শনিবার, ১২ জুলাই ২০২৫ ।। ২৮ আষাঢ় ১৪৩২ ।। ১৭ মহর্‌রম ১৪৪৭


জুলাইয়ের আকাঙ্ক্ষা ও স্বপ্ন রক্ষায় পিআরই একমাত্র সমাধান: পীর সাহেব চরমোনাই

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম পীর সাহেব চরমোনাই বলেছেন, আমাদের অতীতের আত্মত্যাগ বিফলে গেছে ভুল নীতি এবং অসুস্থ রাজনীতির কারণে। জুলাই অভ্যুত্থানকেও আমরা অতীতের মতো ব্যর্থ হতে দিতে পারি না। আবু সাঈদ ও মুগ্ধরা আমাদের স্মৃতিতে অম্লান হয়ে আছে। আহতরা এখনো ক্ষত বয়ে বেড়াচ্ছে। তাই প্রয়োজনীয় রাষ্ট্র সংস্কার এখনই করতে হবে। পতিত স্বৈরতন্ত্রের সাথে জড়িতদের বিচার করতে হবে।

শনিবার (১২ জুলাই) ‘অভ্যুত্থান পরবর্তী নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণে প্রয়োজনীয় রাষ্ট্রসংস্কার, গণহত্যার বিচার এবং জাতীয় নির্বাচনের পদ্ধতি’ বিষয়ে ইসলামী আন্দোলন আয়োজিত গোলটেবিল বৈঠকে সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। 

পীর সাহেব চরমোনাই বলেন, আরেকটা কথা স্পষ্ট ভাষায় বলে দিতে চাই, পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন আয়োজন করার কোনো বিকল্প নেই। গত ২৮ জুলাইয়ের জনসমুদ্র পিআর পদ্ধতির পক্ষে গণপ্রত্যাশার বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছে।

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির জুলাই আকাঙ্ক্ষার ধারাবাহিকতা রক্ষায় আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পরে রাষ্ট্র সংস্কার নিয়ে যে আকাঙ্ক্ষা তৈরি হয়েছে তা নিশ্চিত ও টেকসই করার একমাত্র রক্ষাকবচ হলো পিআর পদ্ধতির নির্বাচন। সংস্কারের ধারাবাহিকতা রক্ষায় পরবর্তী সরকারকে বাধ্য করার জন্য পিআরই একমাত্র উপায়। এর বাইরে নৈতিক বাধ্যবাধকতা ছাড়া আর কোনো উপায় নাই। আমরা দেখতে পাচ্ছি জুলাই সনদ নিয়ে ঐকমত্যে পৌঁছানো যাচ্ছে না। আবার জুলাই সনদের আইনি মর্যাদা নিয়েও মতানৈক্য রয়েছে। ফলে এখন চাপে পড়ে সংস্কারে রাজি হলেও পরবর্তী রাজনৈতিক সরকার সংস্কার বহাল রাখবে কি না সেই অনিশ্চয়তা এখনই দেখা দিয়েছে।

মুফতি রেজাউল করীম বলেন, ২০০৮ সালে ৪৯% ভোট পাওয়া সত্ত্বেও সংসদে দুই তৃতীয়াংশ আসন লাভ করে সংবিধান কাটা-ছেঁড়া করার একক কর্তৃত্ব পাওয়ার নজির আমাদের দেশে আছে। বিদ্যমান ব্যবস্থায় আগামী নির্বাচনেও একই পরিস্থিতির সম্ভাবনা আছে। তাই যদি হয় তাহলে সংস্কারের সকল চেষ্টা ভেস্তে যেতে পারে। তখন একক দলের সিদ্ধান্তে ‘আইনসম্মত’ভাবেই আমাদের সংস্কার চিন্তার মৃত্যু ঘটবে। অধিকাংশ মানুষের মতামত উপেক্ষা করে সংস্কার চিন্তাকে হত্যার সুযোগ তৈরি করে দেয়ার মতো ‘আইনি বৈধতা’ এনে দিতে পারে বর্তমান নির্বাচনী ব্যবস্থা। 

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির পিআরকেই রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার অন্যতম উপায় আখ্যায়িত করে বলেন, বিদ্যমান ব্যবস্থায় রাজনৈতিক দলের জনপ্রিয়তায় সামান্য পরিবর্তনের ফলে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি আমূল বদলে যায়। বাংলাদের নির্বাচন থেকেই দৃষ্টান্ত দেখা যাক। ২০০১ সালে আওয়ামী লীগ ৪০% ভোট পেয়ে আসন পেয়েছে মাত্র ২১%। আবার ২০০৮ সালে ৪৯% ভোট পেয়ে আসন পেয়েছে ৭৭%। অর্থাৎ মাত্র ৯% ভোট বেশি পাওয়ায় আসন বেড়েছে ৫৬%, মানে ৬ গুনের বেশি। 

পীর সাহেব চরমোনাই বলেন, বিএনপির ক্ষেত্রেও একই চিত্র। ২০০১ এ ৪৭% ভোট পেয়ে আসন পেয়েছে ৬৮% আর ২০০৮ সালে ৩৩% ভোট পেয়ে আসন পেয়েছে ১০%। ১৪% ভোট হ্রাস পাওয়ায় তার আসন হ্রাস পেয়েছে ৫৪%। ভোটের সামান্য ব্যবধানে আসনের এমন বড় উত্থান-পতনের কারণে রাজনৈতিক পরিস্থিতি ভারসাম্যহীন হয়। অল্পতেই কোন দল বিপর্যস্ত হয় আবার কোনো দল সীমাহীন ক্ষমতা পেয়ে যায়। বিদ্যমান নির্বাচনীব্যবস্থা এভাবেই রাজনীতিকে অস্থিতিশীল করে তোলে। 

