মাওলানা মুহাম্মাদ আবু সালেহ।। : কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগী বৃদ্ধির সাথে সাথে বিগত দেড় দুই বছরে অক্সিজেনের প্রয়োজনীয়তা এবং এর অভাবজনিত কারণে পরিস্থিতি কতটা জটিল আকার ধারণ করতে পারে, আমরা খুব ভালোভাবে উপলব্ধি করতে সক্ষম হয়েছি।
করোনা বৃদ্ধির একটা পর্যায়ে অন্যান্য অনেক দেশের মত আমাদের দেশেও অসম্ভব রকম বেড়ে গিয়েছিল অক্সিজেনের হাহাকার। তখন বিপদগ্রস্ত অসহায় অনেক মানুষের কাছে একটি অক্সিজেন সিলিন্ডার হয়ে উঠেছিল সবচেয়ে প্রার্থিত ও দুর্লভ জিনিসগুলোর মধ্যে অন্যতম। করোনায় আক্রান্ত অনেক রোগীকেই শ্বাসকষ্টের জন্য কৃত্রিমভাবে অক্সিজেন দেওয়ার প্রয়োজন দেখা দেয়ায় মুমূর্ষু প্রিয়জনদের বাঁচানোর প্রয়োজনে অনেক মানুষ তখন হন্যে হয়ে অক্সিজেন সিলিন্ডারের খোঁজ করেছে।
বাসায় বা হাসপাতালে সিলিন্ডার নিয়ে যেতে দেখা গেছে অনেককে। সত্যি কথা বলতে, ইতোপূর্বে অক্সিজেনের এমন প্রয়োজনীয়তা স্মরণকালে আর কখনও এত ব্যাপকাকারে দেখা দিয়েছে বলে জানা যায় না।
করোনা মহামারির সর্বগ্রাসী এই ঝড় মানুষকে হাড়ে হাড়ে টের পাওয়ার সুযোগ দিয়েছে যে, প্রতিদিন তারা মহান আল্লাহর দেয়া কি পরিমান অমূল্য নেআমত ভোগ করে চলেছেন। অক্সিজেন সত্যিই এক নেআমত বটে। মহান মালিকের দেয়া এমন আরও কত যে নেআমতে ডুবে আছি আমরা, তার হিসাব করারই বা সময় আমাদের কোথায়? তাঁর দেয়া অফুরন্ত সকল নেআমতের হিসাব আসলে করা কখনোই আমাদের পক্ষে সম্ভবও নয়। পবিত্র কুরআনে হাকিমে সে কথাই তিনি জানিয়ে দিয়েছেন আমাদেরকে। ইরশাদ হয়েছে,
وَإِن تَعُدُّوا نِعْمَةَ اللَّهِ لَا تُحْصُوهَا ۗ إِنَّ اللَّهَ لَغَفُورٌ رَّحِيمٌ
‘তোমরা আল্লাহর অনুগ্রহ গণনা করলে তার সংখ্যা নির্ণয় করতে পারবে না। আল্লাহ তো অবশ্যই ক্ষমাপরায়ণ, পরম দয়ালু।’ -সুরা আন নাহল, আয়াত ১৮
আমাদের এই জীবন এবং বেঁচে থাকা মহান আল্লাহর বিশেষ অনুগ্রহ ছাড়া কিছুই নয়:
বস্তুতঃ মানুষের অস্তিত্বই মহান আল্লাহ তাআ'লার বিশেষ অনুগ্রহ মাত্র। তিনি দয়া করে জীবন দিয়েছেন। পৃথিবীর আলো বাতাস আর বিচিত্র শোভা, সৌন্দর্য্য এবং বিমুগ্ধতা দর্শনের সুযোগ দিয়েছেন। তিনি নিয়েও নেন এই জীবন। যে কোনো সময়। যখন খুশি। যেখানে খুশি। যেভাবে খুশি। তিনি ইচ্ছে করলেই আমাদের পার্থিব জীবনের পরিসমাপ্তি ঘটে যায়। মহাকালের বিশালতার তুলনায় অতি ক্ষুদ্র ও খুবই সংক্ষিপ্ত সময়ের আমাদের এই জীবন মূলতঃ তাঁর ইচ্ছে এবং ইশারা ছাড়া কিছুই নয়। পবিত্র কুরআনে হাকিমে তিনি ইরশাদ করেন,
