|| মুহাম্মদ মিজানুর রহমান ||
“স্টারলিংকের মাধ্যমে বাংলাদেশের টেলিযোগাযোগ খাতে একটি বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসতে পারে। বিশেষত দেশের প্রত্যন্ত ও দুর্গম এলাকাগুলো—যেখানে এখনো অপটিক্যাল ফাইবার সংযোগ পৌঁছায়নি—সেখানেও দ্রুতগতির ইন্টারনেট সংযোগ পৌঁছে দেওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। কারণ স্টারলিংক সরাসরি স্যাটেলাইটের মাধ্যমে ইন্টারনেট সরবরাহ করে, যা ভূ-ভিত্তিক অবকাঠামোর ওপর নির্ভরশীল নয়।” বাংলাদেশে স্টারলিংকের সম্ভাবনা সম্পর্কে এমনই অভিমত বিশেষজ্ঞদের।
বিশ্বের অন্যতম ধনী উদ্যোক্তা ইলন মাস্কের প্রতিষ্ঠান স্পেসএক্স পরিচালিত স্যাটেলাইটভিত্তিক ইন্টারনেট সেবা স্টারলিংক দেশে পরীক্ষামূলকভাবে চালু হতে যাচ্ছে। সফলভাবে পরীক্ষামূলক কার্যক্রম শেষ হলে পরবর্তী তিন মাসের মধ্যে বাণিজ্যিকভাবে সেবাটি চালু হবে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
স্টারলিংক সংযোগ নেয়ার পদ্ধতি
বাংলাদেশের গ্রাহকরা সরাসরি স্টারলিংকের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট starlink.com এ গিয়ে অর্ডার দিতে পারবেন। অর্ডার করতে প্রথমে আপনার ঠিকানা দিয়ে সেখানে এই সেবা পৌঁছাবে কি না, তা নিশ্চিত করতে হবে। তারপর একটি সার্ভিস প্ল্যান বেছে নিয়ে হার্ডওয়্যার কিট কেনার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হবে। স্টারলিংক সংযোগের জন্য স্ট্যান্ডার্ড কিটে থাকে একটি স্যাটেলাইট ডিশ, ওয়াইফাই রাউটার, মাউন্টিং ট্রাইপড ও ক্যাবল। এটি সেটআপ করা অত্যন্ত সহজ। প্রয়োজনীয় সংযোগ দিয়ে স্যাটেলাইট ডিশটির ফাঁকা জায়গায় আকাশের দিকে মুখে করে স্থাপন করতে হবে।
স্টারলিংক প্যাকেজ
স্টারলিংক বর্তমানে বাংলাদেশের গ্রাহকদের জন্য দুটি ইন্টারনেট প্যাকেজ অফার করছে। একটি স্টারলিংক রেসিডেনশিয়াল প্যাকেজ। যার মাসিক মূল্য ৬ হাজার টাকা। আর স্টারলিংক রেসিডেনশিয়াল লাইটের জন্য মাসিক খরচ হবে মাসিক ৪ হাজার ২০০ টাকা। এছাড়া সেটআপ যন্ত্রপাতির জন্য এককালীন খরচ হবে ৪৭ হাজার টাকা। এর মাধ্যমে শহর এবং প্রত্যন্ত অঞ্চলসহ সব জায়গায় একই গতির ইন্টারনেট সেবা পাওয়া যাবে।উভয় প্যাকেজেই স্যাটেলাইটের মাধ্যমে উচ্চগতির নিরবচ্ছিন্ন ইন্টারনেট সুবিধা প্রদান করা হয়, যা দেশের দুর্গম ও গ্রামীণ এলাকাগুলোর জন্য বিশেষভাবে কার্যকর।
হার্ডওয়্যার কিট
স্টারলিংক সেবার জন্য প্রথমে হার্ডওয়্যার কিট কিনতে হবে এককালীন ৪৭ হাজার টাকায়। পাশাপাশি শিপিং ও হ্যান্ডেলিং চার্জ বাবদ এককালীন দিতে হবে দুই হাজার ৮০০ টাকা। ফলে সংযোগ ক্রয় বাবদ গ্রাহকদের খরচ পরবে ৪৯ হাজার ৮০০ টাকা। একটা ভবনে ইন্টারনেট ব্যবহার করে এমন অনেকগুলো অ্যাপার্টমেন্ট, কন্ডোমিনিয়াম, ফ্ল্যাট থাকে। বেশ কয়েকটা অ্যাপার্টমেন্ট যারা পাশাপাশি থাকে, চারটা বা পাঁচটা অ্যাপার্টমেন্ট বা দুই-একটা তলা মিলে এই সার্ভিস ব্যবহার করতে পারে, তবে এক্ষেত্রে রেঞ্জ সর্বোচ্চ ২০ মিটার করতে পারবেন।
ইনস্টলেশন ও ব্যবহার
স্টারলিংক কিট এমনভাবে ডিজাইন করা হয়েছে, যাতে ব্যবহারকারীরা খুব সহজেই নিজেরাই সেটআপ করতে পারেন। সেটআপের জন্য শুধু একটি বিষয় নিশ্চিত করতে হবে- স্যাটেলাইট ডিশটি যেন খোলা আকাশের নিচে স্থাপন করা হয়, যাতে এটি সঠিকভাবে সিগন্যাল গ্রহণ করতে পারে। ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, স্টারলিংক সংযোগ নিয়ে ৩০ দিন ব্যবহার করার পর সেবা ‘সন্তোষজনক’ মনে না হলে সম্পূর্ণ টাকা ফেরত দেওয়া হবে।
স্টারলিংকের আগমন বাংলাদেশের ডিজিটাল রূপান্তরের গতিকে আরও বেগবান করতে পারে—বিশেষ করে দেশের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর কাছে আধুনিক ইন্টারনেট সুবিধা পৌঁছে দিতে এটি হতে পারে একটি বড় মাইলফলক।
এসএকে/