বৃহস্পতিবার, ৩০ অক্টোবর ২০২৫ ।। ১৪ কার্তিক ১৪৩২ ।। ৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৭


ঐকমত্য কমিশন প্রতারণা করেছে : মির্জা ফখরুল

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

জাতীয় ঐকমত্য কমিশন জনগণ ও রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে প্রতারণা করেছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, জাতীয় ঐকমত্য কমিশন তাদের সুপারিশ প্রধান উপদেষ্টার কাছে জমা দিয়েছে। প্রধান উপদেষ্টা এই কমিশনের চেয়ারম্যান। আমরা অবাক বিস্ময়ে লক্ষ্য করেছি, আমরা যে বিষয়গুলোর সঙ্গে একমত ছিলাম না, সেখানে পরিষ্কারভাবে “নোট অব ডিসেন্ট” দিয়েছিলাম। সেগুলো লিপিবদ্ধ করার একটা প্রতিশ্রুতিও ছিল। কিন্তু যখন তারা (সুপারিশ) প্রকাশ করলেন, সেই বিষয়গুলো নেই। নোট অব ডিসেন্টগুলো পুরোপুরি উপেক্ষা করা হয়েছে। ঐকমত্য কমিশন সুপারিশমালায় রাজনৈতিক দলগুলোর দেওয়া ভিন্নমত বা নোট অব ডিসেন্ট উপেক্ষা করেছে, যা কোনোভাবেই ঐকমত্য হতে পারে না। তাহলে ঐকমত্য কমিশনটা করা হয়েছিল কেন? এই ঐকমত্য কমিশনকে আমি বলব, এটা জনগণের সঙ্গে, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে একটা প্রতারণা। গতকাল বুধবার জাতীয় প্রেসক্লাবে একটি বইয়ের প্রকাশনা অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।

প্রধান উপদেষ্টার দৃষ্টি আকর্ষণ করে মির্জা ফখরুল বলেন, আমি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টার দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলতে চাই, আপনি জনগণের কাছে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আপনি এখানে সত্যিকার অর্থেই যেটুকু সংস্কার দরকার, সেই সংস্কারগুলো করে জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য একটি নির্বাচন দেবেন। সেই নির্বাচনের মধ্য দিয়ে পার্লামেন্ট আসবে এবং সেই পার্লামেন্ট এই দেশের সংকটগুলো সমাধান করবে। যদি এর থেকে কোনো ব্যত্যয় ঘটে, এর বাইরে যদি যান, তার দায়-দায়িত্ব সম্পূর্ণ আপনাকেই বহন করতে হবে। এ কথাটা আমি খুব পরিষ্কার করে বলতে চাই। আমি আশা করব, তাদের এই উপলব্ধি আসবে।

বিএনপি মহাসচিব অবিলম্বে নির্বাচনের দাবি জানিয়ে বলেন, অতিদ্রুত সংস্কার কমিশনে সব দলের মধ্যে যেগুলো আমরা একমত হয়েছি এবং যেগুলোতে দ্বিমত পোষণ করেছি, সবকিছুকে নিয়ে আপনি অবিলম্বে একটি নির্বাচন দেবেন।

তিনি বলেন, একটি কথা খুব পরিষ্কারভাবে বলতে চাই, সব সংকটের মূলে যে বিষয়টা আছে, তা হলো, সত্যিকার একটা গ্রহণযোগ্য নির্বাচন। সে নির্বাচনের মধ্য দিয়ে জনগণের যে পার্লামেন্ট তৈরি হবে, সেই পার্লামেন্টে এই সব সমস্যাকে সংবিধানের মধ্যে নিয়ে আসবেন নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা। সেভাবে দেশ চলবে। আর সেকারণেই আমরা ৫ আগস্ট বিপ্লবের পরপরই নির্বাচনের কথা বলেছিলাম। তখন অনেকে বলেছিলেন, আমরা ক্ষমতা চাই, তাই অতিদ্রুত নির্বাচন চাচ্ছি। কিন্তু আজকে প্রমাণিত হচ্ছে যে এই নির্বাচন যত দেরি হচ্ছে, তত বেশি সেই ফ্যাসিবাদের পক্ষের শক্তিগুলো শক্তিশালী হচ্ছে।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, এত বড় একটা অভ্যুত্থান, এত ত্যাগের বিনিময়ে, এত প্রাণের বিনিময়ে সেটাকে ঠিকভাবে জাতির কল্যাণে কাজে লাগানো যাচ্ছে না। দুর্ভাগ্যজনকভাবে দেখা যাচ্ছে, যতই দিন যাচ্ছে, ততই বিভক্ত বাড়ছে। বিভক্ত হয়ে পড়াটা, এটা কারা করছেন, কেন করছেন, এটাও উপলব্ধি করতে হবে। মিডিয়াতে, বিশেষ করে সোশ্যাল মিডিয়াতে কতগুলো পক্ষ নিয়ে একেবারে নেমে যাওয়া হয়। প্রতিপক্ষকে একেবারে পুরোপুরি ঘায়েল করে দেওয়ার প্রচেষ্টা চালানো হয়।

গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, ঐকমত্য কমিশন যে সুপারিশ করেছে হঠাৎ করে দেখলাম নোট অব ডিসেন্টের উল্লেখ নেই। এটা তো কোনো ঐকমত্য হয়নি। এ প্রশ্নের ব্যাখ্যা নিশ্চয়ই কমিশন দেবে। তাঁরা জুলাই সনদ সই করেছেন। সনদে নোট অব ডিসেন্ট (আপত্তি) লেখা আছে। এটা দলগুলো নিজ নিজ ইশতেহারে দেবে। যে দল সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবে, ম্যান্ডেট পাবে, সেই দল নিজস্ব প্রস্তাব অনুযায়ী আপত্তির অংশগুলোর মীমাংসা করবে।

জুলাই সনদের আদেশ জারি প্রসঙ্গে জোনায়েদ সাকি বলেন, অনেকে দাবি তুলছেন যে আদেশ দেবেন প্রধান উপদেষ্টা। প্রধান উপদেষ্টা আদেশ দেবেন কোন ক্ষমতাবলে? সরকার আদেশ দেয়, সেটা প্রেসিডেন্টের নামে যায়, এটা যেকোনো রাষ্ট্রের নিয়ম। প্রেসিডেন্ট হচ্ছেন রাষ্ট্রের প্রতীক। যদি প্রধান উপদেষ্টা নিজে এটা জারি করেন, তার মানে তিনি নিজেকে রাষ্ট্রের প্রধান হিসেবে ঘোষণা করছেন এবং কার্যত সংবিধানকে স্থগিত করছেন।

জোনায়েদ সাকি সতর্ক করে বলেন, ঐকমত্য ছাড়া কেউ কারও সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দিলে তা কার্যকর হবে না। এটা সবার উপলব্ধি করা দরকার।
এসময় অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন- চর্চা ডটকমের সম্পাদক সোহরাব হাসান, গণ অধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক।

এনএইচ/


সম্পর্কিত খবর

সর্বশেষ সংবাদ