বিশেষ প্রতিনিধি
অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে দেশের আলেম-উলামা বলিষ্ঠ সমর্থন ও সহযোগিতার মাধ্যমে সরকারের পাশে রয়েছে। যেকোনো সংকটে ইসলামি দলগুলো সর্বাত্মক সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। পাশে দাঁড়িয়েছে সাধারণ আলেম-উলামা। তবে নারী সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন প্রকাশের মাধ্যমে সরকারের সঙ্গে আলেম-উলামার নিরবচ্ছিন্ন সম্পর্কে প্রথম ফাটল ধরে। এবার আরেক দফা সম্পর্কে ফাটল ধরতে যাচ্ছে নারী ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদের সাম্প্রতিক বিতর্কিত ও ইসলামবিদ্বেষী কিছু বক্তব্য ও কর্মকাণ্ডের কারণে।
হেফাজতে ইসলাম, তাহাফফুজে খতমে নবুওয়াতসহ ইসলামি রাজনৈতিক দলগুলো বিতর্কিত উপদেষ্টা শারমীন মুরশিদের কড়া সমালোচনা করেছে। তারা এই উপদেষ্টার পদত্যাগও দাবি করেছে। এই ইস্যুতে কোনো কোনো দল রাজপথে নামার কর্মসূচিও দিচ্ছে।
গত বৃহস্পতিবার (৩ জুলাই) সচিবালয়ে নিজ কার্যালয়ে ধর্ষণ বেড়ে যাওয়ার প্রেক্ষাপটে উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। সেখানে মাদরাসা শিক্ষাসহ ইসলামপন্থীদের নিয়ে বিষোদগার করেন। দেশের মাদরাসাগুলোতে শিশুদের যৌন নির্যাতন করা হচ্ছে দাবি করে উপদেষ্টা শারমীন বলেন, ‘মাদরাসাগুলো চোখের আড়ালে থাকে। তথ্য পাই না। সেখানে অনেক শিশুরা নানাভাবে যৌন নির্যাতনের শিকার হয়। এর ফলে তাদের বিকাশ হচ্ছে না। এ খবর অভিভাবক ও বড়রা রাখে না। তারা (মাদরাসা) স্বীকার করলো কি না জানি না, ঘটনা তো সামনে আসছে। এসব বন্ধে স্কুল-মাদরাসায় মন্ত্রণালয়ের লোকজন সরাসরি যাবে। তাদের জবাবদিহি করতে হবে, এটা আমার দাবি।’
উপদেষ্টা শারমীন মুরশিদ একজন এনজিও কর্মী হিসেবে পরিচিত। তিনি আগে থেকেই ইসলামবিরোধী নানা কর্মকাণ্ডের আশ্রয়-প্রশ্রয়দাতা হিসেবে পরিচিত। নতুন করে রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব পাওয়ার পর তার সেই পুরনো তৎপরতা আরও বেড়ে গেছে। উপদেষ্টা হয়েই গত বছরের ১৭ আগস্ট ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে একটি প্রতিবাদ সভায় অংশগ্রহণ করেন শারমীন মুরশিদ। এই সরকারকে তাদের সরকার উল্লেখ করে নারীবাদীদের কাছে তিনি কিছু প্রস্তাব চান। বলেন, ‘আমাকে কিছু প্রস্তাব দিতে পারবে? তাহলে আমরা ঝাঁপিয়ে পড়বো। আমি তোমাদের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করতো চাই। বলো, রাষ্ট্রীয় কাঠামো কীভাবে কাজে লাগাবো।’ এ সময় নারীরা ১৩ দফা দাবি পেশ করেন।
তন্মধ্যে ছিল: ধর্ম, গোত্র, বর্ণের ঊর্ধ্বে গিয়ে প্রতিটি লিঙ্গের মানুষের সম্পত্তিতে সমানাধিকার দিতে হবে।
ইউনিফর্ম ফ্যামিলি কোড চালু এবং বাস্তবায়ন করতে হবে।
সন্তানের অভিভাবকত্ব আইন পরিবর্তন করতে হবে। নারীকে সন্তানের অভিভাবকত্ব দিতে হবে।
নারী, আদিবাসী, প্রতিবন্ধী এবং ভিন্ন লৈঙ্গিক পরিচয়ের (ট্রান্স!) মানুষের প্রতিনিধিত্বের জন্য যৌক্তিক অনুপাতে কোটা বরাদ্দ দিতে হবে।
