বুধবার, ১৩ আগস্ট ২০২৫ ।। ২৯ শ্রাবণ ১৪৩২ ।। ১৯ সফর ১৪৪৭

শিরোনাম :
সমকামী এক্টিভিস্ট কর্তৃক দুই শিক্ষককে হত্যার হুমকির তীব্র নিন্দা  গাজা গণহত্যায় যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা সবচেয়ে বেশি: আয়ারল্যান্ডের সাবেক প্রেসিডেন্ট গণঅভ্যুত্থানে অগ্রভাগে ছিল মাদ্রাসা শিক্ষার্থীরা: ধর্ম উপদেষ্টা আ.লীগকে নির্বাচনে ফেরাতে চাইলে আবারও ‘অভ্যুত্থান’ হবে গণঅভ্যুত্থান ছাড়া ফ্যাসিবাদ সরানো যায় না: মাহমুদুর রহমান আওয়ার ইসলামের উদ্যোগে সিরাতুন্নবী সাধারণ জ্ঞান প্রতিযোগিতা, লক্ষাধিক টাকার পুরস্কার মা-বাবা ও উসতাদের সম্মানে দাঁড়ানো কি জায়েয? রাজধানীতে আবারও শক্তির জানান দিলো জামায়াত ইবতেদায়ি মাদরাসা শিক্ষকদের সুখবর দিলেন সচিব জুলাই ঘোষণাপত্রের আলোকেই নির্বাচন দিতে হবে: জামায়াত নায়েবে আমির

মা-বাবা ও উসতাদের সম্মানে দাঁড়ানো কি জায়েয?

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

মুফতি যুবাইর মাহমুদ রাহমানি 

ইসলামে বয়োজ্যেষ্ঠ, শিক্ষক, আলেম, মা-বাবা ও সম্মানিত ব্যক্তির প্রতি আদব প্রদর্শন করা ঈমানের শাখা। দাঁড়িয়ে সম্মান প্রদর্শন করা ইসলামের শিষ্টাচারের অংশ, তবে এর কিছু শর্ত ও সীমারেখা আছে, যা হাদিস ও ফিকহি আলোচনায় স্পষ্ট হয়েছে। এ নিবন্ধে আমরা সংক্ষেপে এ বিষয়ে আলোচনা করার প্রয়াস পাব, ইনশাআল্লাহ। 

১. সম্মানার্থে দাঁড়ানো মুস্তাহাব
মা-বাবা, উস্তাদ বা সম্মানিত ব্যক্তির আগমনে দাঁড়ানো মুস্তাহাব। আউস গোত্রের সর্দার হজরত সাদ ইবনে মুয়ায রা. আগমন করলে নবি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আনসারি সাহাবিদের বললেন, قُومُوا إِلَى سَيِّدِكُمْ، أَوْ خَيْرِكُمْ  
অর্থ, “তোমরা তোমাদের নেতা বা উত্তম ব্যক্তির জন্য দাঁড়াও।” (বুখারি)

২. অহংকারবশত দাঁড়ানো পছন্দ করলে
যদি কেউ অহংকার ও গৌরব প্রদর্শনের জন্য চায় যে লোকেরা তার জন্য দাঁড়াবে, তবে দাঁড়ানো হারাম। নবীজি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, مَنْ أَحَبَّ أَنْ يَمْثُلَ لَهُ الرِّجَالُ قِيَامًا فَلْيَتَبَوَّأْ مَقْعَدَهُ مِنَ النَّارِ 
অর্থ, “যে ব্যক্তি পছন্দ করে যে লোকেরা তার জন্য দাঁড়িয়ে থাকবে, সে যেন জাহান্নামে নিজের আসন ঠিক করে নেয়।” (আবু দাউদ)

