শুক্রবার, ০৪ জুলাই ২০২৫ ।। ১৯ আষাঢ় ১৪৩২ ।। ৯ মহর্‌রম ১৪৪৭

শিরোনাম :
ফরিদপুরে বিএনপির সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটি বাতিলের দাবি কিডনিতে পাথর হওয়ার ঝুঁকি কমায় যে ফলগুলো খেলাফত আন্দোলনের সাথে সমমনা ইসলামি দলসমূহের বৈঠক অনুষ্ঠিত কুরআনের মহব্বত থেকেই আমার রাজনীতিতে আসা: শায়খ নেছার আহমদ জুলাই যোদ্ধাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে: আখতার হোসেন ৪৯ অনুচ্ছেদ সংশোধন, বিচার বিভাগের বিকেন্দ্রীকরণ বিষয়ে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে জুলাই গণঅভ্যুত্থান ও শহীদ দিবস পালনের নির্দেশ নাশরুস সীরাহ’র সীরাত প্রতিযোগিতা, চলছে ফ্রি রেজিস্ট্রেশন ঢাকায় জাতিসংঘের কার্যালয়: তীব্র নিন্দা ধর্মীয় নেতাদের মহাসমাবেশে আসার পথে আহত কর্মীদের দেখতে হাসপাতালে শায়খে চরমোনাই 

মহররম-আশুরার শিক্ষা ও ইতিহাস

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

আল আমীন বিন সাবের আলী

কালের প্রবাহ কখনো থেমে থাকে না। সদা সচল সময়ের স্রোতধারা। বর্তমান বিলীন হয়ে যায় অতীতের বুকে। ভবিষ্যত ঠাঁই নেয় বর্তমানের প্রাঙ্গণে। আগমন ঘটে নতুনের, প্রস্থান ঘটে পুরানের। এটাই চরম বাস্তবতা। জাগতিক এই নিয়মে কালের রঙ্গীন পাখায় ভর করে প্রতি বছর আমাদের দ্বারপ্রান্তে হাজির হয় ঐতিহাসিক ও অসংখ্য ঘটনার স্মৃতি বিজড়িত মাস ‘মহররমুল হারাম’। আরবি বর্ষপঞ্জির প্রথম মাস এটি, এবং এবারের হিজরী সাল ১৪৪৭।

মহররমের ইতিহাস
মহররম একটি এমন মাস, যা একদিকে আল্লাহ তায়ালার অসংখ্য অনুগ্রহ ও দানে পরিপূর্ণ, আবার অন্যদিকে শোক ও বিষাদে সিক্ত একটি মাস। ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, এ মাসটি ছিল সম্মানিত ও পবিত্র—এমনকি মক্কার কাফের-কুরাইশরা পর্যন্ত এ মাসে যুদ্ধবিগ্রহ থেকে বিরত থাকত, যা তার পবিত্রতার এক উজ্জ্বল নিদর্শন। তবে, এ মাসের দশ তারিখে সংঘটিত হয়েছিল কিছু উল্লেখযোগ্য ঐতিহাসিক ঘটনা। তার মধ্যে অন্যতম হলো হযরত মুসা (আ.)-এর লোহিত সাগর পার হওয়া এবং ফেরাউন বাহিনীর হাত থেকে মুক্তি লাভের ঘটনা, যা সুপ্রসিদ্ধ এবং নির্ভরযোগ্য সূত্রে বর্ণিত।

এছাড়া আরো কিছু ঐতিহাসিক ঘটনার উল্লেখ রয়েছে, যেমন—মহররমের দশ তারিখে হযরত আদম (আ.)-এর তাওবা কবুল হওয়া, হযরত নুহ (আ.)-এর কিশতী জুদী পাহাড়ে নোঙর করা, হযরত ইবরাহীম (আ.)-এর নমরূদ কর্তৃক অগ্নিকুণ্ড থেকে মুক্তি পাওয়া, হযরত ইসরাফীল (আ.)-এর শিঙ্গার ফুৎকারে কেয়ামত সংঘটিত হওয়া, ইত্যাদি। তবে, এসব ঘটনার মধ্যে কিছু সহীহ ও নির্ভরযোগ্য সূত্রে প্রমাণিত নয় (ইসলাহী খুতুবাত, মুফতী তাকী উসমানী)।

এছাড়া, হযরত ঈসা (আ.)-এর জন্ম ও আসমানে উঠা, হযরত ইউনুস (আ.)-এর মাছের পেট থেকে মুক্তি লাভ, হযরত আইয়ুব (আ.)-এর দূরারোগ্য ব্যাধি থেকে আরোগ্য লাভ—এইসব ঘটনাও মহররম মাসের তাৎপর্যপূর্ণ ইতিহাসের অংশ।

এ মাসের ইতিহাসে সবচেয়ে শোকাবহ এবং বিপজ্জনক ঘটনা ঘটে ৬১ হিজরীতে, যখন ইরাকের কারবালা উপকণ্ঠে সংঘটিত হয়েছিল এক বর্বরোচিত হত্যাকাণ্ড। এটি ইতিহাসে "কারবালা ট্রাজেডি" হিসেবে পরিচিত। কুফাবাসীদের প্রতারণার সত্ত্বেও, হযরত হুসাইন (রা.) তার কয়েকজন অনুগামী সহ জিহাদের তীব্র মনোবল নিয়ে ইবনে যিয়াদের বাহিনীর বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছিলেন।

একটি বিভ্রান্তির নিরসন
অনেকের মধ্যে একটি ভুল ধারণা রয়েছে যে, মহররমের দশ তারিখ তথা আশুরার দিন ফযিলতপূর্ণ হয়ে ওঠেছে ‘কারবালা ট্রাজেডি’-এর কারণে। কিন্তু এই ধারণা সঠিক নয়। আশ্চর্যজনকভাবে, কিছু ইতিহাসবিদও তাদের বইয়ের মধ্যে এই ভুল ধারণাকে সঠিক হিসেবে উপস্থাপন করেছেন, যা সম্পূর্ণ ভুল।

মহররমের দশ তারিখে নানা ঐতিহাসিক ঘটনা ঘটেছিল, যা আগে থেকেই এই দিনের পবিত্রতা ও ফযিলতকে প্রতিষ্ঠিত করেছিল। অতএব, আশুরার দিনে রোযা রাখার হুকুম ‘কারবালা ট্রাজেডি’-এর কারণে নয়, বরং এর আগে থেকেই মহররমের দিনের মর্যাদা ছিল। তবে হ্যাঁ, হযরত হুসাইন (রা.)-এর শাহাদাত ওই দিনটিকে আরও স্মরণীয় করে তুলেছে, এবং এটি আমাদের হৃদয়ে আরও বেশি প্রভাব ফেলেছে।

তাদের কথাও সঠিক নয় যারা মনে করেন যে, ‘কারবালা ট্রাজেডি’-এর কারণে আশুরার দিন রোযা রাখার হুকুম দেয়া হয়েছে।

কাজলা, ঢাকা

এমএইচ/


সম্পর্কিত খবর

সর্বশেষ সংবাদ