বৃহস্পতিবার, ১৭ জুলাই ২০২৫ ।। ২ শ্রাবণ ১৪৩২ ।। ২২ মহর্‌রম ১৪৪৭

শিরোনাম :
হেফাজতের রাজশাহী জেলা ও মহানগরীর পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা গোলাপগঞ্জে গণঅভ্যুত্থানে শহীদদের স্মরণে আলোচনা সভা সিরিয়ায় ইসরায়েলের হামলা, এরদোয়ানের কঠোর বার্তা জুলাই আন্দোলনে মাদরাসা শিক্ষার্থীদের অবদান' শীর্ষক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত  নির্বাচন ঠেকাতে ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে: মির্জা ফখরুল ষড়যন্ত্রমূলক জঙ্গি মামলার প্রতিবাদে সরব হওয়ার আহ্বান আসিফ আদনানের সাজানো জঙ্গি মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে ওলামা মাশায়েখ পরিষদের মানববন্ধন পতিত ফ্যাসিস্ট-খুনীদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে: খেলাফত মজলিস ঢাকা-১৮ আসনে রিকশা প্রতীকে মনোনয়ন পেলেন মুফতি নেয়ামতুল্লাহ আমিন ৫ আগস্ট বন্ধ থাকবে ব্যাংক

ভারতে নতুন পাঠ্যবইয়ে আকবরকে বর্বর, বাবরকে নির্মম বলে উল্লেখ

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার
সম্রাট আকবরের রাজদরবার

ভারতবর্ষের ইতিহাসে মোগল শাসনামল একটি সোনালী অধ্যায় হিসেবে স্বীকৃত। তবে এবার সেই ইতিহাসে বিকৃতি ঘটাতে চলেছে নরেন্দ্র মোদির বিজেপি সরকার। এনসিইআরটির উদ্যোগে প্রকাশিত ‘এক্সপ্লোরিং সোসাইটি : ইন্ডিয়া অ্যান্ড বিয়ন্ড’ শীর্ষক পাঠ্যবইয়ে মোগল সম্রাটদের পরিচয় দেওয়া হয়েছে বর্বর ও নির্মম বলে।

অষ্টম শ্রেণির এই ইতিহাস বইয়ে আগে যেখানে আকবরের পরিচয় ছিল ‘মহামতি’ হিসেবে, সেখানে নতুন মুদ্রণে তাকে বিশেষায়িত করা হয়েছে ‘বর্বর’ হিসেবে। এবার থেকে তিনি ও তার শাসনকাল পরিচিত হবে এই বিশেষণে। আর তার পিতা বাবরকে বলা হয়েছে ‘নিষ্ঠুর নির্মম বিজেতা’।

এই পাঠ্যবইয়ের এক অধ্যায়ের নাম দেওয়া হয়েছে—‘নোট অন সাম ডার্কার পিরিয়ডস ইন হিস্ট্রি’, অর্থাৎ ‘ইতিহাসের কিছু অন্ধকার অধ্যায়’। এই অংশে যুদ্ধ, দমন-পীড়ন, শাসনগত নিষ্ঠুরতা ও সহিংসতার ঘটনাগুলোকে বিশেষভাবে তুলে ধরা হয়েছে।

পাঠ্যবইয়ে বলা হয়েছে, ‘অতীতের এসব ঘটনার জন্য বর্তমান প্রজন্মকে দায়ী না করে, শিক্ষার্থীদের উচিত এগুলোর ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট বোঝা।’

বইটিতে বলা হয়েছে, বাবর ছিলেন একদিকে সংস্কৃতিমনস্ক ও বুদ্ধিজীবী, অন্যদিকে ছিলেন রক্তপিপাসু বিজেতা। তিনি শহর দখলের পর সমগ্র জনগণকে হত্যা করেছিলেন, শিশু ও নারীদের দাসত্বে আবদ্ধ করেন এবং মৃত মানুষের মাথার খুলি দিয়ে তোরণ নির্মাণ করেন।

অন্যদিকে আকবরকে ইতিহাসে এতদিন “মহামতি” হিসেবে প্রশংসিত করা হলেও, নতুন পাঠ্যবইয়ের ভাষ্য অনুযায়ী তিনি একইসঙ্গে সহিষ্ণু এবং বর্বর ছিলেন। বইতে বলা হয়, তিনি প্রশাসনে অমুসলিমদের সংখ্যালঘুতে পরিণত করেন এবং চিতোরগড় অভিযানকালে ৩০ হাজার নিরস্ত্র নাগরিক হত্যার নির্দেশ দেন। পাশাপাশি উল্লেখ রয়েছে ‘জিজিয়া কর’-এরও। বলা হয়েছে, এটি ছিল অমুসলিমদের জন্য এক ধরনের অর্থনৈতিক ও ধর্মীয় চাপ।

বইয়ে ব্যাখ্যা করা হয়েছে, এই কর মূলত অমুসলিমদের রক্ষা ও সৈন্যবাহিনীতে অংশগ্রহণ না করার শর্তে বসানো হলেও বাস্তবে তা হয়ে উঠেছিল ধর্মান্তরের প্ররোচক ও অসম্মানজনক এক করব্যবস্থা।

নবম মোগল সম্রাট আওরঙ্গজেবকে এই বইয়ে চিহ্নিত করা হয়েছে ‘নির্মম সামরিক শাসক’ হিসেবে। বলা হয়েছে, তিনি একের পর এক মন্দির ও গুরুদ্বার ধ্বংস করেছেন এবং তার শাসনকাল ছিল সংখ্যালঘুদের ওপর চরম দমন-পীড়নের সময়।

মোগল শাসকদের নিষ্ঠুর হিসেবে তুলে ধরার পাশাপাশি তুলে ধরা হয়েছে মারাঠা, অহম, রাজপুত ও শিখদের বীরত্বগাথা। উল্লেখ রয়েছে জাট, ভিল, গোন্ড, সাঁওতাল ও কোচদের মতো উপজাতি গোষ্ঠীর- যারা কখনো নিজেদের এলাকা রক্ষায় পিছপা হননি।

ছত্রপতি শিবাজিকে বর্ণনা করা হয়েছে ‘দুর্দান্ত কুশলী’ নেতা হিসেবে, যিনি হিন্দু মূল্যবোধের পতাকা তুলে ধরার পাশাপাশি অন্য ধর্মকেও সম্মান জানাতেন। পাশাপাশি আহিল্যাবাঈ হোলকার, তারাবাঈর মতো নেতাদের দূরদর্শী নেতৃত্ব এবং সাংস্কৃতিক-রাজনৈতিক অবদানও পাঠ্যবইয়ে গুরুত্বসহকারে আলোচিত হয়েছে।

এনসিইআরটির পাঠ্যক্রম পর্যালোচনার অন্যতম সদস্য মাইকেল ড্যানিনো বলেছেন, ‘এই বইয়ের লক্ষ্য মোগলদের দানব হিসেবে চিত্রিত করা নয়, বরং ইতিহাসের সত্যকে সামনে আনা।’

ভারতের কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বিএল ভার্মা বলেছেন, ‘মোগলরা দীর্ঘ সময় ধরে ভারতে রাজত্ব করেছে। সেই সময়কালে কী ঘটেছে, তা জানা নতুন প্রজন্মের অধিকার। সবাইকে সত্য মেনে নিতে হবে।’

এমএইচ/

 


সম্পর্কিত খবর

সর্বশেষ সংবাদ