মঙ্গলবার, ২৪ জুন ২০২৫ ।। ১০ আষাঢ় ১৪৩২ ।। ২৮ জিলহজ ১৪৪৬


প্রতিটা প্রাণীই ছড়ায় আলো , মৃত্যুর সঙ্গে নিভে যায় সেই আলো

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

মুহাম্মদ মিজানুর রহমান

আমরা সবাই জানি, সূর্য আলো দেয়, আগুন আলো দেয়। কিন্তু কী হবে যদি বলা হয়, মানুষও আলো ছড়ায়? শুধু মানুষ নয় প্রতিটি জীবন্ত প্রাণী, এমনকি গাছপালাও। যদিও এ আলো চোখে দেখা যায় না, তবুও বিজ্ঞান বলছে—এই আলো বাস্তব, এবং এর পেছনে রয়েছে আমাদের শরীরের গভীর বিজ্ঞান।

এই আলোকে বলা হয় “বায়োফোটন” (Biophoton)—এক ধরনের অতি ক্ষীণ আলোককণা, যা আমাদের কোষের অভ্যন্তরে রাসায়নিক বিক্রিয়ার সময় নির্গত হয়। গবেষকরা অনেক আগেই এই বায়োফোটনের অস্তিত্ব আবিষ্কার করেছেন, তবে ২০০৯ সালে জাপানের এক গবেষণায় প্রথমবারের মতো স্পষ্টভাবে দেখা যায়—মানুষের শরীর থেকে আসা এই ক্ষীণ আলো।

গবেষণায় দেখা যায়, আমরা দিনের বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন মাত্রায় আলো ছড়াই। সবচেয়ে বেশি আলো ছড়ায় আমাদের মুখমণ্ডল, আর সবচেয়ে কম পা। এই আলো ছড়ানো জৈব ঘড়ি বা সারকেডিয়ান রিদম অনুযায়ী চলে। রাতে, যখন আমরা ঘুমিয়ে থাকি, তখন এই আলো কিছুটা বেড়ে যায়।

আরও বিস্ময়কর তথ্য মিলেছে সাম্প্রতিক গবেষণায়—একটা প্রাণী মারা গেলে তার দেহ থেকে আলো নিভে যায়। ইঁদুরের দেহে চালানো পরীক্ষায় দেখা গেছে, মৃত্যুর পরপরই বায়োফোটন নির্গমন ধীরে ধীরে বন্ধ হয়ে যায়। এর কারণ, দেহের কোষে থাকা মাইটোকন্ড্রিয়া নামের শক্তি-উৎপাদক অঙ্গাণু জীবিত থাকা অবস্থায় শক্তি তৈরি করে, যার ফলেই তৈরি হয় আলো। প্রাণী মারা গেলে এই প্রক্রিয়া বন্ধ হয়ে যায়, আর সঙ্গে সঙ্গে নিভে যায় সেই আলো।

এই গবেষণার বিস্তৃতি শুধু প্রাণীজগতে সীমাবদ্ধ নয়। গাছের ক্ষেত্রেও দেখা গেছে—যদি গাছ কাটা হয় বা ক্ষতবিক্ষত হয়, ক্ষত স্থানে বায়োফোটনের পরিমাণ কিছু সময়ের জন্য বেড়ে যায়। এই আবিষ্কার ভবিষ্যতে গাছের স্বাস্থ্যের পরিবর্তন বুঝতে বিজ্ঞানীদের নতুন দরজা খুলে দিতে পারে।

সবশেষে বলা যায়, জীবন মানেই আলো। চোখে না দেখা গেলেও, আমাদের ভেতর একধরনের দীপ্তি থাকে—যা আমাদের জীবনের প্রতিচ্ছবি। আর যখন জীবন থেমে যায়, নিভে যায় সেই আলোও। জীবনের এমন বৈজ্ঞানিক রহস্য যেমন বিস্ময়কর, তেমনি ভাবনাচিন্তার খোরাকও বটে।

এনএইচ/


সম্পর্কিত খবর

সর্বশেষ সংবাদ