وَيَسْأَلُونَكَ عَنِ الرُّوحِ ۖ قُلِ الرُّوحُ مِنْ أَمْرِ رَبِّي وَمَا أُوتِيتُم مِّنَ الْعِلْمِ إِلَّا قَلِيلًا
তারা আপনাকে রূহ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে। বলে দিনঃ রূহ আমার পালনকর্তার আদেশ ঘটিত। এ বিষয়ে তোমাদেরকে সামান্য জ্ঞানই দান করা হয়েছে। -সুরা: বনি ইসরাঈল, আয়াত: ৮৫
পার্থিব জীবনের অতিব প্রয়োজনীয় উপকরণগুলোকে সহজলভ্য করে দিয়েছেন আল্লাহ তাআ'লা:
এটা মহান আল্লাহ তাআ'লার পক্ষ থেকে বিশাল বড় নেআমত যে, তিনি আমাদের পার্থিব জীবনের অতিব প্রয়োজনীয় এমন অনেক উপকরণকে সহজলভ্য করে দিয়েছেন। তাবত প্রাণিকুলের বেঁচে থাকার জন্য তিনি সকলের জীবন-জীবিকার পথ সুগম করেছেন। আমাদের রুটি রুজি অন্ন সংস্থানের প্রয়োজনে চাষাবাদের জন্য পৃথিবী পৃষ্ঠদেশকে বিছানার মত সমতল করেছেন। ভূমির উপরিভাগের আবরণকে উর্বর এবং ফসল উৎপাদনের উপযোগী বানিয়েছেন।
বাতাস, ছায়া ও অক্সিজেনের জন্য সবুজ বনবনানী, অরণ্য এবং বৃক্ষরাজী সৃষ্টি করেছেন। বৃক্ষরাজী ও গাছপালা যদি অক্সিজেন সরবরাহ না করতো, অবস্থা কি হতো ভাবা যায়? অনন্ত মহাবিশ্বের দিগন্তহীন শুণ্যতায় ক্ষুদ্র এই পৃথিবীই একমাত্র ভাসমান গ্রহ বিন্দু, যেখানে রয়েছে প্রাণের মেলা, হাজারো প্রাণবান সত্ত্বার অস্তিত্বের বিপুল সমাহারে বিমুগ্ধতা সৃষ্টির এমন বর্ণিল সপ্নিল জগত আর কোথাও আছে কি? হয়তো নেই। হয়তো আছে। বিজ্ঞানীরা তন্ন তন্ন করে খুঁজছেন সেই রহস্য। প্রাণের রহস্য। আরও কোনো গ্রহে প্রাণের অস্তিত্ব রয়েছে কি না। পৃথিবীর বাইরে আরও কোথাও আমাদের মত এমন বুদ্ধিমান প্রাণির বসবাস রয়েছে কি না। সভ্যতার বিকাশ ঘটেছে কি না। অদ্যাবধি সে রহস্যের পেছনে অব্যাহতভাবে ছুটে চলেছেন তারা।
বাতাসের উপাদান: ভূপৃষ্ঠের নির্মল বাতাসে ৭৮% নাইট্রোজেন, ২১% অক্সিজেন এবং মোটামুটি ১% নোবেল গ্যাস থাকা উচিত। এছাড়া কার্বন ডাই অক্সাইড থাকে প্রায় ০.০৪%।
যতক্ষণ পর্যন্ত বাতাসে অক্সিজেনের পরিমাণ ১৮%-এর বেশি থাকে ততক্ষণ পর্যন্ত সেই বাতাস মানুষের পক্ষে দ্বিধাহীন ভাবে গ্রহণযোগ্য। বরং বাতাসে কার্বন ডাই অক্সাইডের পরিমাণ বেড়ে গেলে বাতাসের গুণমান খারাপ হয়ে যায়। কার্বন ডাই অক্সাইডের পরিমাণ যদি ০.১% হয় তাহলেই বাতাসকে খারাপ বলে ধরা হয়। সেটা ১% হলে শরীরে তার প্রভাব পড়ে। এই সময় মাথাব্যথা ও শারীরিক ক্লান্তি বোধ হয়।
প্রতিদিন আমরা কত টাকার অক্সিজেন বিনা মূল্যে গ্রহণ করি?
