জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের সভাপতি মাওলানা উবায়দুল্লাহ ফারুক বলেছেন, পৃথিবীর অন্যতম বিষাক্ত শক্তি ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে একশো নব্বই বছর ধারাবাহিক লড়াই-সংগ্রাম করে এই উপমহাদেশকে ব্রিটিশ মুক্ত করেছে জমিয়ত। ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, পৃথিবীর আর কোনো রাজনৈতিক কিংবা অরাজনৈতিক সংগঠনের এমন ধারাবাহিক লড়াই-সংগ্রামের ইতিহাস নেই। জমিয়ত কখনো আবেগের বশবর্তী হয়ে সিদ্ধান্ত নেয়নি; বরং প্রতিটি পদক্ষেপ ছিল সুপরিকল্পিত, দূরদর্শী ও কুরআন-সুন্নাহর নির্দেশনা অনুযায়ী। ইতিপূর্বে যেসব গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় আন্দোলন সংগঠিত হয়েছে, প্রতিটি আন্দোলনের ঐক্য প্রক্রিয়ার অগ্রভাগে ছিল জমিয়ত, অথচ আজকের বাস্তবতায় কিছু দল-গোষ্ঠী, যাদেরকে 'বাতিল' বলে আখ্যায়িত করা হয়েছিল, সময়ের স্রোতে তারাই আবার 'হক' বলে বিবেচিত হচ্ছে। কিন্তু জমিয়ত তার নীতিতে অবিচল থেকেছে। জমিয়ত আজ যা বলে, কালও তাই বলে। তাদের বক্তব্যে কোনো দ্বিমুখিতা নেই, মত ও পথের কোনো বিচ্যুতি নেই। আজ যারা নিজেদের 'ঐক্যের রাহবার' দাবি করে, তারা নিজেরাই প্রতিনিয়ত বক্তব্য ও অবস্থান পাল্টাচ্ছে। অন্যদিকে, যারা দুর্নীতির পৃষ্ঠপোষকতায় লিপ্ত, তারাই জমিয়তের মতো আদর্শিক সংগঠনকে ঐক্যের পথে 'বাধা' হিসেবে তুলে ধরছে।
শনিবার (১২ জুলাই) সকাল ১০টায় রাজধানী ঢাকার ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে যুব জমিয়তের ঢাকা বিভাগীয় সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের মহাসচিব মাওলানা মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দী বলেন, জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের কার্যালয় বাংলাদেশে স্থাপনের সিদ্ধান্তে আমরা চরম উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠার মধ্যে রয়েছি। অন্তর্বর্তী সরকারের এ ধরনের চুক্তি করার কোনো অধিকার নেই। দক্ষিণ এশিয়ার অন্য কোনো দেশে, যেমন: ভারত, পাকিস্তান, নেপাল, শ্রীলঙ্কা, ভুটান, মালদ্বীপ ও আফগানিস্তানে এমন কার্যালয় স্থাপিত হয়নি। ভারতে মুসলিমদের ওপর দীর্ঘদিন ধরে নির্যাতন চললেও সেখানে জাতিসংঘ অফিস খোলার পদক্ষেপ দেখা যায়নি, তাহলে বাংলাদেশে কেন? আমরা মনে করি শকুনের চোখ পড়েছে। ব্যর্থ জাতিসংঘের ঠাঁই বাংলাদেশে হবে না। সরকারকে এই চুক্তি বাতিল করতে বাধ্য করতে জমিয়ত প্রয়োজনে কঠোর কর্মসূচি নিতে বাধ্য হবে।
জমিয়ত মহাসচিব আরও বলেন, গত ৯ জুলাই যে বর্বরোচিত ঘটনা ঘটেছে, তার ভিডিও দেখে জাতি বাকরুদ্ধ। যাঁরা দৃশ্যটি দেখেছেন, তাঁরা হতবাক ও স্তব্ধ। যারা এই বর্বর হামলা চালিয়েছে, আমরা তাদের অবিলম্বে গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাই। এই ধরনের নৃশংস ঘটনার পুনরাবৃত্তি যেন না ঘটে, সেজন্যই আমরা গণঅভ্যুত্থানে অংশগ্রহণ করেছিলাম। হত্যাকারী যেই হোক, তার সঙ্গে কোনো আপোষ নয়। সরকারও এই ব্যর্থতার দায় এড়াতে পারে না। আমরা সব ধরনের হত্যাকাণ্ডের নিন্দা জানাই। আবরার ফাহাদ, আবু সাঈদ, মুগ্ধ, সোহাগ- এদের যেভাবে হত্যা করা হয়েছে আমরা প্রতিটি হত্যার সুষ্ঠু তদন্ত ও দোষীদের সর্বোচ্চ শাস্তি চাই। ইস্যু দিয়ে ইস্যু ঢাকার ব্যর্থ প্রচেষ্টা আমরা আর সহ্য করব না। বাংলাদেশ একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র। এই দেশের সার্বভৌমত্ব ও ইসলামী চেতনাকে কোনোভাবেই হুমকির মুখে ঠেলে দিতে দেব না। আমরা যুব সমাজের প্রতি আস্থাশীল। যদি তারা তাদের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করে, তবে দেশ কখনোই আস্থা হারাবে না।
যুব জমিয়ত ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি ও সম্মেলন বাস্তবায়ন কমিটির আহ্বায়ক মাওলানা কালীমুল্লাহ মাহফুজের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সম্মেলনে প্রধান বক্তার বক্তব্য রাখেন যুব জমিয়ত বাংলাদেশের সভাপতি মাওলানা তাফহীমুল হক, বিশেষ বক্তা হিসেবে বক্তব্য রাখেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মাওলানা ইসহাক কামাল।
আরও বক্তব্য রাখেন জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের সহ সভাপতি মাওলানা নাজমুল হাসান কাসেমী, যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মতিউর রহমান গাজীপুরী, সহকারী মহাসচিব মাওলানা জয়নুল আবেদীন, সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা লুকমান মাযহারী, প্রচার সম্পাদক মুফতি ইমরানুল বারী সিরাজী, সহ প্রচার সম্পাদক মাওলানা নূর মুহাম্মদ কাসেমী, শিক্ষা ও সংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক মুফতি জাবের কাসেমী, ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক মুফতি মাহবুবুল আলম, ছাত্র জমিয়ত বাংলাদেশের সভাপতি রিদওয়ান মাযহারী প্রমুখ।
এমএইচ/