জুলাই বিপ্লবের আবেগ ও অভিঘাতকে ধারণ করে প্রকাশিত হয়েছে কবি জানে আলমের কাব্যগ্রন্থ “স্বাধীনতার ফুল ফুটেছে বিপ্লবীদের হাতে”। গ্রন্থটি পাঠ করলে বোঝা যায়, জুলাইয়ের ঝড় কবির মনোজগতে কতটা ক্ষিপ্রভাবে বয়ে গেছে।
বইটির প্রথম কবিতা “তবু আমি দাঁড়ালাম” পড়লেই জুলাই বিপ্লবের তীব্রতা উপলব্ধি করা যায়। কবিতার শুরুতেই তিনি লিখেছেন—
“একটি প্রসন্ন প্রসূন প্রত্যুষের প্রত্যাশায়
প্রজন্ম যেন আজ প্রসব যন্ত্রণায় কাটাচ্ছে কাল।”
কবিতাটিতে ‘প’-এর অনুপ্রাস একটি নান্দনিক ছন্দ সৃষ্টি করেছে।
অতীত ও ভবিষ্যতের মেলবন্ধন
“একটি বিপ্লব ও তিন শতাধিক গৌর গোবিন্দের পলায়ন” কবিতায় কবি অতীত ইতিহাসের বর্ণনা দিয়েছেন, পাশাপাশি ভবিষ্যতের সম্ভাব্য ঘটনাবলি তুলে ধরেছেন। এতে পাঠকের বিশ্বাস নতুন আলোয় উজ্জ্বল হয়ে ওঠে।
গ্রন্থটি শুধু গদ্য কবিতায় সীমাবদ্ধ নয়; এতে রয়েছে ছড়া, শিশু কবিতা এবং প্রেরণাদায়ী রচনা। আবু সাঈদকে নিয়ে লেখা ছড়ায় কবি ফ্যাসিস্ট শাসনের দমবন্ধ করা পরিস্থিতি ফুটিয়ে তুলেছেন—
“ছিল যখন বৈরী বাতাস
চতুর্দিকে পাপ।
তুলতো ফণা যখন তখন
স্বৈরাচারের সাপ।
পারতো না কেউ বলতে কথা
সেলাই করা মুখ
সবার মাঝে ছিলো যেন
অজ্ঞাত অসুখ।”
এটি পাঠ্যতালিকায় স্থান পাওয়ার মতো এক শিক্ষণীয় রচনা।
শিশুদের জন্য অনুপ্রেরণাদায়ী ছড়া মুগ্ধকে নিয়ে লেখা “আমরা সবাই মুগ্ধ হবো” ছড়ার শেষাংশে কবি লিখেছেন—
“আমরা সবাই মুগ্ধ হবো
প্রত্যাশাটা এই
থাকবো পরের উপকারে
দীপ্ত শপথ নেই।”
শিশুদের জন্য এটি এক অনন্য শিক্ষণীয় বার্তা।
প্রতিবাদী কণ্ঠস্বর
বহুল আলোচিত আয়নাঘর নিয়ে কবি লিখেছেন,
“হাসু খবিশ যা করেছে
দৈত্য মানে হার
মানুষ ধরে বন্দী রাখে
আয়না ঘরে তার।”
এ ধরনের বহু উজ্জ্বল ও প্রতিবাদী পঙ্ক্তি বইটিকে দিয়েছে বিশেষ মাত্রা।
কাব্যগ্রন্থটি ২৪-এর বিপ্লবের স্মারক হিসেবে অনন্য মর্যাদা পাবে এমন প্রত্যাশা করছেন পাঠক ও সমালোচকরা। শুদ্ধচিন্তার শক্তিমান কবি হিসেবে জানে আলম ইতোমধ্যেই বন্ধু মহলে পরিচিত। নতুন এই কাব্যগ্রন্থ তাকে এক অনন্য উচ্চতায় পৌঁছে দেবে বলে বিশ্বাস করা হচ্ছে।
এমএইচ/