রোকন হারুন: আমাদের সমাজে এমন অনেক বিষয়ের প্রচলন দেখি যার ভিত্তি আমাদরে জানা নেই। এমনকি যারা করেন তারাও জানেন না এর মূল ভিত্তি আদৌ আছে কী না। হ্যাঁ শুধু এতটুকু জানেন যে, তাদের বড়রা এ কাজটা করে আসছেন।
ঠিক তেমনি একটি প্রচলিত আমল যা আমরা অনেকে করে থাকি, তা হলো, মৃত ব্যক্তিকে দাফন করার পর কবরের ওপর আযান দিই। যাতে করে ফেরেশতাগণের প্রশ্নেত্তরের সময় শয়তান তাকে বিভ্রান্তিতে না ফেলতে পারে।
আযানের আওয়াজে শয়তান মৃতের কাছে ভিরতে পারবে না, সাধরণত এমনটি ধারণা করে এই আযানের সূত্রপাত ঘটেছে।
মনে রাখতে হবে: শরীয়তের যে কোন বিষয়ে নিজের থেকে সুধারণা করে কোন কিছু যোগ করার অধিকার কাউকে দেয়া হয়নি। দ্বীনের প্রত্যেক কাজে শরীয়তের মানদণ্ড বেঁধে দেয়া আছে সে মোতাবেকই আমল করতে হবে।
কোন মুসলিম মারা গেলে তাকে কাফন-দাফনের পূর্ণ পদ্ধতির বর্ণনা দিয়েছে শরীয়ত। এমনকি দাফন কার্য-পর কবরের পাশে দাঁড়িয়ে কী করতে হবে সেটিও শিখিয়ে দিয়েছে।
হযরত ইবনে উমর রাঃ বলেন, রাসুল সা. ইরশাদ করেন, যখন কোন ব্যক্তি মারা যায়, তখন তাকে বেশি সময় রেখো না, বরং দ্রুত কবরস্ত কর। কবরস্ত করার পর তার মাথার পাশে দাঁড়িয়ে সুরা ফাতিহা পড় এবং পায়ের পাশে দাঁড়িয়ে সূরা বাকারার শেষ অংশ পাঠ কর।
সূত্র: আলমুজামুল কাবীর লিততাবরানী, হাদীস নং ১৩৬১৩, শুয়াবুল ঈমান লিলবায়হাকী, হাদীস নং-৮৮৫৪।
দ্বিতীয় হাদিস: হযরত আব্দুর রহমান বিন আলা বিন লাজলাজ স্বীয় পিতা থেকে বর্ণনা করেন, আমার পিতা আমাকে বলেছেন, হে বৎস! আমি যখন মারা যাব, তখন আমার জন্য ‘লাহাদ’ কবর খুড়বে।
অতপর আমাকে যখন কবরে রাখবে তখন পড়বে “বিসমিল্লাহি ওয়াআলা মিল্লাতি রাসুলিল্লাহ” এরপর মাটি ঢালবে। দাফন শেষে আমার মাথার পাশে দাঁড়িয়ে সূরা বাকারার শুরু এবং শেষাংশ পড়বে। কেননা, রাসুল সা. থেকে আমি এমনটি শুনেছি।
সূত্র: আলমুজামুল কাবীর লিততাবরানী, হাদীস নং-৪৫১, সুনানুল কুবরা লিলবায়হাকী, হাদীস নং-৭০৬৮।
কবরে আযান দেয়ার কোন নির্দেশনা কুরআন বা হাদীসে আসেনি। তাই এ প্রচলিত আমল পরিত্যাজ্য। অবশ্যই আমাদেরকে বেঁচে থাকতে হবে। অন্যথায় বিদ’আতী অপকর্মের দায়ে জাহান্নামের শাস্তি ভোগ করতে হবে।
আম্মাজান আয়েশা রা. রাসুুল সা. থেকে বর্ণনা করেন, দ্বীনের ভেতর যে কোন নতুন জিনিস সৃষ্টি করা হলে তা বিদ’আত হিসেবে বিবেচ্য হবে। আর প্রত্যেক বিদ’আতই গোমরাহী এবং তা তাকে জাহান্নামে নিয়ে যাবে।
সূত্র: সহীহ মুসলিম: ২/৭৭
যুক্তি খণ্ডন: কবরে মুনকার নকীরের প্রশ্নোত্তরের সময় শয়তান কবরবাসীকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করে, তখন আজান দিয়ে শয়তানকে তাড়িয়ে দেয়া হয়।
এ যুক্তিটি যৌক্তিক নয়, ধারণাবশত খোড়া যুক্তি বলা যেতে পারে। কেনন, শয়তান বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করলে সবসময় আজানই তার সমাধান নয়। যদি এমনই হতো তাহলে প্রথমত কুরআনে বা হাদীসে এ বিষয়ে নির্দেশনা থাকতো।এবং রাসুল সা.ও তাঁর ইন্তেকালের পর স্বীয় কবরে সাহাবাগণকে আজান দেবার নির্দেশ দিতেন বা সাহাবাদের কবরে আযানের আমল পাওয়া যেত।
যেহেতু এ সংক্রান্ত কোন নির্দেশনা হাদীসে আসেনি। তাই এটি নতুন বিষয় যা পরিত্যাজ্য।
-আরএইচ
 
                              
                           
                              
                           
                         
                              
                           
                        
                                                 
                      
                                                  
                                               
                                                  
                                               
                                      
                                         
                                      
                                         
                                      
                                        