আপনাকে যদি প্রশ্ন করা হয় যে, সারা দিনে আপনি কতটুকু পানি পান করেন? উত্তরটা তেমন কঠিন নয় বিধায় আপনি হয়তো বলবেন যে, চার গ্লাস বা আট গ্লাস।
অথবা, আরও কম বেশি পানির একটা পরিমান আপনি উল্লেখ করবেন। কিন্তু আপনাকে যদি প্রশ্ন করা হয় যে, আপনি প্রতি দিন কতটুকু পরিমান অক্সিজেন গ্রহণ করেন? তাহলে উত্তরটা চট করে দিতে পারবেন? হয়তো পারবেন না। কারণ, অক্সিজেনের বাজার দর সচরাচর সকলের জানার কথা নয়, তেমনি এর ব্যবহারের পরিমানও অনেকেরই অজানা।
তবে এটা জানতে হলে খুব বেশি কষ্ট করতে হবে বিষয়টা এমন নয়। এই সংক্রান্ত কেনাকাটার বাজারে একটু ঢু দিলেই চলবে। বস্তুতঃ অক্সিজেন যদি কিনে ব্যবহার করতে হতো, ক্ষমতাধর ব্যক্তি এবং রাষ্ট্রগুলো দুর্বল এবং অসহায় মানুষদের শায়েস্তা করার জন্য অস্ত্র বানানোর প্রতিযোগিতায় মনযোগী না হয়ে সম্ভবতঃ অক্সিজেনকেই অস্ত্র হিসেবে বেছে নিত এবং অক্সিজেনের দাম বাড়িয়ে দিয়ে কিংবা ইচ্ছে হলে সরবরাহ বন্ধ করে দিয়ে অনেক এলাকার মানব বসতি শুণ্যের কোটায় নামিয়ে নিয়ে আসতো।
একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ প্রতি মিনিটে গড়ে ১৭ বার শ্বাসগ্রহণ করেন। শিশুরা অবশ্য এর চেয়ে কিছু বেশি বার শ্বাস নেয়। দেখা গেছে, প্রতিবার শ্বাস গ্রহণে ০.৫ লিটার বাতাস শরীরে প্রবেশ করে। এই হিসেবে আমাদের শরীরে প্রতি মিনিটে ৮.৫ লিটার এবং সারা দিনে ১২,০০০ লিটার বাতাস প্রবেশ করে।
তবে এই মান কয়েকটি বিষয়ের ওপরে নির্ভরশীল যেমন, শরীরে আকৃতি, টাইডাল ভলিউম ও শ্বাসগ্রহণের হার। সুতরাং, ধরে নেওয়া যেতে পারে, ওই সব শর্ত এবং বাতাসে উপস্থিত অক্সিজেনের শতকরা হিসেবের হারে ধরে নেওয়া যেতে পারে যে, প্রতিদিন আমরা ৫০০ থেকে-২,০০০ লিটার অক্সিজেন গ্রহণ করে থাকি। মনে রাখতে হবে, বেশি হাঁটাহাঁটি কিংবা খেলাধূলা করলে পরিশ্রমহীন জীবনযাপনের তুলনায় অক্সিজেন চাহিদার পরিমান বেড়ে যায়। -সূত্র: Click This Link
অবশ্য হেলথ ডট হাউ স্টাফ ওয়ার্কস ডটকম হতে প্রাপ্ত তথ্যমতে, প্রতিদিন একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ গড়ে ৫৫০ লিটার বা ১৯ কিউবিক ফুট বিশুদ্ধ অক্সিজেন গ্রহণ করে। তবে বিপুল পরিমান এই অক্সিজেন গ্রহণের বিনিময়ে কাউকে কোনো দিন কোনো অর্থ গুনতে হয় না। ধনী-গরিব সকলে একইভাবে এই নেআমত ভোগ করে।
অথচ করোনা আক্রান্ত হয়ে বা অন্য কোনো কারণে যদি কাউকে কৃত্রিমভাবে অক্সিজেন গ্রহণ করতে হয়, তাহলে বর্তমান বাজারমূল্য অনুযায়ী ১.৪ কিউবিক মিটারের একটি সিলিন্ডার কেনার জন্য গুনতে হচ্ছে প্রায় ৪৭ হাজার টাকা। এর মধ্যে সিলিন্ডারের দাম বাবদ ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা বাদ দিলেও শুধু ১.৪ কিউবিক মিটার অক্সিজেনের দাম দাঁড়ায় ২২ থেকে ২৭ হাজার টাকা।
