মুহাম্মদ আবু সাঈদ।।
পবিত্র রমজান মাসের পর গুরুত্বপূর্ণ ইবাদতের সময় হলো জিলহজ মাসের প্রথম ১০দিন। বিশিষ্ট সাহাবি হজরত জাবের রা. থেকে বর্ণিত, হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, রমজান মাসের পর দুনিয়ার শ্রেষ্ঠতম দিনসমূহ- এই দশক, অর্থাৎ জিলহজ মাসের প্রথম দশ দিন। আল্লাহ তা'আলা স্বয়ং এই মাসের প্রথম দশ রাতের শপথ করেছেন, এমনকি ভিন্ন ভিন্ন ভাবে জোড় ও বেজোড় রাতসমূহের শপথও করেছেন। -সূরা ফাজর: ২-৩
নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন- নেক আমলের জন্য আল্লাহর নিকট এই দিনগুলোর চেয়ে প্রিয় কোনো দিন নেই। সাহাবাগণ প্রশ্ন করলেন- আল্লাহর রাস্তায় জিহাদও কি এই দিনসমূহের ইবাদতের চেয়ে শ্রেষ্ঠ নয়? জবাবে নবীজী বললেন- না, অন্য সময়ে আল্লাহর রাস্তায় জিহাদও এই দশকের ইবাদতের চেয়ে শ্রেষ্ঠ নয়। তবে যে ব্যক্তি জান ও মাল নিয়ে আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করতে বের হয়ে তার কোনোটি নিয়েই ফিরতে পারেননি, অর্থাৎ শহীদ হয়েছেন; তার কথা ভিন্ন। বুখারী- হাঃ ৯৬৯
তাই একজন মুসলিমকে ইবাদতের এই সুবর্ণ সময়ের সদ্ব্যবহার করে অন্য সময়ের আমলের ঘাটতি পূরণ করা উচিত।
জিলহজ মাসের প্রথম ১০ দিনের আমলসমূহ- ১. এই মাসে ১০ তারিখ পর্যন্ত নখ চুল ইত্যাদি না কাটা। এ জন্য চাঁদ উঠার পুর্বে নখ চুল ইত্যাদি কেটে নেয়া। ২. ৪০ দিন পর্যন্ত নখ, চুল ইত্যাদি না কাটা মাকরুহ, যা কবিরা গুনাহ। তাই কারো ভুলেও এমন হলে এসময়েও কেটে ফেলবে। দশ তারিখ কুরবানীর পশু জবাইয়ের পর নখ, চুল ইত্যাদি কাটা। এতে একটি কুরবানীর সওয়াব হয়।
৩. প্রতিটি আরবি মাসের ২৯ তারিখ চাঁদ উঠেছে কিনা দেখা। সেমতে এই মাসে আরো গুরুত্বসহ দেখা। চাঁদের হিসাব রাখা ফরযে কেফায়াহ। ছোট বড় কোনো জনসমষ্টির একজনও না জানলে সকলের ফরয তরকের গুনাহ হবে।
৪. এক তারিখ থেকে নয় তারিখ পর্যন্ত রোযা রাখা। হজব্রত ব্যক্তি ছাড়া অন্যজন অন্ততঃ নয় তারিখের রোযা রাখা। প্রতিদিনের রোযা ১ বৎসরের রোযার সমান। আর ৯ তারিখের রোযা এক বৎসর পূর্বের ও এক বৎসর পরের গুনাহ মাফ হয়।
৫. প্রতিটি রাতে কিছু ইবাদত করা। * এর প্রতিটি রাতের ইবাদত কদরের রাতে ইবাদত করার সমতুল্য। ৬. হজের সামর্থবান হলে হজ পালন করা। আর সামর্থ্যবান না হলে আল্লাহর নিকট আশা করে দোয়া করা। সামর্থবান হজ না করা অবস্থায় মৃত্যুতে ইয়াহুদি কিংবা নাসারা হয়ে মরলেও কিছু যায় আসে না বলে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন।
৭. কুরবানির সামর্থবান হলে কুরবানী করা। আর সামর্থবান না হলে আল্লাহর নিকট আশা করে দোয়া করা। ৮. অধিক পরিমাণে আল্লাহ তা’আলার নামের জিকির করা। সূরা হজ: আয়াত ২৮ ।
উক্ত আয়াতে নির্দিষ্ট দিনসমূহে আল্লাহর নামের জিকির করা বিষয়ে সংখ্যাগরিষ্ঠ মুফাসসিরগন জিলহজের প্রথম দশ দিনকে বুঝানো হয়েছে বলেছেন।
৯. অন্যান্য সময়ের তুলনায় অধিক পরিমাণে নেক আমল করা এবং পাপাচার থেকে অধিক পরিমাণে নিরাপদ থাকা। সহিহ বোখারি ও মুসলিম।
১০. বেশি বেশি তাকবির, তাহমিদ ও তাহলিল পাঠ করা। যেমন- আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার, লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার ওয়ালিল্লাহিল হামদ। 
১১. আরাফার দিন; নিজ দেশের ৯ তারিখ ফজর হতে ১৩ তারিখ আসর পর্যন্ত; মোট ২৩ ওয়াক্ত প্রতি ফরজ নামাজের পর পুরুষ উচ্চস্বরে আর নারী নিচুস্বরে উপরোক্ত তাকবির ১ বার পাঠ করা। এ নির্দেশনায় ১ বারের বেশি পাঠ করা, এমনিভাবে ৩ বার নির্ধারণ করা সুন্নতের খেলাফ। সূত্র- ফতোয়া শামী ও অন্যান্য।
১২. ঈদের দিনের যাবতীয় সুন্নতসমূহ পালনে সচেষ্ট হওয়া। মনে রাখতে হবে, মুসলিম জাতির ঈদ শুধুমাত্র আনন্দ বিষয় নয়, বরং সতন্ত্র ইবাদত। তাই ঈদ উপলক্ষে শিশু সন্তানসহ পাড়া-প্রতিবেশী সকলকে সকল গুনাহ থেকে সতর্ক থাকতে হবে।
জিলহজ মাস তো কতোবারই এসেছে আমাদের জীবনে। আমরা কী পেরেছি জিলহজ মাসের এসব আমলসমূহ পালন করতে? কে জানে আগামী জিলহজ মাস আমাদের জীবনে আসবে কি-না? সুতরাং সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় কিন্তু এখনই। আল্লাহ তা'আলা সকলকে কবুল করুন। আমীন, ওয়াসাল্লাল্লাহু আলা নাবিয়্যিল কারিম, ওয়াআলা আলিহিল আজমাঈন।
লেখক: মুহাদ্দিস- জামিয়া ইমদাদীয়া আলীগঞ্জ মাদরাসা, ফতুল্লা, নারায়নগঞ্জ।
-এটি
 
                              
                           
                              
                           
                         
                              
                           
                        
                                                 
                      
                                                  
                                               
                                                  
                                               
                                      
                                         
                                      
                                         
                                      
                                        