এই দুই নির্বাচনে যদি পিআর পদ্ধতি থাকতো তাহলে চিন্তা করে দেখেন, দেশের সামগ্রিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি কেমন হতো? সম্ভবত ২০২৪ এ আমাদের এতো রক্ত দেয়ার মতো অবস্থাই তৈরি হতো না।

পীর সাহেব চরমোনাই পিআরকে রাজনৈতিক সংস্কৃতি পরিবর্তনের কার্যকর কৌশল অভিহিত করে বলেন, বাংলাদেশের রাজনীতি হলো পরস্পর বিনাশী। এই বিধ্বংসী রাজনীতির প্রতিফল আমরা ভোগ করে যাচ্ছি। কিন্তু পিআর পদ্ধতিতে যেহেতু সংসদে  প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক দলগুলোর উপস্থিতি জোড়ালো থাকে এবং সরকার গঠনে যেকোনো রাজনৈতিক দলের সমর্থনের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয় সেজন্য দলগুলোকে বাধ্য হয়েই অন্যদলের সাথে সহ-অবস্থান ও সহনশীল অবস্থান ধরে রাখতে হয়। আমাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতি পরিবর্তনের জন্য এর চেয়ে উত্তম আর কী হতে পারে।

ইসলামী আন্দোলনের আমির পিআরকে নির্বাচনী কারচুপি রোধের উপায় হিসেবে উপস্থাপন করে বলেন, পিআর পদ্ধতিতে ভোটের অনুপাতের সামান্য পরিবর্তনে বড় কোনো পরিবর্তন আসে না। বড় পরিবর্তন করতে বড় ধরনের কারচুপির প্রয়োজন হয়। ছোট কারচুপি যত সহজে করা যায় বড় কারচুপি তত সহজে করা যায় না বলে সামগ্রিক কারচুপির প্রবণতাই কমে যায়। আবার বিদ্যমান পদ্ধতিতে স্থানীয় ফলাফলের ওপরে এলাকার প্রার্থীর ভাগ্য নির্ভর করে। এমপি হওয়ার তাকিদে প্রার্থীরা ভোট ডাকাতির চূড়ান্ত করে। কিন্তু পিআরে যেহেতু স্থানীয় রাজনীতিবিদদের প্রত্যক্ষ ভাগ্য জড়িত থাকে না তাই তারা বেশি ভোট পাওয়ার জন্য বেপরোয়া হয়ে ওঠে না। ফলে নির্বাচনে কারচুপির সম্ভাবনা অনেকাংশে কমে যায়।

পীর সাহেব চরমোনাই পিআরকে মাদার অফ অল রিফর্ম আখ্যা দিয়ে বলেন, বাংলাদেশের বাস্তবতায় জুলাইয়ের চেতনা, আকাঙ্ক্ষা ও স্বপ্ন রক্ষায় পিআর-ই হলো একমাত্র সমাধান। পিআর-ই হলো ‘মাদার অফ অল রিফর্ম।’

গোলটেবিল বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া মোহাম্মাদ গোলাম পরওয়ার, নাগরিক ঐক্যের চেয়ারম্যান মাহমুদুর রহমান মান্না, এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু, খেলাফত মজলিসের মহাসচিব ড. আহমাদ আব্দুল কাদের, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসরএ কে এম ইউসুফ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. মুহাম্মদ শহীদুল হক, ড. মোহাম্মদ মহিউদ্দিন, জনতা পার্টি বাংলাদেশের গোলাম সারোয়ার মিলন, এনসিপির জাবেদ রাসিল, রাজনৈতিক বিশ্লেষক ড. ফয়জুল হক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. শেখ মো. ইউসুফ, আরিফুল ইসলাম অপু, হাবিবুর রহমান রিজু, মাওলানা মুসা বিন ইজহার, ড. এ. আরমান, অ্যাডভোকেট শিশির মনির, মাওলানা আতাউল্লাহ আমিন, মাওলানা ফজলুর রহমান, মাওলানা মুজিবুর রহমান হামিদী, ফাহিম মাসরুর প্রমুখ। 

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের নেতৃবৃন্দের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, দলের মহাসচিব অধ্যক্ষ হাফেজ মাওলানা ইউনুস আহমদ, প্রেসিডিয়াম সদস্য মাওলানা সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানী, অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান,যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা গাজী আতাউর রহমান, ইঞ্জিনিয়ার আশরাফুল আলম,মাওলানা শেখ ফজলে বারী মাসউদ, সহকারী মহাসচিব কে এম আতিকুর রহমান, ইসলামী শ্রমিক আন্দোলন সেক্রেটারি জেনারেল কেএম বিল্লাল হোসেন, ইসলামী যুব আন্দোলন বাংলাদেশের সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার আতিকুর রহমান মুজাহিদ প্রমুখ।

এমএইচ/


সম্পর্কিত খবর

সর্বশেষ সংবাদ