মাহমুদুল হাসান।।
মানুষ মাত্রই ভুলের শিকার, যখন এ ভুল হয় আল্লাহ তায়ালার হুকুমের বিপরীত অথবা কোন বান্দার হকের সাথে সম্পর্কিত, তবে সে ভুল হয় গুনাহ বা পাপ। যখন মানুষ শয়তানের প্ররোচনায় গুনাহ করে তখন সে শাস্তির উপযুক্ত হয়ে যায়, আর সেই শাস্তি থেকে পরিত্রাণের একমাত্র উপায় হল তওবা করা অর্থাৎ উক্ত পাপের কাজ পরিত্যাগ করে ক্ষমা প্রার্থনা করা। আর হ্যা, যখন কোন গুনাহগার ব্যক্তি পূর্বকৃত গুনাহের কারণে অনুতপ্ত হয়ে তওবা করে তখন সে পাপমুক্ত মানুষের মত হয়ে যায়, তাই নিরাশ হওয়ার কোনো কারণ নেই, গুনাহ যতই হোক না কেন, তওবা সমস্ত গুনাহকে মিটিয়ে দেয়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন- গুনাহ থেকে তাওবাকারী এমন, যার কোন গুনাহ নেই। (সুনানে ইবনে মাজাহ- হাদীস নং ৪২৫০)
গুনাহ যতই হোক না কেন, নিরাশ হওয়ার অবকাশ নেই, মুক্তি পেতে হলে তাওবা করতেই হবে, মানুষ যতই গুনাহ করুক না কেন আল্লাহ তায়ালা ইচ্ছা করলে সব গোনাহ ক্ষমা করতে পারেন, কেননা বান্দার গুনাহের শেষ আছে আর আল্লাহ তা'য়ালার দয়া ও ক্ষমার কোন সীমারেখা নেই। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'য়ালা পবিত্র কুরআনুল কারীমে বলেছেন- যে গুনাহ করে কিংবা নিজের অনিষ্ট করে অতঃপর আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে সে আল্লাহকে ক্ষমাশীল করুণাময় পায় (সূরা নিসা আয়াত নং ১১০)
আহ! তিনি কত দয়ার মালিক! বান্দা যদি জঘন্য গুনাহ করার পরেও তওবা করে তখনও আল্লাহ তার প্রতি করুণার দৃষ্টি রাখেন এবং তার তওবা কবুল করেন, আর মোচন করেদেন তার পাপরাশি, আরও খুশির সংবাদ হল- সেসব পাপকে তিনি কেবল মোচন করেন না; বরং তা ছাওয়াবে রুপান্তর করেদেন।
আমরা মানুষ হিসাবে সবাই গুনাহগার কিন্তু আমরা তার রহমত থেকে কখনো নিরাশ হয়ে যাব না, ইনশাআল্লাহ আমরাও তাকে ক্ষমাশীল হিসাবেই পাব, যে গুনাহগার বান্দা স্বীয় গুনাহের কারণে অনুতপ্ত হয়ে তওবা করে আল্লাহ তায়ালা সেই ব্যক্তির প্রতি কেমন খুশি হন তা নিম্নের হাদীসটির প্রতি লক্ষ্য করলে কিছুটা অনুধাবন করা যায়, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ বান্দা যখন আল্লাহর নিকট তাওবা করে তখন তিনি ঐ ব্যক্তি থেকেও অধিক খুশী হন, যে মরু-বিয়াবানে নিজ সাওয়ারীর উপর আরোহিত ছিল।
তারপর সাওয়ারিটি তার থেকে পালিয়ে গেল। আর তার উপর ছিল তার খাদ্য ও পানীয়। এরপর নিরাশ হয়ে সে একটি বৃক্ষের ছায়ায় এসে শুয়ে পড়ে এবং তার সাওয়ারী সমন্ধে সম্পূর্ণরূপে নিরাশ হয়ে পড়ে। এমতাবস্থায় হঠাৎ সাওয়ারীটি তার সামনে এসে দাড়ায়। তখন (অমনিই) সে উহার লাগাম ধরে ফেলে। তারপর সে আনন্দের আতিশয্যে বলে উঠে, হে আল্লাহ! তুমি আমার বান্দা, আমি তোমার রব।" আনন্দের আতিশয্যে সে ভুল করে ফেলেছে। (সহিহ মুসলিম ইফা. হাদীস নং ৬৭০৮)
যদি একজন মানুষ হারানোর বস্তু পেয়ে এতটা খুশি হতে পারে তবে মহান মালিকের কাছে পথহারা পাপী বান্দা ফিরে আসলে তিনি কতই না খুশি হবেন, তাই আসুন আর দেরি না করে তওবার পেয়ালা পান করি আর হয়ে যায় আল্লাহর প্রিয় বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত।
লক্ষনীয় হলো- তওবা কবুল হওয়ার জন্য তিনটি শর্ত রয়েছে এক. গুনাহের পরিবেশ থেকে পৃথক হওয়া। দুই. পূর্বকৃত গুনাহের জন্য অনুতপ্ত হওয়া। তিন. ভবিষ্যতে গুনাহ না করার দৃঢ় প্রতিজ্ঞা করা।
তাছাড়া হক্কুল ইবাদ তথা বান্দার হক নষ্ট করলে আরেকটি শর্ত হল, সম্ভবপর হলে তার পাওনা আদায় করে দেওয়া নতুবা তার কাছ থেকে তার থেকে মাফ করিয়ে নেওয়া।
