ব্যবস্থাও না থাকতে পারে অথবা অন্য কোনো সমস্যার সম্মুখীন হতে পারে।-মুসনাদে আহম-১৮৩৩।
হজ বান্দার গোলামী প্রকাশ করার এক আদর্শ পন্থা। প্রভুর প্রতি ভালোবাসায় পাগলপাড়া হয়ে দু টুকরা সাদা কাপড় পড়ে ছুটে চলে কাবার পানে। বাড়ি, গাড়ি, পরিবার, দামি কাপড় ইত্যাদি ফেলে দু টুকরা সাদা কাপড় এটা কি খুদা প্রেম নয়? কাবার চতুরপাশে ঘুরতে থাকে আর বলতে থাকে আমি হাজির, আমি হাজির, হে আমার প্রভু!
পৃথিবীর সকল দেশের সকল ভাষার সকল বর্ণের মুসলিম নর-নারী, আবালবৃদ্ধবণিতা যখন আরাফাতে, মুযদালিফায়, মীনায়, কাবায় একই পোষাকে একই ভাষায় লাব্বাইকা ধ্বনিতে মুখরিত করে তোলে তখন বিশ্ব জগত এক অনন্য দৃশ্য অবলোকন করে।
এ দৃশ্য নয়ন জুড়িয়ে দেয়, শ্রদ্ধা ভালবাসা আর আবেগের জোয়ারে সকল হিংসা-বিদ্বেষ ভেদাভেদ ধুয়ে মুছে যায়। সকলের প্রতি সকলের ভালবাসা, মমতা, সহমর্মিতা, সহযোগিতার কিএক অদৃশ্য বন্ধন! সবার গন্তব্য এক, চাওয়া-পাওয়া এক আল্লাহর সন্তুষ্টি। মহান মা'বুদের দরবারে এসে বিশ্ব মুসলিম একাকার হয়ে যায়। এ হজ্ব বিশ্ব মুসলিমকে একাত্মা করে দেয় বিশ্ব মুসলিম ভ্রাতৃত্ব ও বিশ্ব শান্তির স্বাদ জাগিয়ে দেয়।
আবু হুরায়রা রা. হতে বর্ণিত তিনি বলেন, আমি রাসূল সা. কে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি আল্লাহর উদ্দেশ্যে হজ করল এবং অশ্লীল কথাবার্তা ও গুনাহ থেকে বিরত থাকল সে ঐ দিনের মতো নিষ্পাপ হয়ে হজ্ব থেকে ফিরে আসবে যেদিন মায়ের গর্ভ থেকে ভূমিষ্ট হয়েছিল।-সহিহ বুখারি হাদিস : ১৫২১, -সহিহ মুসলিম-১৩৫০।
অন্য হাদিসে, আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন- তোমরা হজ্ব ও উমরা পরপর একত্রে পালন কর। কেননা এ দুটি (হজ্ব ও উমরাহ) দারিদ্র ও গুনাহসমূহ এমনভাবে দূর করে দেয় যেমন কামারের হাপর লোহা ও সোনা-রূপার ময়লা দূর করে দেয়। আর হজ্বে মাবরূরের বিনিময় জান্নাত ছাড়া আর কিছুই নয়।-সুনানে তিরমিযী- ৮১০; মুসনাদে আহমদ-৩৬৬৯।
হযরত আবু হুরায়রা রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সা. কে জিজ্ঞাসা করা হল, সর্বোত্তম আমল কোনটি? তিনি বললেন, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি ঈমান আনা। জিজ্ঞাসা করা হল, তারপর কোনটি?
তিনি বললেন, আল্লাহর পথে জিহাদ করা। জিজ্ঞাসা করা হল, তারপর কোনটি? তিনি বললেন, হজ্জে মাবরূর বা কবুল হজ।-সহিহ বুখারি-২৬; সহিহ মুসলিম-৮৩। এটাই কামনা, সামর্থবান প্রত্যেক ব্যক্তিই যেনো আল্লাহর ঘর যিয়ারত লাভ করতে পারে। আল্লাহ তৌফিক দিন।
-এটি
 
                              
                           
                              
                           
                         
                              
                           
                        
                                                 
                      
                                                  
                                               
                                                  
                                               
                                      
                                         
                                      
                                         
                                      
                                        