ইসমাঈল হাবীব।
রমজান।পুণ্যের মাস। মহাপ্রাপ্তির মাস। রমজান এলে পুণ্যতায় ভরে ভরে ওঠে প্রতিটি রজনী। মুমিনের হৃদয় নতুন করে জাগতে থাকে ইবাদত আরাধনায়। প্রভুর সকাশে আকুলপ্রাণে গোনাহ মাফের আরজি ওঠে প্রতিটি ক্ষণে ক্ষণে।
ইবাদতের দ্যুতিতে ভাস্বর হয়ে ওঠে মুমিনের জীবন।শতশত খুনে রাঙানো হাতটিও আল্লাহর দরবারে কাঁপা কাঁপা কন্ঠে ফরিয়াদ জানাতে থাকে।তাঁরও চোখ বেয়ে বেয়ে ঝরতে থাকে অশ্রু-লোহন। রহমতের প্রত্যাশায়, মাগফিরাত কামনায় নাজাত লাভে বারবার ছুটে আসে মসজিদ প্রাঙ্গণে। মসজিদের কোণটাই হয়ে পড়ে তাঁর সারাক্ষণের অবস্থান। দুআ'য়, কান্নায় দু'চোখের তারায় চিরসবুজ জান্নাতের ছবি ভেসে ওঠে। জান্নাত প্রাপ্তির প্রত্যাশায় তনুমন উদ্বেলিত হতে থাকে।পরক্ষণে জাহান্নামের দৃশ্য মনে ভেসে উঠতেই উৎকন্ঠায় বুকটা ধরফর কেঁপে উঠে। এমন পবিত্রলগ্নের পবিত্র ছোঁয়ায় পাপিষ্ঠ দুষ্টলোকটাও আল্লাহওয়ালা বনে যায়।তাঁর চোখে—মুখে ঈমানের দ্যুতি বিচ্ছুরিত হতে থাকে।রমজানের আগমণে তারা হয়ে যান—ইবাদতগুজারী।
চিরসুখের জান্নাতি মানুষ।সারা পৃথিবীর বুকে মানব ও মানবতা যখন ধ্বংসের দাঁড়প্রান্তে দাঁড়িয়ে, চিরচেনা এই পৃথিবী যখন মৃতপ্রায়। তখনই আকাশের অধিপতি পৃথিবীর একক নিয়ন্তার পক্ষ থেকে আমাদের দোরগোড়ায় আবার ফিরে এসেছে রমজান।তিনিই কত সুন্দর করে পবিত্র রমজানের ঘোষণা দিয়েছেন। আল্লাহ বলেন রমজান মাস। যে মাসে নাযিল হয়েছে পবিত্র কুরআন। মানুষের পথ প্রদর্শনের জন্য, সুস্পষ্ট দলীল হিসেবে।তোমাদের যে কেউ এ মাস পাবে, সে যেন অবশ্যই রোযা রাখে। (সূরা বাকারা আয়াত নং ১৮৫)
আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে এমন ঘোষণা আসার পর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমজানকে কেন্দ্র করে ইবাদতের পরিমাণ অনেকগুণে বাড়িয়ে দিতেন।হযরত জিবরিল আমীন নবীজির সাথে কুরআন শরীফ 'দাওর' করতেন। তাঁরা পরস্পর পরস্পরকে কুরআন শোনাতেন। রমজানের নবীজি হয়ে ওঠতেন দানশীল। শ্রেষ্ঠ দানশীল।
মুক্ত প্রবহমান বাতাসের মতো দান করতেন।অর্থাৎ দু'মুঠো ভরে ভরে তিনি দান করেন—ইয়াতীম দরিদ্রদের মাঝে। হাদীসে শরীফে এসেছে— তিনি ছিলেন সবচে' বড় দানশীল। আর রমজান এলে আরো বড় দানশীল হতেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে দেখে দেখে সাহাবায়ে কেরামেরও অনুরূপ দান করতেন।তাঁরা অনুসরণে অনুকরণে কেবল রাসূলকে দেখতেন।দান দাক্ষিণার সাথে সাথে তাদের রমজান হতো সেই সিয়াম সাধনায় আলোকিত।
কেননা আল্লাহ তাআলা বলেছেন হে' মুমিনগণ! তোমাদের উপর রমজানের রোযা ফরজ করা হলো। যেমন তোমাদের পূর্ববর্তীদের উপর ফরজ করা হয়েছিল। যাতে তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পারো।(সূরা বাকারা—১৮৩)
এ ঘোষণা শোনার পর নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবায়ে কেরাম সকলে সম্মিলিতভাবে রোযা রাখতে আরম্ভ করেন। সিয়াম সাধনায় নিজেদের আত্মনিয়োগ করেন। কেননা তারা জেনেছিলেন, রোযাদার আল্লাহ তাআলার সবচে নিকটবর্তী। মুত্তাকী হওয়ার আসল পথ। তখন রোযাকে তারা নিজেদের জীবনে আপনরূপে গ্রহণ করেছিলেন।এভাবেই মহাকালের সিঁড়ি বেয়ে রোযা তথা সিয়াম সাধনা আমাদের পর্যন্ত পৌঁছেছে। এটা সেই রমজান যা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও সাহাবায়ে কেরাম রাদিআল্লাহু অতি সৌভাগ্যরূপে গ্রহণ করেছিলেন।
আসুন, আমরাও মাহে রমজানকে গৌরবময় অতীতের মতো নিজেদের জীবনে আঁকড়ে ধরি। আল্লাহ তাআলা আমাদের সকলকে কবুল করুন, আমীন।
ইসলাম প্রতিদিন বিভাগে লেখা পাঠাতে মেইল করুন-newsourislam24@gmail.com
-এটি
 
                              
                           
                              
                           
                         
                              
                           
                        
                                                 
                      
                                                  
                                               
                                                  
                                               
                                      
                                         
                                      
                                         
                                      
                                        