তওবাকারীকে স্মরণ রাখা চাই যে, যখন তওবা করা হয় শয়তান তখন খুবই দুঃখিত হয় আর সে চাই কিভাবে তওবাকারীকে পুনরায় অপরাধে লিপ্ত করা যায় এবং পাপে নিমজ্জিত করা যায়, তাই সে সর্বদা তওবাকারীকে ধোঁকা দিতে থাকে, এমনকি যখন তওবাকারী পুনরায় কোন ভুল করে, তখন শয়তান তওবাকারীকে ধোকা দেয় যে, 'তুই তওবা করে আবার তওবা ভঙ্গ করেছিস, তোর আর মুক্তির কোনো পথ নেই, এখন তোর মনে যা চায় তাই কর।
এভাবে শয়তান ধোকা দিবে, কিন্তু সেই ধোকায় পড়ে প্রতারিত হওয়া যাবে না, কেননা আল্লাহ তা'য়ালা নিজেই বলেছেন: বলুন, হে আমার বান্দাগণ! তোমরা যারা নিজেদের প্রতি অবিচার করেছ; আল্লাহ্র অনুগ্রহ থেকে হতাশ হয়ো না, নিশ্চয় আল্লাহ সমস্ত গোনাহ ক্ষমা করে দেবেন। নিশ্চয় তিনি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। (সূরা যুমার,আয়াত-৫৩)
তাই আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হওয়ার অবকাশ নেই। আল্লাহ তা'য়ালা তো কত নাফারমানকে তওবা করার দ্বারা ক্ষমা করেছেন, এমনকি কত খুনিকে মাফ করে দিয়েছেন, কত ব্যভিচারীকে ক্ষমা করেছেন, কত মাদকসেবীকে অন্ধকার থেকে আলোর পথে এনেছেন, কত লম্পটকে দরবেশ বানিয়েছেন, সেই আল্লাহ আজও আছেন আগের মতই এবং চিরকাল এমনই থাকবেন। প্রয়োজন শুধু আমাদের তওবা করার, আর সৎ সাহস ও দৃঢ় প্রতিজ্ঞার।
আসুন! আজই তওবা করে ছিন্নভিন্ন করে শয়তানের সব ধুম্রজাল আর হয়ে যায় আল্লাহর প্রিয় বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত।
তওবা করার অর্থ কেবল মুখে আস্তাগফিরুল্লাহ আস্তাগফিরুল্লাহ পড়া নয়; বরং প্রকৃত তওবা হল- যে তওবা গুনাহগার বান্দার লজ্জিত ও ভীতসন্ত্রস্ত হৃদয় থেকে উৎসারিত হয়,এবং পূর্বকৃত গুনাহের পুনরাবৃত্তি না হওয়ার ব্যাপারে আল্লাহ ও তার মাঝে একটি সুদৃঢ় অঙ্গীকার।
প্রকৃত তওবা তওবাকারীর জীবনধারাকে পাল্টে দেয়,অন্ধকার থেকে আলোর দিকে নিয়ে যায়, মন্দ চরিত্রকে পবিত্র করে দেয়, আর হৃদয়কে করে দেয় কলুষমুক্ত।
এক কথায়, খাঁটি তওবা তাওবাকারীকে একজন প্রকৃত আল্লাহর গোলাম ও আদর্শ মানুষে পরিণত করে, আর লাভ করে দুনিয়ায় শান্তিময় জীবন এবং আখেরাতে মুক্তির নিশ্চয়তা।
রমজান মাস সমাগত, রমজানে আল্লাহ তা'য়ালা ব্যাপক হারে গোনাহগারদের ক্ষমা করে থাকেন, রমজান মাস হল ক্ষমা ও মাগফিরাতের মৌসুম, ইবাদত ও আনুগত্যের মৌসুম, মানুষের জীবনধারা পাল্টে দেওয়ার মৌসুম, বিশেষকরে প্রতিটি রমজানে লক্ষ লক্ষ মানুষ তাদের জীবনধারা পাল্টে ফেলে আর উপভোগ করে সুখময় জীবন।
আমরা জানিনা আগামী রমজান আমরা পাব কিনা! তাই আসুন! এ রমজানের আগেই আমরা তওবা করি,গুনাহ মুক্ত জীবন গড়ি, পরিশুদ্ধ আত্মা নিয়ে স্বাগতম জানাই  মাহে রমজানকে আর পবিত্র রমজানুল মুবারকের পরিপূর্ণ রহমত বরকত ও মাগফিরাত অর্জন করি।
আল্লাহ তা'য়ালা আমাদের সকলকে খাঁটি তওবা করার তাওফীক দান করুন! আমীন।
আওয়ার ইসলামে লেখা পাঠাতে মেইল করুন- newsourislam24@gmail.com
লেখক: তরুন লেখক, তাকমীল ফিল হাদিস, আলজামিয়াতুল ইসলামিয়া কাসিমুল উলুম।
-এটি
 
                              
                           
                              
                           
                         
                              
                           
                        
                                                 
                      
                                                  
                                               
                                                  
                                               
                                      
                                         
                                      
                                         
                                      
                                        