ছাত্র জমিয়তের উদ্যোগে গণঅভ্যুত্থানে শহীদদের স্মরণে ও আগামীর বাংলাদেশ বিনির্মাণে ছাত্র সমাজের করণীয় শীর্ষক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। শুক্রবার (১৮ জুলাই) বিকেলে পল্টনস্থ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এই সভা অনুষ্ঠিত হয়।
ছাত্র জমিয়ত বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় সভাপতি রিদওয়ান মাযহারীর সভাপতিত্বে এবং কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক সাদ বিন জাকিরের সঞ্চালনায় পবিত্র কালামুল্লাহ শরিফের তেলাওয়াতের মাধ্যমে অনুষ্ঠানটি শুরু হয়।
প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় সিনিয়র সহ-সভাপতি মাওলানা আব্দুর রব ইউসুফী, বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের সহকারী মহাসচিব মাওলানা জয়নাল আবেদিন, প্রচার সম্পাদক মুফতি ইমরানুল বারী সিরাজী, ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক মুফতি মাহবুবুল আলম, ছাত্র জমিয়তের সাবেক সভাপতি ও জমিয়তের নির্বাহী সদস্য মুফতি এখলাসুর রহমান রিয়াদ প্রমুখ।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে মাওলানা আব্দুর রব ইউসুফী বলেন, ১৯৭১ সালে লক্ষ জনতার রক্তের বিনিময়ে বাংলাদেশ স্বাধীন হলেও প্রকৃত শোষণমুক্ত রাষ্ট্র গড়ে ওঠেনি। পাকিস্তান আমলের শোষণ, জুলুম আজো অব্যাহত। ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানে হাজারো শহীদের আত্মত্যাগ বৃথা যেত যদি সেনাবাহিনী জনগণের পাশে না দাঁড়াত, এজন্য সেনাবাহিনীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। কিন্তু যাদের আমরা ক্ষমতায় বসালাম, তারা কী শহীদদের স্বপ্ন পূরণ করতে পেরেছে?
তিনি বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার অপরাধীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়নি। অর্থপাচার আজো চলছে, অথচ সরকার ব্যর্থতা ঢাকছে। চট্টগ্রাম বন্দর, মিয়ানমারের করিডোর—সব কিছুতেই বিদেশিদের স্বার্থে কাজ চলছে। পশ্চিমাদের এজেন্ডা বাস্তবায়নে সরকার যেন শহীদদের রক্ত মাড়িয়ে চলছে। পার্বত্য অঞ্চলে বিদেশি হস্তক্ষেপ, বিদ্রোহী আর্মির নামে খ্রিস্টান রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ষড়যন্ত্র এখন বাস্তব হুমকি। সরকার এসব অস্বীকার করলেও বাস্তবতা ভিন্ন। মানবাধিকার কমিশনের নামেই বিদেশি হস্তক্ষেপ বাড়ছে। আমাদের ইসলাম, আমাদের দেশ যদি এই সরকারের কাছে নিরাপদ না থাকে, তাহলে তাদের রেখে কী লাভ?
তিনি আরো বলেন, নির্বাচন পিছিয়ে ফ্যাসিবাদীদের রাজনীতির সুযোগ করে দিলে তা দেশের জন্য অশনিসংকেত। আবার ইসলামপন্থীদের বাধাগ্রস্ত করতে একের পর এক আইন করা হচ্ছে—ডিগ্রির শর্ত, প্রতীক সংকট, জোটবদ্ধ প্রার্থিতার নিষেধাজ্ঞা ইত্যাদি। প্রধান উপদেষ্টা ফেব্রুয়ারির নির্বাচনের কথা বললেও তার বিপরীত ইঙ্গিতও পাওয়া যাচ্ছে। আমরা শান্তি চাই, স্বাধীনতা চাই, ইসলামের নিরাপত্তা চাই। আমাদের দাবি—স্বাধীনতার চেতনায়, ইসলাম ও মানুষের অধিকার রক্ষার ভিত্তিতে দেশ পরিচালিত হোক।
সভাপতির বক্তব্যে রিদওয়ান মাযহারী তার বক্তব্যে শহীদ ও আহতদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করে বলেন, “গত বছর এই সময়ে আমরা এক শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছিলাম। সেই ভয়াবহতা আমরা প্রত্যেকেই প্রত্যক্ষ করেছি। আল্লাহ তাআলার দরবারে শুকরিয়া আদায় করছি, যিনি আমাদের সেই সংকটকালীন সময় থেকে মুক্তি দিয়েছেন। আল্লাহ কুরআনে ইরশাদ করেছেন—পরিস্থিতি যত কঠিনই হোক না কেন, হতাশ হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। আমরা দেখেছি, ফ্যাসিস্ট সরকার তার ক্ষমতা রক্ষার জন্য কত কৌশল ও ষড়যন্ত্রের আশ্রয় নিয়েছিল। এমনকি দেশের স্বার্থ জলাঞ্জলি দিয়ে পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্রের সাহায্য পর্যন্ত চেয়েছে। কিন্তু আমরা বিশ্বাস করি, বাতিলের যত বড় পরিকল্পনাই হোক না কেন, আল্লাহ তাআলা চাইলে এক মুহূর্তেই তা ধ্বংস করে দিতে পারেন। তবে এর জন্য আমাদের প্রয়োজন তাওয়াক্কুল, ধৈর্য, এবং পূর্ব প্রস্তুতি।
তিনি আরও বলেন, আমরা এক সময় রক্ত দিয়ে এই দেশকে শোষণমুক্ত করার জন্য সংগ্রাম করেছি। কিন্তু আফসোস, আজও দেশে প্রকৃত অর্থে ফ্যাসিবাদ থেকে মুক্তি আসেনি। জাতিসংঘের বাংলাদেশে অফিস স্থাপন দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের জন্য নতুন হুমকির ইঙ্গিত দিচ্ছে। আমরা চাই, বাংলাদেশ একটি প্রকৃত স্বাধীন, আত্মনির্ভরশীল রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা পাক। এর জন্য আমাদের সচেতন, সংগঠিত ও প্রস্তুত থাকতে হবে। সংগঠনের গৃহীত কর্মসূচিগুলো যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে—এটাই হবে আমাদের পক্ষ থেকে শহীদদের প্রতি প্রকৃত শ্রদ্ধা।”
এসময় আরো উপস্থিত ছিলেন ছাত্র জমিয়ত কেন্দ্রীয় কমিটির সহ সভাপতি মুহাম্মদ নূর হোসাইন, সহ সভাপতি, কাউসার আহমাদ, সাংগঠনিক সম্পাদক এনামুল হাসান নাইম, সহ সাধারণ সম্পাদক হাসান মাহমুদ, প্রচার সম্পাদক আহমাদ আল গাজি, দফতর সম্পাদক জুবায়ের হোসেন, সমাজ সেবা সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল মাহফুজ, পাঠাগার সম্পাদক আমীন হুসাইন, ভার্সিটি বিষয়ক সম্পাদক মাহমুদুল হাসান তক্বী, নির্বাহী সদস্য সাইফ বিন জামাল প্রমুখ।
এছাড়াও বক্তব্য রাখেন, ঢাকা মহানগর ও ক্যাম্পাসের বিভিন্ন পর্যায়ের দায়িত্বশীলবৃন্দ।
এনএইচ/