ভারতে ‘উদয়পুর ফাইলস: কানাইয়া লাল টেইলর হত্যা’ নামে একটি উস্কানিমূলক সিনেমা রিলিজ হওয়ার কথা ছিল। এর ট্রেলার প্রকাশিত হওয়ার পরই আঁচ করা যায় যে, এতে মুসলিম সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে বিদ্বেষ ছড়ানো হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে দিল্লি হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন ভারতের মুসলিমদের অন্যতম অভিভাবক, জমিয়তে উলামায়ে হিন্দের সভাপতি মাওলানা আরশাদ মাদানী। অবশেষে দীর্ঘ শুনানি শেষে দিল্লি হাইকোর্ট সেই সিনেমার ওপর স্থগিতাদেশ দিয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১০ জুলাই) দিল্লি হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ সিনেমাটি স্থগিতের রায় দেয়। সিনেমাটি আজ ১১ জুলাই মুক্তি পাওয়ার কথা ছিল।
আদালত নির্দেশ দেয় যে, আবেদনকারীরা যেন সিনেমাটোগ্রাফ আইন, ১৯৫২-এর ধারা ৬ অনুযায়ী জমা দেওয়া রিভিশন আবেদনের বিষয়ে দুই দিনের মধ্যে কেন্দ্রীয় সরকারকে জানায়। আর সরকারকে এক সপ্তাহের মধ্যে অন্তর্বর্তীকালীন স্বস্তির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে বলা হয়েছে। ততদিন পর্যন্ত সিনেমার মুক্তি স্থগিত থাকবে।
তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় মাওলানা আরশাদ মাদানী আদালতের এই আদেশকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, এটি সংবিধানের আধিপত্যের দৃঢ় প্রমাণ। তিনি বলেন, শিল্প ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা মানে এই নয় যে, কেউ সংবিধান বা নৈতিক সীমা লঙ্ঘন করবে। যদিও সিনেমায় কিছু কাটছাঁট করা হয়েছে, তবু এটি ঘৃণা ছড়ানোর বিপজ্জনক উপাদানে ভরপুর।
তিনি আশা প্রকাশ করেন, চূড়ান্ত রায় তাদের পক্ষে যাবে এবং এই অন্তর্বর্তী আদেশ একটি স্পষ্ট বার্তা দিয়েছে যে, মতপ্রকাশের স্বাধীনতারও সীমা আছে।
এর আগে গত সোমবার (৭ জুলাই) আইনজীবীর মাধ্যমে আবেদনটি করেন মাওলানা আরশাদ মাদানী। ভারতীয় গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, আবেদনে মাওলানা আরশাদ মাদানী দাবি করেছেন, ২৬ জুন, ২০২৫-এ মুক্তি পাওয়া সিনেমার ট্রেলারটি এমন সংলাপ ও দৃশ্যসমূহে পরিপূর্ণ যা ২০২২ সালে সাম্প্রদায়িক অসন্তোষ সৃষ্টি করেছিল এবং যার ফলে আবারও সেই একই সাম্প্রদায়িক অনুভূতিগুলো উসকে ওঠার পূর্ণ আশঙ্কা রয়েছে।
আবেদনে তিনি বলেন, সিনেমাটি প্রকৃতপক্ষে নির্লজ্জভাবে আদালতের দৃশ্য দেখায়, মামলার এক পক্ষকে সমর্থন করে এমন এক বর্তমান মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য তুলে ধরে এবং সেইসাথে একটি বিতর্কিত বক্তব্যও সরাসরি তুলে ধরা হয়েছে – যা রাজনীতিবিদ নুপুর শর্মা দিয়েছিলেন – যার ফলে সাম্প্রদায়িক সহিংসতা ছড়ায় এবং পরিণামে কানহাইয়া লালের নৃশংস হত্যাকাণ্ড ঘটে।
আবেদনে আরও বলা হয়, ট্রেলারটিই যথেষ্ট এটা দেখানোর জন্য যে, এটি অত্যন্ত উসকানিমূলক, যা সম্প্রদায়গুলোর মধ্যে বিভেদ তৈরি করতে সক্ষম এবং এর ফলে দেশজুড়ে জনশৃঙ্খলার গুরুতর ব্যাঘাত ঘটতে পারে। যেমনটি পূর্বেও একই বক্তব্যের ফলে ঘটেছিল, যা এখন সিনেমায় পুনরাবৃত্তি করা হয়েছে।
এনএইচ/