রবিবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪ ।। ১৪ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫


ইসলামে শ্রমিকের অধিকার

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

|| শায়খ সাজিদুর রহমান ||

আল্লাহ রাব্বুল আলামীন মানবজাতির কল্যাণ ও সফলতার জন্য স্বভাব-অনুকূল জীবন ব্যবস্থা হিসাবে ইসলাম ধর্ম দান করেছেন। জগতের কর্মকাণ্ড যথাযথ পরিচালনার জন্য আল্লাহ তাআলা মানুষকে 'দায়িত্বশীল ও অধীনস্থ', 'কর্মকর্তা ও কর্মচারী', 'মালিক ও শ্রমিক' এমন দুটি শ্রেণীতে বিন্যাস করেছেন। কুরআন মাজীদের

কটি আয়াতে ইরশাদ হয়েছে: পার্থিব জীবনে তাদের জীবিকা তো আমিই বণ্টন করেছি এবং আমিই তাদের একজনকে অপরজনের উপর মর্যাদায় উন্নত করেছি, যাতে তাদের একে অন্যের দ্বারা কাজ নিতে পারে। সূরা যুখরুফ: ৩২

সুতরাং 'দায়িত্বশীল ও অধীনস্ত' এবং 'মালিক-শ্রমিক' সম্পর্ক জগতের স্বাভাবিক একটি ধারা। এরই মাধ্যমে জগৎ সচল ও অগ্রসরমান। ইসলামের বড় একটি সৌন্দর্য, ইসলাম এই সম্পর্ককে অন্যরকম মহিমা দান করেছে, যা এই সম্পর্ককে অনেক বেশি ফলপ্রসূ এবং কল্যাণমুখী বানিয়েছে। রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাদিসে বিষয়টি খুব চমৎকার এসেছে।

দাস ও শ্রমিকদের সম্পর্কে তিনি বলেছেন, ‘তারা তোমাদের ভাই, আল্লাহ তাদেরকে তোমাদের অধীন করেছেন। অতএব, আল্লাহ কারও ভাইকে তার অধীন করে দিলে সে যা খাবে, তাকে তাই খাওয়াবে এবং সে যা পরিধান করবে, তাকে তা থেকে পরিধান করতে দেবে। আর যে কাজ তার জন্য কষ্টকর ও সাধ্যাতীত, তা করার জন্য তাকে বাধ্য করবে না। আর সে কাজ যদি তার দ্বারাই সম্পন্ন করতে হয়, তবে সে তাকে অবশ্যই সাহায্য করবে।’ (সহীহ বুখারী: ৩০; সহীহ মুসলিম: ১৬৬১)

আরেক হাদিসে নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন 'তোমরা শ্রমিকের পারিশ্রমিক পরিশোধ করে দাও তার ঘাম শুকানোর আগে আগে"। সুনানে ইবনে মাজা।

এটা ইসলামের অনেক বড় সৌন্দর্য ও মহত্ত্ব যে, ইসলাম 'শ্রমিক-মালিক ভাই ভাই' এই দীক্ষা দান করেছে। ভ্রাতৃত্বের সম্পর্ক পরস্পরের প্রতি দয়া-মায়া, সহানুভূতি, দায়িত্বসচেতনতা, কর্তব্যনিষ্ঠা ইত্যাদি বৈশিষ্ট্যকে বোঝায়। এ বিষয়ে ইসলামের শিক্ষা অনেক দীর্ঘ ও বিস্তৃত।

তবে ইসলাম শ্রমিকদেরকেও যথাযথ দায়িত্ববান, বিশ্বস্ত ও কর্মপরায়ণ হওয়ার শিক্ষা দিয়েছে, কুরআন মাজীদে ইরশাদ হয়েছে, আপনি কাউকে শ্রমিক হিসেবে নিয়োগ করতে চাইলে এমন ব্যক্তি উত্তম যে শক্তিমান হবে এবং বিশ্বস্তও হবে। সূরা কাসাস:২৬।

এই আয়াত থেকে আমরা পাই, শ্রমিকের বৈশিষ্ট্য হবে কর্মঠতা, দায়িত্বশীলতা, কর্মপরায়ণতা, সেইসঙ্গে বিশ্বস্ততা ও আমানতদারি।

বর্তমান সময়ে শ্রমিক-দিবস থাকলেও মালিক-শ্রমিক বৈষম্য প্রবল। শ্রমিকরা বিভিন্নভাবে অবহেলিত, অধিকার থেকে বঞ্চিত। শ্রমিকের যথাযথ অধিকার ইসলাম নিশ্চিত করেছে। শুধু মে দিবসে অনুষ্ঠান সর্বস্বতা দিয়ে শ্রমিকের অধিকার যথাযথ আদায় হতে পারে না। এই দিনে আমরা আহ্বান করছি, ইসলামের আলোকে শ্রমিকের যথাযথ অধিকার আদায় করতে হবে। তাহলেই আমাদের কর্মজগৎ সুশৃংখল, ফলপ্রসূ, কল্যাণমুখী হবে।

আজ মে দিবসের এই দিনে আমরা ইসলামের মহিমান্বিত শিক্ষা নিজেদের জীবনে প্রয়োগ ও বাস্তবায়ন করার সংকল্প করতে পারি। আল্লাহ তাওফীকদাতা।

লেখক: প্রতিষ্ঠাতা মুহতামিম, জামিয়া দারুল আরকাম আল-ইসলামিয়া ব্রাহ্মণবাড়িয়া।

কেএল/


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