১৮৬০ সালের গর্ভপাতের আইন বাতিল করতে হবে। নারীকে গর্ভপাতের পূর্ণ স্বাধীনতা দিতে হবে।
নারী এবং লিঙ্গ বৈচিত্র্যের (ট্রান্স!) মানুষের জন্য সমান কর্মসংস্থানের সুযোগ দিতে হবে এবং নিরাপদ কর্মসংস্থান নিশ্চিত করতে হবে।
প্রতিটি ভিন্ন ভিন্ন লৈঙ্গিক পরিচয়ের (ট্রান্স!) মানুষের রাষ্ট্রীয় পরিচয়পত্রে তার লৈঙ্গিক পরিচয়ের স্বীকৃতি দিতে হবে।
সব ধরনের লৈঙ্গিক বৈষম্যকারী আইন (মূলত সমকামবিরোধী আইন ৩৭৭ ধারা) বাতিল করতে হবে।
সরকার গঠিত নারী কমিশন যে চরম ইসলাম বিদ্বেষী প্রতিবেদন দিয়েছে এর পেছনে মূলত হাত রয়েছে শারমীন মুরশিদের। কারণ তিনি এই মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা। কমিশনের সদস্যদের বাছাইয়ে মূল ভূমিকা তিনিই রাখেন। সামাজিক মূল্যবোধ এমনকি এদেশের সব ধর্মের মানুষের ধর্মীয় বিশ্বাস ও চেতনার বিরুদ্ধে গিয়ে বিদেশি এজেন্ডা বাস্তবায়নের সুপারিশ করেছিল এই কমিশন। শারমীন বিভিন্ন সময় তাদের কার্যক্রমে প্রশংসা এবং বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
এছাড়া ঢাকায় জাতিসংঘ মানবাধিকার পরিষদের অফিস স্থাপন কার্যক্রমে বিশেষ আগ্রহী ছিলেন শারমীন মুরশিদ। যা LGBTQ+ সহ নানা ধর্ম ও স্থানীয় সামাজিক মূল্যবোধ বিরোধী এজেন্ডা বাস্তবায়নে সহায়ক প্রতিষ্ঠান হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে বিভিন্ন দেশে। ইতোমধ্যে বাংলাদেশে জাতিসংঘের আবাসিক প্রতিনিধি হিসেবে ঘোষিত সমকামী রিচার্ড হাওয়ার্ডকে নিয়োগ দিয়ে এ্যাগ্রিমো চাওয়া হয়েছে, যিনি আবার তার সমকামী সঙ্গীকে নিয়ে আসতে চান বাংলাদেশে। (যে সমকামিতা শুধু এ দেশের সব ধর্মের মানুষের মতে অপরাধই নয়, প্রচলিত আইনেও অপরাধ)। বাংলাদেশে জেন্ডার সমতা তথা এলজিবিটি অধিকার বাস্তবায়নে সিডো সনদে বাংলাদেশের রিজার্ভড ধারাগুলো উঠিয়ে দিতে আহ্বান জানিয়েছেন উপদেষ্টা শারমীন। এটা নারী সংস্কার কমিশনও দাবি করেছে। এর মাধ্যে নারীর সম্পত্তির অধিকারের ইস্যু রয়েছে।
পর্নোগ্রাফির মৃদু সমালোচনা করে তিনি সেটা বন্ধ না করে নির্দিষ্ট বয়সে দেখার ব্যবস্থা রাখার পক্ষে মত দিয়েছেন। যদিও এ সংক্রান্ত সংবাদ নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা হওয়ায় কিছু গণমাধ্যম ওয়েবসাইট থেকে সেই সংবাদটি সরিয়ে ফেলেছে। বিয়ের বয়স কমানোর সমালোচনা করে শারমীন মুরশিদ বলেছেন, বিয়ের ক্ষেত্রে ছেলেমেয়েদের বয়স কমানো ছিল ভয়ংকর উদাহরণ। অর্থাৎ তিনি বিবাহকে নিরুৎসাহিত করে ব্যভিচারের পথ উন্মুক্ত রাখার নারীবাদী শ্লোগানের প্রত্যক্ষ প্রচারক।
মূলত এই শারমীন মুরশিদদের দীর্ঘদিনের টার্গেট বাংলাদেশে পশ্চিমাদের প্রেসক্রিপশন বাস্তবায়ন করা। জুলাই বিপ্লবে কোনো ধরনের ভূমিকা না রেখেও ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ঘনিষ্ঠজন হওয়ার সুবাদে উপদেষ্টা হয়ে যাওয়ার পর সেই সুযোগ কাজে লাগাতে ব্যস্ত এনজিও প্রতিনিধি শারমীন মুরশিদরা। তারাই মূলত এই সরকার থেকে ইসলামপন্থীদের দূরে সরানোর পাঁয়তারা করছেন।