৩. ভালোবাসা ও স্নেহ প্রকাশে দাঁড়ানো
স্নেহ ও আন্তরিকতার প্রকাশে দাঁড়ানো জায়েজ। হাদিস শরিফে এসেছে,  وَكَانَتْ إِذَا دَخَلَتْ عَلَى النَّبِيِّ ﷺ قَامَ إِلَيْهَا فَقَبَّلَهَا وَأَجْلَسَهَا فِي مَجْلِسِهِ، وَكَانَ النَّبِيُّ ﷺ إِذَا دَخَلَ عَلَيْهَا قَامَتْ مِنْ مَجْلِسِهَا فَقَبَّلَتْهُ وَأَجْلَسَتْهُ فِي مَجْلِسِهَا
অর্থ, “যখন ফাতিমা (রাঃ) নবী ﷺ এর কাছে আসতেন, তিনি ﷺ দাঁড়িয়ে তাকে চুম্বন করতেন এবং নিজের আসনে বসাতেন। আর নবী ﷺ যখন তার কাছে যেতেন, তিনিও দাঁড়িয়ে তাকে চুম্বন করতেন এবং নিজের আসনে বসাতেন।” (তিরমিযি, হাদিস: ৬/১৮৩)

৪. সফর শেষে অভ্যর্থনায় দাঁড়ানো
দূরের সফর শেষে আগমনে আনন্দ প্রকাশ ও অভ্যর্থনার জন্য দাঁড়ানো জায়েজ। যেমন হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, لَمَّا قَدِمَ جَعْفَرٌ عَلَى رَسُولِ اللهِ ﷺ مِنْ أَرْضِ الْحَبَشَةِ قَبَّلَ رَسُولُ اللهِ ﷺ مَا بَيْنَ عَيْنَيْهِ، ثُمَّ قَالَ: مَا أَدْرِي أَنَا بِقُدُومِ جَعْفَرٍ أُسَرُّ أَوْ بِفَتْحِ خَيْبَرَ

অর্থ, “যখন জাফর (রাঃ) হাবশা থেকে নবী ﷺ এর কাছে এলেন, তিনি ﷺ তার দুই চোখের মাঝখানে চুম্বন করলেন এবং বললেন: ‘আমি বুঝতে পারছি না, জাফরের আগমনে আমি বেশি খুশি নাকি খাইবার বিজয়ে।’ (তবারানি, আল মুজামুল কাবির, ২২/১০০)

৫. কেউ দাঁড়ানো অপছন্দ করলে
যদি আগমনকারী দাঁড়ানো অপছন্দ করেন, তবে দাঁড়ানো উচিত নয়।

৬. অপ্রয়োজনে দাঁড়ানো নিষেধ
কোনও উদ্দেশ্য ছাড়া দাঁড়িয়ে থাকা, বা কারও বসা অবস্থায় অন্যদের বিনা প্রয়োজনে দাঁড় করিয়ে রাখা নিষিদ্ধ। নবি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদিন সাহাবায়ে কেরামের উদ্দেশে বললেন,  لَا تَقُومُوا كَمَا تَقُومُ الْأَعَاجِمُ، يُعَظِّمُ بَعْضُهَا بَعْضًا
অর্থ, “তোমরা আজমিদের মতো দাঁড়িও না, যেখানে তারা একে অপরকে বড় করে সম্মান দেখানোর জন্য দাঁড়িয়ে থাকে।” (আবু দাউদ)

সারকথা হল, শরয়ি দৃষ্টিতে দাঁড়ানোর বিধান:

মুস্তাহাব — সম্মানিত ব্যক্তি, মা-বাবা, উস্তাদের আগমনে সম্মানার্থে দাঁড়ানো।

জায়েজ — ভালোবাসা, অভ্যর্থনা বা সফর শেষে আনন্দ প্রকাশে দাঁড়ানো।

হারাম — অহংকারবশত দাঁড়ানো পছন্দ করা ব্যক্তির জন্য দাঁড়ানো।

নিষিদ্ধ — অপ্রয়োজনে দাঁড়িয়ে থাকা বা কাউকে বিনা কারণে দাঁড় করিয়ে রাখা।

আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে শরীয়তের সঠিক নির্দেশনা অনুযায়ী আমল করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

এমএইচ/


সম্পর্কিত খবর

সর্বশেষ সংবাদ