হাসান মুরাদ
মৃতের পরিত্যক্ত সম্পদকে আরবিতে মীরাছ বলে। কোন মুসলিম মৃত্যুর পর স্বজনদের উপর অবশ্য পালনীয় ৪টি দায়িত্ব অর্পিত হয়। ১. দাফন-কাফনের ব্যবস্থা ২. ঋণ থাকলে তা পরিশোধ করা ৩. অসিয়ত থাকলে সম্পদের এক তৃতীয়াংশ থেকে পূর্ণ করা ৪. অবশিষ্ট সম্পদ দ্রæত প্রাপকদের মাঝে সুষ্ঠ বন্টন করা। মানুষ মৃত্যুবরণের পর সে কোন সম্পদের মালিক থাকে না।
সম্পদের মালিক মৃতের ওয়ারিস বা উত্তরাধিকারীগণ হয়ে যায়। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ ইরশাদ করছেন “ পিতা-মাতা আত্মীয় স্বজনদের পরিত্যক্ত সম্পত্তিতে পুরুষ এবং নারীদেরও অংশ আছে অল্প হোক বা বেশি।এ অংশ নির্ধারিত। (সুরা নিসা-৭) আমাদের সমাজে মৃতের সম্পদ বন্টনের পক্রিয়াটি বড়ই অবহেলিত এবং বিলম্বিত।
সস্পদ বন্টনে নারীদের ন্যায্য পাওনার ব্যাপারে নীতিগত বেশ আলোচনা হয়। কিন্তু মূল সম্পদই যুগযুগ ধরে অবন্টিত থাকে, এ বিষয়ে তেমন কোন পর্যালোচনা সাধারণত দেখা যায় না। যার অধিকারে যতটুকু সম্পদ থাকে সে তার মত ভোগ করে। অথবা কেউ কম কেউ বেশি। মৃতের পরিত্যক্ত সম্পদে শরিকগণ সকলেই যৌথ অংশিদার। তাই মালিকানা পৃথক করতঃ দ্রুত তা বন্টন করা একান্ত জরুরি। অন্যথা সম্পদ অবন্টিত থাকলে ওয়ারিসগণ একাধিক গোনাহে লিপ্ত হবেন। মৌলিক ভাবে নীচের গোনহগুলো তো অবশ্যই হবে।
১. হারাম খাদ্য।পরিত্যক্ত সম্পত্তিতে ওয়ারিসদের অধিকার সমান। তাই সম্পদ বন্টনপূর্ব একে অপরের অনুমতি ছাড়া সম্পদ ভোগ করা অবৈধ। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালা ইরশাদে করেন “ তোমরা অন্যায়ভাবে একে অপরের সম্পদ ভোগ করোনা। সুরা আল- বাকারা- ১৮৮) যারা উত্তরাধিকারী সম্পদ বছর বছর ধরে অবন্টিত রেখে ব্যবহার করছে, নিঃন্দেহে তারা হারাম ভোগ দখল করছে।
২. আতিœয়তার সম্পর্ক ছিন্ন। এটি একটি বড় গোনাহ। হাদীস শরীফে এসছে রাসুল স. বলেন,আতিœয়তা ছিন্নকারী জাহান্নামে যাবে। (মুসলিম শরীফ) হাদীসে আরো আছে যে, আতিœয়তা ছিন্নকারীর প্রতি আল্লাহ কিয়ামতের দিন দুষ্টিপাত করবেন না। তার দোয়া কবুল করেন না।
আমাদের সমাজে এমন অসংখ্য পরিবার আছে একে অপরের সাথে সম্পর্ক রাখে না। এর পেছনে অন্য কারণ থাকতে পারে। তবে সম্পদ বন্টন না করাটাও এর অন্যতম উৎস।
পরিবারে প্রভাবশালী সদস্যদের কারণে দূর্বল সদস্য মুখ বুজে থাকে। অথচ অন্তরে ব্যাথা নিয়ে দিনাতিপাত করে। সম্পদ বন্টন না হওয়ায় যুগযুগ ধরে কুড়ে ঘরে বসবাস করছে। বিভিন্ন সংকটে সময় পার করছে ;বাস্তবে এর অনেক দৃষ্টান্ত দেয়া সম্ভব।
৩. শত্রæতার জন্ম। সম্পদ দ্রুত বন্টন না হওয়ার কারণে স্বজনরা একে অপরের শত্রæ হয়ে ওঠে। তাই অংশিদার সকল সদস্য মতবিনিময় করে সম্পদ বন্টন করলে শত্রæতার পথ বন্ধ হবে।
৪. ঝগড়া-ফ্যাসাদ ও হানাহানির সূত্রপাত।