একটি অক্সিজেন সিলিন্ডারের সাথে ট্রলি, ফ্লো মিটার, ক্যানোলা ও মাস্ক দেয়া হয় ৷সাধারণত বাড়িতে ব্যবহারের জন্য একটি সিলিন্ডারে এক হাজার ৪০০ লিটারের (১ দশমিক ৪ কিউবিক মিটার) অক্সিজেন থাকে যা ব্যবহার করা যায় এক হাজার ২০০ মিনিট বা ২০ ঘন্টার মত সময়। করোনাকালিন বাজার দর থেকে একটু কমিয়ে যদি ১.৪ কিউবিক মিটার অক্সিজেনের দাম ২০ হাজার টাকা ধরি, তাহলে প্রতি কিউবিক মিটার অক্সিজেনের দাম পড়ে ১,০০০/- টাকা। তার অর্থ হচ্ছে, প্রতিদিন একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ ২৪,০০০/- হাজার টাকার অক্সিজেন বিনা মূল্যে গ্রহণ করে। প্রতি দিনের ব্যবহৃত অক্সিজেনের মূল্য যদি ২৪,০০০/- টাকা হয় তাহলে এক মাসের ব্যবহৃত অক্সিজেনের মূল্য কত আসে? ২৪,০০০/- * ৩০ = ৭,২০,০০০/- (সাত লক্ষ বিশ হাজার) টাকা। তাহলে এক বছরের হিসেবটা কেমন হতে পারে? একটু কি দেখে নিব? চলুন, দেখেই নিই, ৭,২০,০০০/- * ১২ = ৮৬,৪০,০০০/- (ছিয়াশি লক্ষ চল্লিশ হাজার) টাকা মাত্র। সুবহানাল্লাহ।
তার মানে, প্রতি বছর আমরা একেকজন মানুষ ৮৬,৪০,০০০/- (ছিয়াশি লক্ষ চল্লিশ হাজার) টাকা, অর্থাৎ, প্রায় কোটি টাকার অক্সিজেন বিনামূল্যে গ্রহণ করে যাচ্ছি। ৬০, ৭০ কিংবা ৮০ বছর বেঁচে থাকা একজন মানুষের পুরো জীবনে ব্যবহৃত শুধুমাত্র অক্সিজেনের মূল্য কত কোটি টাকা হতে পারে? ভাবা যায়? আল্লাহ তাআ'লার দয়ার কি কোন সীমা-পরিসীমা আছে?
অক্সিজেন ব্যবহারের নির্দিষ্ট মাত্রা নেই, যার যতটুকু প্রয়োজন সে ততটুকুই গ্রহণ করবে:
অক্সিজেন গ্রহণের নির্দিষ্ট কোন পরিমান নেই। প্রত্যেক ব্যক্তির যে পরিমান অক্সিজেনের প্রয়োজন স্বাভাবিক থাকার জন্য, সে পরিমান অক্সিজেন গ্রহণ করতে হবে। অর্থাৎ, অক্সিজেন নেওয়া মাঝে মাঝে বন্ধ করা যাবে না। কারণ অক্সিজেন বন্ধ করলে প্রয়োজনীয় অক্সিজেনের অভাবে আমাদের মস্তিষ্কের বিভিন্ন কোষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
তাছাড়াও লাইসোসোম আমাদের শরীরের রোগ জীবণু ধ্বংস করে। সুতারাং অক্সিজেন যদি বন্ধ করা হয় লাইসোসোমের পর্দা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সেজন্য সুস্থ সবল জীবণ যাপন করতে হলে অক্সিজেন যার যা প্রয়োজন গ্রহন করতে হবে। পরিমানে কম গ্রহন করা ঠিক নয়। আবার মাত্রাঅতিরিক্ত ও গ্রহণ করতে চেষ্টা করাটা ঠিক নয়।
অক্সিজেন মহান আল্লাহর অনন্য এক নেআমত:
অক্সিজেন মহান আল্লাহর নেআমত। মানুষের প্রয়োজনীয় অক্সিজেন, খাবার, ওষুধ সরবরাহের জন্য তিনি গাছ সৃষ্টি করেছেন। পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে,
الَّذِي جَعَلَ لَكُم مِّنَ الشَّجَرِ الْأَخْضَرِ نَارًا فَإِذَا أَنتُم مِّنْهُ تُوقِدُونَ ‘তিনি তোমাদের জন্য সবুজ গাছ থেকে আগুন উৎপাদন করেন, ফলে তোমরা তা থেকে আগুন প্রজ্বলিত করে থাকো।’ -সুরা ইয়াসিন, আয়াত ৮০
অন্য আয়াতে ইরশাদ হয়েছে, أَفَرَأَيْتُمُ النَّارَ الَّتِي تُورُونَ أَأَنتُمْ أَنشَأْتُمْ شَجَرَتَهَا أَمْ نَحْنُ الْمُنشِئُونَ
