মালয়েশিয়ার ইমিগ্রেশন বিভাগ (জাবাতান ইমিগ্রেশন মালয়েশিয়া—জেআইএম) সমুদ্রপথে পরিচালিত ‘সিরি ২৩’ ক্যাটাগরির উসির (নির্বাসন) অভিযানের আওতায় ৭৮৩ জন ফিলিপাইনের নাগরিককে নিজ দেশে ফেরত পাঠিয়েছে। শনিবার সাবাহ রাজ্যের সানডাকান বন্দর থেকে নৌপথে এই প্রত্যাবাসন কার্যক্রম সম্পন্ন করা হয়।
ইমিগ্রেশন বিভাগ জানায়, ফেরত পাঠানো এসব ব্যক্তির মধ্যে নবজাতক শিশু থেকে শুরু করে বয়স্ক ব্যক্তিরাও রয়েছেন। তারা সবাই মালয়েশিয়ায় অবৈধভাবে প্রবেশ, বৈধ ভিসা বা পরিচয়পত্র না থাকা এবং ইমিগ্রেশন আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে আগেই আটক হয়েছিলেন।
সাবাহ ইমিগ্রেশন বিভাগের পরিচালক দাতুক এসএইচ সিত্তি সালেহা হাবিব ইউসুফ জানান, প্রত্যাবাসীতদের মধ্যে ৬৮৩ জন পুরুষ, ৭০ জন নারী এবং ১২ বছরের নিচে ২৮ জন শিশু রয়েছে। তাদের বয়স দুই বছর থেকে সর্বোচ্চ ৭৫ বছরের মধ্যে। তিনি বলেন, সাবাহ রাজ্যে অবৈধ অভিবাসীদের উপস্থিতি কমাতে ধারাবাহিক অভিযানের অংশ হিসেবেই এই প্রত্যাবাসন কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়েছে।
তিনি আরও জানান, সাবাহে অবৈধভাবে অবস্থানকারী এবং ইমিগ্রেশন আইন লঙ্ঘনকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ অব্যাহত থাকবে। ভবিষ্যতেও এ ধরনের অভিযান নিয়মিত চালানো হবে বলে স্পষ্ট বার্তা দেন তিনি।
ইমিগ্রেশন বিভাগের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, চলতি বছরের ২০ ডিসেম্বর পর্যন্ত সমুদ্র ও আকাশপথে মোট ১১ হাজার ২২১ জন বিদেশিকে নিজ নিজ দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৮ হাজার ৪২১ জন ফিলিপাইনের নাগরিক, ২ হাজার ৩৭৫ জন ইন্দোনেশিয়ার নাগরিক এবং বাকিরা অন্যান্য দেশের নাগরিক।
প্রত্যাবাসনের পাশাপাশি অবৈধ অভিবাসীদের নিয়োগ বা আশ্রয়দানকারীদের বিরুদ্ধেও কঠোর অবস্থানের কথা জানিয়েছেন দাতুক সিত্তি সালেহা। তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, যেসব ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান অবৈধ অভিবাসীদের নিয়োগ বা আশ্রয় প্রদানে জড়িত বলে প্রমাণিত হবে, তাদের বিরুদ্ধে ইমিগ্রেশন আইন ১৯৫৯/৬৩ অনুযায়ী জরিমানা, কারাদণ্ড এমনকি বেত্রাঘাতের মতো শাস্তিমূলক ব্যবস্থাও নেওয়া হবে। এ ক্ষেত্রে কোনো ধরনের আপস করা হবে না বলেও জানান তিনি।
সাম্প্রতিক অভিযানগুলো স্পষ্ট করে দিচ্ছে, অবৈধ অভিবাসন প্রশ্নে মালয়েশিয়া সরকার কোনো ধরনের ছাড় দিতে রাজি নয়। শিশু, নারী বা বয়স্ক—মানবিক বিবেচনাও অবৈধ অবস্থানের ক্ষেত্রে রেহাইয়ের কারণ হিসেবে গণ্য করা হচ্ছে না।
এ প্রেক্ষাপটে মালয়েশিয়ায় অবস্থানরত প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্য পরিস্থিতি উদ্বেগজনক সতর্ক সংকেত হিসেবেই দেখা হচ্ছে। অনেক বাংলাদেশি প্রবাসী বৈধ কাগজপত্র না থাকা কিংবা ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও কাজ চালিয়ে যাওয়ার ঝুঁকি নিচ্ছেন। তবে বর্তমান বাস্তবতায় এই ঝুঁকি আগের যে কোনো সময়ের তুলনায় অনেক বেশি। অবৈধ অবস্থান প্রমাণিত হলে আটক, ইমিগ্রেশন ডিপোতে পাঠানো, জোরপূর্বক প্রত্যাবাসন এবং ভবিষ্যতে মালয়েশিয়ায় প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা বা ব্ল্যাকলিস্টে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
সচেতন প্রবাসীরা পরামর্শ দিচ্ছেন—পাসপোর্ট, ভিসা ও ওয়ার্ক পারমিট সবসময় বৈধ ও হালনাগাদ রাখতে হবে, ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই নবায়নের ব্যবস্থা নিতে হবে এবং সন্দেহজনক দালাল বা অবৈধ কাজের প্রস্তাব থেকে দূরে থাকতে হবে। প্রয়োজনে বাংলাদেশ হাইকমিশনের সহায়তা নেওয়ার কথাও বলছেন তারা।
সব মিলিয়ে মালয়েশিয়ায় অবস্থানরত প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্য বর্তমান পরিস্থিতি একেবারেই স্পষ্ট বার্তা দিচ্ছে—অবৈধ অবস্থান শুধু আইনি ঝুঁকিই নয়, সম্মান, ভবিষ্যৎ কর্মসংস্থান এবং পরিবারের নিরাপত্তাকেও মারাত্মকভাবে হুমকির মুখে ফেলতে পারে। সময় থাকতে সচেতন হওয়াই সবচেয়ে নিরাপদ ও বুদ্ধিমানের পথ।
এনএইচ/