৫. হাদীস শরীফে বর্ণিত হয়েছে “ ধনীর বাহানা হলো জুলুম” (মুসলিম শরীফ) এখানে ধনী বলতে উদ্দেশ্য  যার ঋণ আদায়ের সামর্থ আছে, কিন্তু অযথা প্রাপকদের বঞ্চিত করে। আজ না, কাল বলে সময় পরিবর্তন করে। এমন ব্যাক্তি জালিম। অনুরুপ মৃতের সম্পদ বন্টন না করে বিলম্ব কারীগণও জালিম। কারণ বন্টনে বিলম্ব করাও এক প্রকার বাহানা। এতে দুটি অপরাধ। এক. জালিম।  দুই. ধোঁকাবাজ।  
৬. যাকাতের প্রতিবন্ধকতা। ব্যাক্তি নেসাবের মালিক হলে পূর্ণ হিসাব করে যাকাত দিবে । সুতরাং নেসাবের মালিকগণ উত্তরাধিকারী সম্পদ বন্টন না হওয়াতে এ সম্পদের যাকাত আদায় করতে পারেনা। বলা যায় সম্পদ বন্টন না হওয়া ফরজ বিধান পালনে প্রতিবন্ধক। অতএব এর গোনাহের দায়ভার সংশ্লিষ্টদের অবশ্যই নিতে হবে।
৭। কিছু পরিবার তো মৃতের রেখে যাওয়া সম্পদ থেকে খাওয়ার অনুষ্ঠান করে। বিভিন্ন জন্যকল্যাণ মুলক কাজে খরচ করে। যা একে বারেই অবৈধ। আর যদি কোন ওয়ারিস অপ্রাপ্ত বয়ষ্ক থাকে তাহলেতো এতিমের সম্পদ নষ্ট করার গোনাও যুক্ত হবে। হ্যাঁ! সকল সদস্য যদি একমত হয় তবে তাতে কোন অসুবিধা নেই। তবে বাস্তবতায় দেখা যায় অনেকে চক্ষুলজ্জাতে নিরব থাকে।
প্রিয় পাঠক! বিষয়টি ভাববার নয় কি? অনুষ্ঠিতব্য বিভিন্ন জানাজাতে আমি গুরুত্ব সহকারে আলোচনা করে থাকি। কিছু দ্বীনি ভাই বিষয়টি আমলের উদ্যোগ নিয়েছেন বলেও শুনেছি। কিন্তু তাদের আপত্তি হলো; দ্রæত সম্পদ বন্টনের সিদ্ধান্তে সামাজিক ভাবে নিন্দার পাত্র হতে হয়েছে। যেমন: কেউ বলে বাবার কবরের মাটি শুকানোর আগেই সম্পদ নিয়ে ব্যস্ত ইত্যাদি।
হ্যাঁ! শোকাহত অবস্থাতে সম্ভব না হোক। তাই বলে বছর বছর যেন অবন্টিত না থাকে। আল্লাহ তো মুমিনদের সম্পর্কে বলেছেন ‘ আর তারা বিদ্রæপকারীর বিদ্রæপের পরোয়া করে না (সুরা মায়দা- ৫৪)। সুতরাং আল্লাহর বিধানের সামনে মানুষের নিন্দা পরাজিত হওয়া উচিৎ। আল্লাহ আমাদের সঠিক বোধদয়ের উদয় দিন। আমিন!
লেখক: শিক্ষক, দারুস সুন্নাহ মাদরাসা ভেড়ামারা,কুষ্টিয়া।
-এটি
 
                              
                           
                              
                           
                         
                              
                           
                        
                                                 
                      
                                                  
                                               
                                                  
                                               
                                      
                                         
                                      
                                         
                                      
                                        