‘তোমরা যে আগুন প্রজ্বলিত করো সে ব্যাপারে আমাকে বলো, তোমরাই কি এর গাছ সৃষ্টি করো, নাকি আমরা সৃষ্টি করি?’ -সুরা ওয়াকিয়া, আয়াত ৭১-৭২
উল্লেখ্য, আগুন কখনো একা জ্বলতে পারে না। জ্বলতে হলে বাতাসের প্রয়োজন হয়। আর বাতাসে থাকে নানা ধরনের গ্যাস। এর মধ্যে একটি গ্যাসের নাম অক্সিজেন। আগুন অক্সিজেন গ্যাসের সাহায্য নিয়ে জ্বলে ওঠে। অক্সিজেন গ্যাস নিজে জ্বলে না, কিন্তু অন্যকে জ্বলতে সাহায্য করে।
ইউনুস আলাইহিস সালামকে অক্সিজেন সরবরাহ করতে গাছের ব্যবস্থা করা হয়েছিল তৃণহীন ভূমিতে:
মহান আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআ'লা যখন তাঁর নবী হযরত ইউনুস আলাইহিস সালামকে মাছের পেট থেকে মুক্তি দিলেন, তখন তাঁর প্রয়োজনীয় খাদ্য ও অক্সিজেনের জন্য তরুলতাহীন ভূমিতেই একটি লতাবিশিষ্ট গাছের ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন। কারণ, দীর্ঘদিন মাছের পেটে অবস্থান করার কারণে তিনি বেশ অসুস্থ ছিলেন। পবিত্র কুরআনুল কারিমে ইরশাদ হয়েছে,
فَالْتَقَمَهُ الْحُوتُ وَهُوَ مُلِيمٌ فَلَوْلَا أَنَّهُ كَانَ مِنَ الْمُسَبِّحِينَ لَلَبِثَ فِي بَطْنِهِ إِلَىٰ يَوْمِ يُبْعَثُونَ فَنَبَذْنَاهُ بِالْعَرَاءِ وَهُوَ سَقِيمٌ وَأَنبَتْنَا عَلَيْهِ شَجَرَةً مِّن يَقْطِينٍ
‘অতঃপর এক বড় আকারের মাছ তাঁকে গিলে ফেলল, আর তিনি ছিলেন ধিকৃত। অতঃপর তিনি যদি আল্লাহর পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণাকারীদের অন্তর্ভুক্ত না হতেন, তাহলে তাঁকে উত্থানের দিন পর্যন্ত (কিয়ামত পর্যন্ত) থাকতে হতো তার (মাছের) পেটে। অতঃপর ইউনুসকে আমরা নিক্ষেপ করলাম এক তৃণহীন প্রান্তরে এবং তিনি ছিলেন অসুস্থ। আর আমি তাঁর ওপর ইয়াকতিন প্রজাতির এক গাছ উদ্গত করলাম...।’ -সুরা আসসফফাত, আয়াত ১৪২-১৪৬
ইয়াকতিন আরবি ভাষায় এমন ধরনের গাছকে বলা হয়, যা কোনো গুঁড়ির ওপর দাঁড়িয়ে থাকে না। বরং লতার মতো ছড়িয়ে যেতে থাকে। যেমন—লাউ, তরমুজ, শসা ইত্যাদি।
অনেক তাফসিরবিদদের মতে, এটি ছিল লাউগাছ। রাসুলে আকরাম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজেও লাউ খেতে পছন্দ করতেন। মোটকথা, সেখানে অলৌকিকভাবে এমন একটি লতাবিশিষ্ট বা লতানো গাছ উৎপন্ন করা হয়েছিল, যার পাতাগুলো ইউনুস আলাইহিস সালামকে ছায়া ও অক্সিজেন দিচ্ছিল এবং ফলগুলো একই সঙ্গে তাঁর জন্য খাদ্য সরবরাহ করছিল এবং পানিরও জোগান দিচ্ছিল।
ডুবে আছি অফুরন্ত নেআমতে, ভেবে দেখার নেই অবসর:
এভাবেই মহান আল্লাহ তাঁর প্রিয় বান্দাদের অসংখ্য নেআমতে আবৃত করে রাখেন, যা স্বাভাবিক অবস্থায় তারা কোনো দিন উপলব্ধিই করে না। এ কারণেই হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, হযরত মাইমুন বিন মাহরান রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসুলে আকরাম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন,
قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم لِرَجُلٍ وَهُوَ يَعِظُهُ " إغْتَنِمْ خَمْسًا قَبْلَ خَمْسٍ ، شَبَابَكَ قَبْلَ هَرَمِكَ وَصِحَّتَكَ قَبْلَ سَقَمِكَ وَغِنَاكَ قَبْلَ فَقْرِكَ وَفِرَاغَكَ قَبْلَ شُغْلِكَ وَحَيَاتَك قَبْلَ مَوْتِكَ .
‘তোমরা পাঁচটি অবস্থায় পতিত হওয়ার আগে পাঁচটি জিনিসকে মূল্য দাও। ১) বৃদ্ধ হওয়ার আগে যৌবনকে। ২) রোগ আক্রমণ করার আগে সুস্থতাকে। ৩) কর্মব্যস্ততার আগে অবসর সময়কে। ৪) মৃত্যু আসার আগে জীবনকে। ৫) দরিদ্রতা আসার আগে সচ্ছলতাকে।’ -মুসতাদরাকে হাকিম, হাদিস : ৭৯১৬, তিরমিজি, মুসলিম, বাইহাকি, এ হাদিসটি হযরত ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকেও বর্ণিত হয়েছে।
অত্র হাদিসের মূল বক্তব্য হচ্ছে, জীবনের সুস্থতা, অবসর, যৌবন ও সচ্ছলতাকে সঠিক নিয়মে কাজে লাগাতে হবে। এগুলো আল্লাহর অমূল্য নিয়ামত, তবে মানুষ সঠিক সময়ে এগুলোর মূল্যায়ন করে না। এত এত নিয়ামত পেয়েও মহান আল্লাহর শুকরিয়া জ্ঞাপন করে না। পরে যখন হারিয়ে যায়, তখন আর কিছুই করার থাকে না।
সহীহ বুখারীর একটি হাদীসে এসেছে, দুটি নিয়ামতের বিষয়ে মানুষ ক্ষতির মাঝে থাকে (১) সুস্থতা (২) অবসর।
পরিশেষে আমাদের উচিত, সর্বাবস্থায় মহান আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআ'লার প্রতিটি নেআমতের শুকরিয়া আদায় করা। তাঁর নির্দেশিত পথে প্রিয়তম রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রদর্শিত উত্তম আমল আর প্রশংসিত আখলাকের আলোকোচ্ছটায় অনুকরণীয় এবং অনুসরণীয় পথে জীবনকে পরিচালিত করা।
মহান আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআ'লা সবাইকে তাঁর শুকরিয়া জ্ঞাপনকারী আদর্শ, অনুগত এবং প্রিয় বান্দা হিসেবে কবুল করুন। আমাদের পার্থিব এবং পারলৌকিক উভয় জাহানে তিনি তাঁর দয়ার চাদরে আবৃত করে রাখুন।
-এটি
 
                              
                           
                              
                           
                         
                              
                           
                        
                                                 
                      
                                                  
                                               
                                                  
                                               
                                      
                                         
                                      
                                         
                                      
                                        